আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প : গিরগিটি (পর্ব ২)

ব্লগের আমি ব্লগের তুমি ব্লগ দিয়ে যায় চেনা

রশিদ কাজে যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসছিলো। সিঁড়ি থেকেই জিজ্ঞেস করে, কে ফোন করছিলো রে, আসাদ? চোখে একটাও বাড়তি পলক না ফেলে এবং এক মুহূর্ত না ভেবে আসাদ গল্প বানিয়ে ফেলতে পারে। এই দক্ষতাও তাকে অর্জন করতে হয়েছে। নিজের দরকারে। রশিদকে জানায়, আমার ম্যানেজারে কল করছিলো, আজ কাজে যাইতেছি কি না জানতে।

রশিদ কিচেনে চায়ের কেতলিতে পানি চাপিয়ে সোফায় এসে বসে। ক্লজেট থেকে জুতা বের করে এনেছে। মোজা পরতে পরতে বলে, তর পায়ের কী অবস্থা? সারছে না? ইচ্ছা করলে কাজে যাইতে পারি, কিন্তু আরো দুই একটা দিন পরে যাইতে চাই। পারলে যা গিয়া। খামাখা ছুটিগুলি নষ্ট করবি ক্যান? পরে দরকারের সময় পাবি না।

তখন আবার আনপেইড ছুটি নিতে হইবো। আসাদ তা জানে। তবু সুযোগ পেলে আজকাল সবাই তাকে কিছু জ্ঞান দিয়ে দেয়। চুপ করে শুনতে হয়। কী বলবে সে? সময় এলে কোনোদিন এগুলো ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।

এখন তার শুধু মুখ বুজে শুনে যাওয়ার কথা। রশিদের মতো অতোদূর ভাবতে পারলে, সতর্ক হতে জানলে এই অবস্থা হয় না। দেশে আসাদের বাবা-মা দু’জনেই ডাক্তার, ভালো পসার ও নামডাক আছে ঢাকা শহরে। মায়ের কাছে চাইলে যখন-তখন টাকা পাওয়া যায়। পকেটে পয়সা না-থাকা জিনিসটা কেমন তার জানা ছিলো না।

জানলো এই প্রাচুর্যের দেশ আমেরিকায় এসে। এখানে আসার পরপরই কাজে ঢুকে পড়েছিলো। এইচএসসি শেষ করে পড়তে আসা এ দেশে। কিন্তু পড়াশোনা তাকে দিয়ে হবে না, সে জানে। লেখাপড়ায় তার মন ছিলো না কোনোকালে, মাথাও না।

আসার আগে টোয়েফ্লের পুলসেরাত কী করে পার হওয়া সম্ভব হয়েছিলো, নিজেও জানে না। রশিদের কথার জবাবে অস্পষ্টভাবে বলে, আজকার দিনটা যাক, কাল থিকা যাইতে পারি। আপনে আজ এতো সকাল সকাল যাইতেছেন যে? না, কাম তিনটার সময়ই। এখন একটু ব্যাংকে যামু। তিনটা পে চেক পকেটে নিয়া ঘুরতেছি, জমা দিই দিই কইরা যাওয়াই হয় না।

আসাদের একবার মনে হয়, এখনই সুযোগ। কিছু টাকা ধার চাইলে হয়। চাইলে কৈফিয়ত দিতে হবে। কেন কী বৃত্তান্ত, এইসব। তা না হয় সামলে দেওয়া যাবে, কিন্তু সমস্যা হলো রশিদ ভাইয়ের কাছে মাস দুয়েক আগে নেওয়া তিনশো ডলার এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।

দেওয়ার কথা ছিলো অনেক আগেই। এখন আবার নতুন করে ধার চাওয়া যায় কোন মুখে? সাহস হয়না। টাকার চিন্তা মাথায় রেখে একেবারে অন্য কথা বলে সে, ব্যাংক থিকা কি বাসায় আইবেন খাইতে? কিছু রান্দা-বাড়া নাই মনে হয়, চিকেন আর ডাইল রাইন্দা ফালাইতে পারি। বেশিক্ষণ লাগবো না। না, দরকার নাই।

বাইরে কিছু একটা খাইয়া নিমু নে। আপনে তো বাইরের খাওয়া খাইতে পারেন না। একদিন খাইলে কিছু হইবো না। জুতার ফিতা বাঁধা শেষ করে রশিদ উঠে যায় কিচেনে। চায়ের পানি ফুটেছে, কেতলি শিস দিচ্ছে।

আসাদ চা খায় না, জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। এক চামচ চিনি ও টীব্যাগ দিয়ে কাপে পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করে, ক্যারল কই? কাজে গেলো। তুই একলা সারাদিন বইসা কী করবি? আসাদ আরেকবার টাকা চাওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে চায়। বললে এখনই বলতে হবে। পারা যায় না।

বলে, দেখি এখনো কিছু ঠিক করি নাই। চায়ের কাপ নিয়ে সোফায় ফিরে আসে রশিদ। বলে, আমার লগে ব্যাংকে যাবি? তারপর বাইরে কিছু একটা খাইয়া তরে বাসায় নামাইয়া দিয়া যামুনে। তার টাকার এতো দরকার আর আরেকজন ব্যাংকে যাচ্ছে টাকা জমা দিতে, ভাবতে ভালো লাগে না। সঙ্গে গিয়ে দেখতেও ভালো লাগবে না, মন খারাপ হবে।

তার নিজের একটা পে চেক সময়মতো ব্যাংকে জমা না পড়লে চেক বাউন্স করবে অবধারিতভাবে। অথচ রশিদ ভাই কী করে পয়সা ধরে রাখে, কে জানে! তিনটা চেক পকেটে, জমা দেওয়ার তাড়া নেই। কেউ কেউ পারে, আসাদ সে দলে নয়। নিজেকে সে বলতে শোনে, চলেন যাই। সঙ্গে থাকলে মুখ ফুটে টাকা চাওয়ার জন্যে কিছু সময় পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই বড়ো কথা।

রশিদ ভাই বেরিয়ে গেলে সম্ভাবনা আর থাকে না। গাড়িতে উঠে কোনোমতে কথাটা একবার উগরে দিতে পারলেই হয়। তারপর কৈফিয়ত, সামান্য তিরস্কার এবং আরো কিছু অভিজ্ঞান সঞ্চয় - এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না, মুখ বুজে গিলে ফেলা যাবে। তার অভ্যাস আছে। যতোই বকাবকি করুক, রশিদ ভাই শেষ পর্যন্ত না করবে না, আসাদ জানে।

সাহস করে বলে ফেলাটাই এখন বড়ো কাজ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.