আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়াবতি-চ্যাপ্টার-২

সেদিন ২৫শে বৈশাখ। ছায়ানটে কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্র সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়েছে। তখন আমার অফিস ঝিগাতলায়। অফিস শেষে রিকশায় ছায়ানটে গিয়ে বুঝলাম অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। কবিগুরুর গান অসাধারণ।

রোমান্টিক গান গুলো মনে অপার আনন্দ দেয়। তার শেষের কবিতা পড়তে পড়তে একসময় অমিত হয়ে যেতাম কল্পনায় মননে। তখন অন্তরে লাবণ্যর অভাব অনুভব করতে শুরু করি। কবিগুরুর অমর সৃষ্টি লাবণ্য তখন শয়নে স্বপনে আধোজাগরণে। সেই কবিগুরুর স্মরণে অনুষ্ঠান সেই অনুষ্ঠানেই মায়াবতীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ।

কবিগুরুর জন্মদিনে আমার আর তার প্রথম সাক্ষাৎ। এযেন কবি গুরুর দান। মাযাবতী নীল রঙের শাড়িতে নীল পরীটি সেজে রিকশা থেকে নামলো। তার কাছে খুচরা টাকা নেই। রিকশাওয়ালাও বড় নোট ভাঙ্গিয়ে দিতে পারবে না।

কেউ খুচরা দিচ্ছে না। সবাই হয়তো উৎসাহ নিয়ে মায়াবতীর বিড়ম্বণা উপভোগ করছে। আমার কাছেও খুচরা নাই। তবে রিকশাভাড়ার বিশ টাকা আছে। তাই দিয়ে মায়াবতিকে আপদমুক্ত করলাম।

তার আগমন হেতু জেনে পুলকিত হলাম। তিনিও রবীন্দ্রসঙ্গিত ভক্ত। আমার করা ক্ষুদ্র উপকারের বিনিময়ে তার পাশে বসে অনুষ্ঠান দেখার অমূল্য সুযোগ পেলাম। পাপিয়া সারোয়ার গাচ্ছিলেন‍ "সেদিন দুজনে দুলেছিনো বনে ফুলডোরে বাধা ঝুলনা.......। " গান টা মায়াবতীর উপস্থিতিতে স্বর্গীয় আবেশ তৈরী করে।

কবি গুরুর গানটি কিন্তু রোমান্টিক ট্রাজেডি। গানের শুরুটা রুমাঞ্চ দিয়ে। "সেদিন আকাশে ছিলো তুমি জানো আমার মনেরও প্রলাপ জড়ানো .....পূর্ণিমা রাতে চাঁদ ওঠেছিলো গগণে দেখা হয়েছিলো তোমাতে আমাতে কিজানি কি মহালগনে" অসাধারণ লিরিকস। কিন্তু ‌‍"এখন আমার বেলা নাহি আর বহিব একাকি বিরহের ভার" দিয়ে নিপুন দক্ষতায় বিরহ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। একাকিত্বের যন্ত্রণা দিয়েছেন।

তবে যে দিনটিতে মায়াবতীর সঙ্গে আমার দেখা সেটাকে আমি মহালগনই বলবো। আর মায়াবতীর বর্ননা দিলে কবি গুরুর গানের কথায় বলতে হবে আমার ও পরাণ যাহা চায় তুমি তাই তাইগো তোমা ছাড়া এ জগতে মোর কেহ নাই কিছু নাই গো । গুরুদেব হয়তো মায়াবতি কে দেখেই ঐ্ গান খানি লিখেছিলেন!অনেক আনন্দমাখা সময় দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। দেখতে দেখতে বেলা শেষ হলো বিদায়ের মুহূর্ত হাজির। মায়াবতির উপস্থিতি শিশির বিন্দুর মতোই ক্ষণস্থায়ি।

তার গায়ের কাঠালচাপা ঘ্রাণ,নিষ্পাপ চেহারা আর কোকিলকন্ঠি সুর আমার হৃদয়ে স্থায়ী আসন নিল। বিদায় মুহূর্তে আমার এক খানি ভিজিটিং কার্ড তার কাছে দিলাম। মায়াবতি একটু সম্মতিসূচক অনুমতি পেলে আমি তাকে বাসায় পৌছে দিতাম। সে সুযোগটিও হলো না। ওকে বিদায় দিতে খারাপ লাগছিলো।

কারণ রাজধানীর বুকে লক্ষ মানুষ আর শত ব্যস্ততার ভিড়ে তার সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ আর নাই বললেই চলে। তার কাছে যে কনটাক্ট নাম্বার চাইবো সেটাও তিনি কিভাবে নেন তাই আর সাহস করলাম না। ব্যাপারটা অনধিকার চর্চার মতো মনে হলো। মায়াবতি অনুষ্ঠান চলাকালে আমার দিকে বেশ কয়েকবার খেয়াল করেছে সেটি কিন্তু আমার দৃষ্টি এড়ায় নাই । তবু ধরে নিতে হয় এ দেখাই শেষ দেখা।

রিকশাভাড়ার টাকাটা কিভাবে দিবে বলাতে সেই সুযোগে নিজের ভিজিটিং কার্ডখানি তাকে দেওয়ার সুযোগ পাই। যদিও তা দিতে পেরে আমি ধন্যই হয়েছি । বার বার মনে আসছিলো শেষে কবিতার শেষ চরণ 'তোমায় যা দিয়েছিনো সে তোমরই দান গ্রহণ করেছে যত ঋণি করেছ তত আমায় হে বন্ধু বিদায়। ' চলবে  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।