ব্লগের আমি ব্লগের তুমি ব্লগ দিয়ে যায় চেনা
গাড়িতে বসে সীট বেল্ট লাগাতে লাগাতে আসাদ সোজাসুজি বলে ফেলে, আমার শ’পাঁচেক টাকার দরকার, রশিদ ভাই।
শেষ পর্যন্ত বলতে পেরেছে, আসাদের নিজেরই বিশ্বাস হয় না। এরকম হুট করে না বললে কিছুতেই বলা যেতো না। ইনিয়ে বিনিয়ে ভূমিকা করে বলতে গেলে এ-কথা ও-কথার পর টাকার কথাটাই হয়তো মুখে আসতো না। চোখ-নাক-মুখের সমস্ত ক্রিয়া বন্ধ করে বলা তো হয়ে গেছে, এখন যা হয় হোক।
একটু বেশি করেই চেয়েছে। পুরো পাঁচশো পেলে খারাপ হয় না। টাকা কখনো বাড়তি হয় না, কোনো না কোনো কাজে লেগেই যায়। চাই কি, ক্যারলকে নিয়ে আজ রাতে রেস্টুরেন্টে খেয়ে আসা যায়। এ দেশী বউ পুষতে গেলে সপ্তাহে অন্তত একদিন বাইরে খেতে হয়, শুক্র-শনিবার রাতে ক্লাবে বা বারে যাওয়াও নিয়মের মধ্যে পড়ে।
রশিদের মুখ দেখে তার রাগ, বিরক্তি, কৌতুক কিছুই বোঝার উপায় নেই। জিজ্ঞেস করে, ক্যান, কী হইলো আবার?
আসাদের হঠাৎ মনে হয়, আচ্ছা, এই নিয়ে রশিদ ভাইয়ের এই প্রশ্ন ঠিক কতোবার শুনেছে সে? টাকা ধার চাইলে হুবহু এই জিজ্ঞাসাটাই প্রথম শুনতে হয়। খুবই বিরক্ত লাগে। সবাই শুধু তার কাছে কৈফিয়ত চায়। কর্মস্থলে প্রতিমাসের ইনভেন্টরির পর জিনিসপত্র বা টাকাপয়সার ঘাটতি হলে ম্যানেজারকে বাদ দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, কেন হলো।
ঘরের বউ ক্যারল জিজ্ঞেস করবে, গত সপ্তাহের পে চেক পুরোটা তোমাকে দিয়েছি, সে টাকা গেলো কোথায়?
ঠিক কথা, কিন্তু টাকা জমা হওয়ার পরপরই বার্থ ডে পার্টিতে যাওয়ার জন্যে ক্যারলের জন্যে নতুন এক প্রস্থ পোশাক কেনা হলো, তা কারো মনে থাকবে না। পাওনা টাকার তাগাদা দিয়ে সরোজ মুখ কালো করে বলবে, সময়মতো টাকা ফেরত দিস না কেন, টাকা কী করিস তুই? আসাদকে চুপ করে থাকতে হবে, মুখ ফুটে সে বলতে পারবে না, আমিনকে দেড়শো ডলার ধার দিতে হয়েছে, তার জরুরি দরকার। পকেটে টাকা রেখে বন্ধুর প্রয়োজনে দেবে না, তা তো হয় না। বাসা ভাড়া দিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে? সে দেখা যাবে, ব্যবস্থা একটা হবেই। এসব কেউ বোঝে না।
রশিদের প্রথামাফিক জেরায় বিরক্ত হলেও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে আসাদ। লম্বা শ্বাস টেনে সামনের দিকে চোখ রেখে বলে, দরকার আছে। পারলে দিবেন, না পারলে আর কী করা!
পারা না পারার কথা না। লাগলে ধার নিবি, তাতে তো মানা করি নাই।
আসাদের আশংকা হতে থাকে, হয়তো পুরনো ধারের কথা তুলে ফেলবে রশিদ ভাই।
তাহলেই সব গেলো। রশিদ আরো কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে যায়।
ব্যাংক দশ মিনিটের পথ, আর কোনো কথা ছাড়াই যাওয়া হয়। আসাদকে গাড়িতে বসিয়ে রশিদ ভেতরে যায়। ফিরে এসে ব্যাংকের ছাপ মারা একটা খাম তুলে দেয় আসাদের হাতে।
বলে, ফিরত দিতে পারবি কবে?
চেষ্টা করুম এই মাসেই এইটা আর আগেরটা মিলাইয়া দিয়া দিতে।
রশিদ মৃদু হেসে বলে, এই মাসে পারবি না, মাসের আর বাকি আছে পাঁচদিন।
আসাদ খেয়াল করেনি। ভেবে উত্তর দেওয়াও নয়। বলতে হবে তাই বলা।
প্রতিশ্রুতি রাখা যাবে কি না, সময় হলে দেখা যাবে। সামলে নিয়ে বলে, আমি এখন থিকা এক মাস মীন করছিলাম।
তা-ও পারবি না, খামাখা কইয়া লাভ কি? তার থিকা মাসে মাসে দুইশো কইরা দিস। তাইলে গায়ে লাগবো না, আমারও অসুবিধা কিছু নাই।
আসাদের জন্যে অতি উত্তম ও সুবিধাজনক প্রস্তাব, কৃতজ্ঞতায় প্রায় গলে পড়ে সে।
ভাই না হলে আর কে করবে এরকম! বলে, তাইলে খুবই ভালো হয়।
আরেকখান কথা। এইটা শোধ না হইলে আর টাকা চাইস না।
আসাদ এক কথায় রাজি। না হওয়ার সুযোগ কি আছে!
ভাইটির জন্যে রশিদের দুর্বলতা অনেক।
ঢাকায় ওদের বাসায় থেকে সে ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করেছে। চাচা-চাচী তাকে নিজেদের ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা করে দেখেনি। পাশ-টাশ করে ওই বাড়ি থেকেই সে উড়াল দিয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়ায়। আসাদ এসেছিলো তারও আগে। এমবিএ শেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ায় রশিদের চাকরি-বাকরির সুবিধা হয় না।
আসাদ ফোন করে বলে, ডালাসে আইসা পড়েন, একটা ব্যবস্থা হইবোই। আমি তো আছি, দুই ভাইয়ে এক লগে থাকতে পারুম।
আসাদ তখনো বিয়ে করেনি। ছোটোবেলা থেকে কিঞ্চিৎ দুরন্ত ও খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকা আসাদ খুবই প্রিয় রশিদের। আসাদের মুখে আমি তো আছি শুনে ভালো লাগে, ভরসা হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার পাট তুলে দিয়ে রশিদ চলে আসে দু’মাস পরে। আসাদ যে এতো রকমের ঝামেলার মধ্যে ডুবে আছে, প্রথম প্রথম বোঝা যায়নি। যখন টের পেলো, তখন আর বিশেষ কিছু করার নেই। যতোদূর পারে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে, পরামর্শ দিয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।