আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : গিরগিটি (শেষ পর্ব)

ব্লগের আমি ব্লগের তুমি ব্লগ দিয়ে যায় চেনা

ফাঁস করে নিজেও ফেঁসে যাবে, তাতে ভ্যানেসার হয়তো হারানোর কিছু ছিলো না, কিন্তু রশিদের ইচ্ছে নয় ঝামেলায় জড়ানোর। দাবি পূরণ না করে তার উপায় থাকে না। কথা হয়েছিলো, ঠিক এক মাস পরে দু’জনে যাবে ইমিগ্রেশন অফিসে গ্রীন কার্ডের আবেদন করতে। বিয়ের পর দিনকয়েক অপেক্ষা না করলে ব্যাপারটা খুবই ন্যাংটো দেখায়। নির্দিষ্ট দিনে ভ্যানেসাকে তুলে নিতে তার বাসায় যায় রশিদ।

রুমমেটের কাছে জানা যায়, ভ্যানেসা সেখানে আর থাকে না, কোথায় চলে গেছে, জানিয়ে যায়নি। রুমমেট আরো বলে, ওর সঙ্গে তোমার দেখা হলে বোলো, গতমাসের ভাড়ার টাকাটা সে দেয়নি, দিয়ে যায় যেন। প্রমাণ করার উপায় নেই, তবু রশিদের ধারণা, ভ্যানেসা তখন নিজের ঘরে বসে সব শুনছিলো আর হেসে গড়িয়ে পড়ছিলো। ওই পর্যন্তই, ভ্যানেসার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাবে, এমন আশাও নেই।

রশিদ ভুরু কুঁচকে বলে, ওইটা আর কিছু হইবো না, বাদ দে। আসাদ বলে, ক্যান যে নিজে নিজে মাতবরি করতে গেছিলেন! আমারে আগে একবার কইলে সবাই মিল্যা ভালো একটা ব্যবস্থা করা যাইতো। টিংকু এক মাইয়ার লগে শওকতের কন্ট্রাক্ট বিয়া দিছে না? দুইজনে এক জাগায় কাম করে, সবসময় দেখা হয়, ছুইটা যাইবো কই? টিংকু নিজেও তো করছিলো, অরও গ্রীন কার্ড হইছে। রশিদ একটু চুপ করে থেকে বলে, আসলে ভুল হইছে। মনে করছিলাম, চুপেচাপে সাইরা ফালাইতে পারুম।

তখন তো কইতামই। আসলে কইতে শরম করতেছিলো, তরা কি না কি মনে করবি। এতোদিনে আমারে এই চিনা চিনছেন? তা না, তরে আর নতুন কইরা কি চিনুম। দুই নম্বরী বিয়ার কথা কাউরে কই ক্যামনে, তুই ক? সাহস ও সুযোগ পেয়ে আসাদ বলে, ধরা খাইয়া ছাগল না হইলে তো মনে হয় কইতেনই না। আসাদকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে রশিদ কাজে চলে যায়।

বাসায় ঢুকে পকেট থেকে ব্যাংকের খাম বের করে দ্রুত টাকা গোনে আসাদ। পাঁচশোই দিয়েছে, রশিদ ভাইকে মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানায় সে। এই উপকার সে কোনোদিন ভুলবে না এবং ভবিষ্যতে নতুন করে এ ধরনের ঝামেলায় আর জড়াবে না বলেও নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তার মনে পড়তে পারতো, এই ধরনের প্রতিজ্ঞা সে আগে অনেকবার করেছে, যথাসময়ে ভুলে যেতেও সক্ষম হয়েছে। মনে না পড়ুক বা না পড়–ক, তার এই মুহূর্তের সদিচ্ছাটি একশো ভাগ খাঁটি, একটুও খাদ নেই।

আসাদ ফোন তুলে ঘড়ির দোকানের নম্বর ডায়াল করে নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে বলে, আমি এইমাত্র মেসেজ পেলাম, তোমরা আমার খোঁজ করছিলে। কী ব্যাপার, বলো তো? একটা সমস্যা হয়েছে। তুমি আমাদের এখানে একটা চেক লিখেছিলে, তোমার ব্যাংক সেটা দু’বার ফেরত পাঠিয়েছে। আমরা তোমাকে চিঠি লিখেছিলাম, ফোনও করেছি। কিন্তু তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

ওঃ, আমি খুবই দুঃখিত। আমি আসলে শহরের বাইরে ছিলাম গত সপ্তাহ দুয়েক। ফিরেছি এই একটু আগে। ফলে, এসবের কিছুই আমি জানতাম না। খুবই দুঃখিত।

ফোনের ওপাশ থেকে পেশাদারী সৌজন্য প্রকাশ করে বলা হয়, তা ঠিক আছে, কিন্তু এখন তুমি এই লেনদেনটা কীভাবে মেটাতে চাও? আশা করি, আমরা এ বিষয়ে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তুমি ব্যাপারটা চুকিয়ে ফেলবে। ওঃ, নিশ্চয়ই। আমি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তোমাদের দোকানে আসছি। তুমি মোট চারশো বারো ডলার সাতচল্লিশ সেন্টের একটা মানি অর্ডার নিয়ে নিজে আসতে পারো, অথবা মেল করেও দিতে পারো। চেক নয় কিন্তু।

তবে মনে রেখো, আগামী তিনদিনের মধ্যে ফয়সালা না হলে আমরা ব্যাপারটা আমাদের লীগ্যাল ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দেবো। না না, তার দরকার হবে না। আমি আসছি। ফোন নামিয়ে রেখে কপালের ঘাম মোছে আসাদ। ঘরে এয়ারকন্ডিশনার চলছে, তবু ঘামছে সে।

এই লুকোচুরি খেলার অভিনয়ের পরিশ্রম ও অবসাদ বড়ো কম নয়। সাড়ে তিনশো টাকার দেনা এখন মেটাতে হবে আরো ষাট-বাষট্টি ডলার দণ্ড দিয়ে। এক সপ্তাহের বাজার হয়ে যায় এই টাকায়। আরো আছে, এই চারশো বারোর সঙ্গে আরো পঞ্চাশ, ব্যাংকের চার্জ - একেকবার চেক বাউন্স করার জন্যে পঁচিশ ডলার করে। ফোন রাখার সময় মেসেজ ইন্ডিকেটরের লাল বাতিটি জ্বলে থাকতে দেখে।

না-শোনা দুটি নতুন বার্তা অপেক্ষা করে আছে। বাইরে ছিলো, তখন এসেছে। এই সময় ক্যারল করেনি, তা একরকম নিশ্চিত। বন্ধুবান্ধবদের কেউ নয়, তা-ও অনুমান করা যায়। এখন আর কে তাকে ফোন করবে? হবে আমেরিকান এক্সপ্রেস বা মাস্টার কার্ড।

পাওনা টাকার তাগাদা। নাকি নতুন কোনো পাওনাদার? সহ্য হয় না। খুব অবসন্ন লাগে। এই দমবন্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় আসাদের জানা নেই। সারা দিনমানের এই চোর-পুলিশ খেলা কবে যে শেষ হবে, একটু ভালো করে শ্বাস নেওয়া যাবে! এখন শুধু রং বদলানো, নিজেকে আড়াল করার খেলা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.