আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ-বিদেশের চা - দ্বিতীয় পর্ব

হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!

পূর্ববর্তী পর্ব থেকে চলমান ... বায়োলজি আমার সাবজেক্ট না হলেও এবং মেডিক্যাল সায়েন্স সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান না থাকলেও, চা তৈরী করার মধ্যে ভাইরাস বা ব্যাক্টোরয়া জনিত সংক্রমণের কোন ব্যাপার থাকতে পারে - এই তত্ত্ব বিশ্বাস করতে আমি নারাজ৷ কিন্তু লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের তৈরী চা খেয়ে যদি কেউ এই তত্ত্বটি দাবি করে বসেন, তবে তাকে আর যাই হোক, কোন মানসিক রোগে সংক্রমিত মনে করা উচিত হবে না৷ কারণ অধিকাংশ বাংলাদেশী পুরুষদের, বিশেষ করে যারা অধিকাংশ সময়ই লিবিয়ানদের সান্নিধ্যে থাকেন, তাদের তৈরী করা চা ইঁদুর মারার বিষ না হোক, ইঁদুরের বাচ্চা মারার বিষ তো বটেই! মহিলারা অবশ্য এই অপবাদ থেকে অনেকটা মুক্ত৷ তবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেক বাংলাদেশীরই চা বিষয়ক যে দোষটা আছে, তা হল কিপটেমি৷ অনেকেই বাসায় কেউ বেড়াতে গেলে লাল চা দিয়ে সারিয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়৷ হালিব যাহারার (জনপ্রিয় কন্ডেন্সড মিল্ক) দামটা একটু বেশি কি না, তাই৷ অনেকে আবার নাম ছাড়ানো দুধ চা পরিবেশন করলেও তাতে দুধের পরিমাণ এতটাই কম থাকে যে, সমালোচকরা বলে - আরে, অমুক ভাবী তো চোখের পানি দিয়ে চা জাল দেয়! লিবিয়ায় বাংলাদেশীদের বাসায় গেলে প্রথমেই যে প্রশ্নটা করা হয়, সেটা হচ্ছে - লাল চা, না দুধ চা? এরকম প্রশ্নের সাধারণত তিন ধরনের উত্তর হয়ে থাকে৷ যারা অতিরিক্ত ‘শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট টাইপের ভদ্র, তাদের উত্তর হয় - আরে না না, কিছু লাগবে না; খেয়ে এসেছি৷ (কি খেয়ে এসেছে, সে প্রশ্ন অবশ্যই অবান্তর৷) যারা মোটামুটি চলনসই টাইপের ভদ্র, তাদের উত্তর হয় - কি দরকার এসবের! আচ্ছা ঠিক আছে লাল চা হলেই চলবে৷ (মনে মনে অবশ্যই দুধ চা এর চিন্তা চলতে থাকে৷) আর যারা আমার মত একটু ফাজিল টাইপের, তারা সম্ভবত বলে - চা যেহেতু খাওয়াবেনই, দুধ চা-ই খাওয়ান; তবে, ঘরে যদি দুধ না থাকে ... লাল চা এবং দুধ চা সম্পর্কিত প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আমাদের এক শিক্ষকের স্ত্রীর খুব খ্যাতি ছিল৷ আমরা তখন ছিলাম মিসরাতায়৷ আমাদের বিল্ডিংয়ের দুই বিল্ডিং পরেই ছিল তাকভীর ভাইয়াদের বাসা৷ তাকভীর ভাইয়ার আব্বা মালেক স্যার ছিলেন আমাদের মিসুরাতা স্কুলের প্রিন্সিপাল৷ আমরা, বিশেষ করে আমি এবং আমার দুই বন্ধু ফাহিম এবং ফরহাদ প্রায়ই তাদের বাসায় যেতাম৷ তাদের বাসায় যাওয়া মাত্রই মালেক আন্টি সহাস্যে সামনে এসে ডান হাতটা উঁচু করে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনীর মাঝখানে আধ ইঞ্চি পরিমান ফাঁক রেখে জিজ্ঞেস করতেন, কি খাবে, লাল চা, না দুধ চা? আমরা তখন বেশ ছোট ছিলাম৷ কাজেই ভদ্রতা করে উত্তর দিতাম, না আন্টি, কিছু লাগবে না৷ আর মনে মনে এবং পরে বাইরে এসে আন্টির সেই আধ ইঞ্চি বিশিষ্ট আঙ্গুলির ভঙ্গির অর্থ নিয়ে হাসাহাসি করতাম যে, লাল চা খাও, আর দুধ চা-ই খাও, তোমাকে আধ ইঞ্চির বেশি কোনক্রমেই দেওয়া হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।