যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
সম্প্রতি বাংলা টিভিতে একটি মোবাইল ফোনের বিগ্গাপন দেখানো হচ্ছে যেখানে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা পালিয়ে যাচ্ছে বহুদুরে। কতদুরে যাচ্ছে সেটি দর্শকদের ভাল করে বোঝানোর জন্য ছেলেটি ফোনে তার বন্ধুকে বলছে, "চলে যাচছি দোস্ত, বহুদুরে। একদম নেটওয়ার্কের বাইরে। " শেষ পর্যন্ত অবশ্য তারা হাজার চেষ্টা করেও নেটওয়ার্কের বাইরে যেতে পারেনা।
ধরা পড়তে হয় প্রেমিক-প্রেমিকার বাবাদের হাতে। অ্যাডটির মূল বক্তব্যটি হচ্ছে যে টেলিকম কোম্পানীর নেটওয়ার্ক এতোই বিস্তৃত যে পুরো দেশটিই এর আওতায়।
অ্যাডটি দেখতে দেখতে অনেকদিন আগে পড়া একটি কবিতার লাইন মনে পড়ে গেল। "যতদুর গেলে পলায়ন হয় ততদুর কেউ আর পারেনা যেতে"। কার কবিতা, কোথায় পড়েছিলাম কিছুই মনে নেই।
শুধু কবিতার এই একটি মাত্র পংক্তি স্মৃতির মাঝে রয়ে গেছে। স্মৃতির মাঝে ঠিক কোথায় রয়ে গেছে, তা ঠাহর করতে পারিনে। তবে মাঝে মাঝে পংক্তিটি বিশালাকার তিমির মতো উঠে আসে। বিদ্যুতের ফলা হয়ে চমকে দিয়ে যায় আমাকে। যতবারই লাইনটি মনে পড়ে, ততবারই আমি আতংকে শিউরে উঠি।
কি ভয়াবহ কনসেপ্ট! এবং কি নিদারুন সত্যি কথা।
আসলে আমরা সবাই বোধকরি এক ধরণের বৃত্তের মধ্যে বসবাস করি। যতই চেষ্টা করিনা কেন, এই গন্ডীর বাইরে যাওয়া আমাদের কখনই হয়ে ওঠেনা। হয়তোবা এই গন্ডীটি আমাদের মনের ভিতর, হয়তোবা এই গন্ডীটি আমাদেরই তৈরি করা। নিজেদের হাতেপায়ে শিকল পরিয়ে, তালা মেরে চাবিটি ছুঁড়ে ফেলেছি কোনকালে।
কদিন আগে দেখা হোল কিছু পুরনো বন্ধুদের সাথে। অনেকদিন পর। সবার মাঝেই পরিবর্তন এসেছে অনেক। ঝাঁকড়া চুলের মাহবুবের মাথায় এখন চকচকে টাক, মহা ফাজিল রতন দুবার হজ্ব করে মহা সূফী, দুর্দান্ত ফুটবলার সেলিম এখন বাতে আক্রান্ত। মনটা খারাপ হয়ে গেল, আহা কোথায় গেল সেইসব মানুষেরা।
কিনতু কথাবার্তা যখোন শুরু হোল, তখন বুঝতে পারলাম যে বাইরের পোশাক-আসাক বা খোলসের যতই পরিবর্তন হোক না কেন, ভিতরের মানুষটি তেমন একটা বদলায়নি। এখনো রতনের প্রতি তিনটি শব্দের একটি শব্দ অশ্লীল, সেলিম এখনো কারণ ছাড়াই হা হা করে হেসে ওঠে। পুরনো বন্ধুদের আবার ফিরে পেয়ে খুশি হলাম বটে, কিন্তু পরিস্কার বুঝতে পারলাম যে আমরা কেউই আমাদের নিজস্ব গন্ডীটি অতিক্রম করতে পারিনি।
জীবনের পথটি আঁকাবাঁকা এবং বন্ধুর হলেও উত্সত্যাগী নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।