আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাবড়াডাগাবড়া ৪: বাচ্চাদের পেপার পড়তে নেই

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

বাচ্চারা বই পড়ে যতটা না শেখে তার চেয়ে বেশী শেখে চারপাশ থেকে, দেখে, শুঁকে, শুনে, খেয়ে আর ধরে। সেটার ভাল দিকও আছে, খারাপ দিকও হয়ত আছে। তবে খারাপ দিক থাকলেও কিছু করার নেই, এটাই নিয়ম। আবার এই যে বাচ্চাদের দেখে-শুনে-শুঁকে শেখার মাঝে অনেক মজার মজার ঘটনাও ঘটে। হঠাৎ কি প্রসঙ্গে সেদিন নিজের জীবনের এরকম ছোট ছোট ব্যাপারগুলো মনে পড়ল।

ওহ, কি প্রসঙ্গে মনে পড়ল, 'গড অভ স্মল থিংস'টা পড়তে গিয়ে। যারা 'টু কিল আ মকিংবার্ড' বইটা (আমার এপর্যন্ত পড়া সেরা উপন্যাস) পড়েছেন তাদের নিশ্চয়ই স্কাউটের কথা মনে আছে। মা-হারা স্কাউট আইনজীবি বাবার স্টাডিতে খুটখুট সময় কাটাতে কাটাতে তিন-চার বছর বয়েসেই পড়তে শিখে ফেলেছিল। ছোটবেলায় আমারও অনেকটা সেরকম হয়েছিল, তবে সেটা মায়ের কাছে। মা সারাদিন রান্নাবান্না সংসারের কাজের পর সন্ধ্যায় খবরের কাগজ নিয়ে বসতেন, বাবা আপাদের পড়াতে বসতেন।

আমি মার কোল ঘেঁষে বসে পড়ার ভাব করতাম। ভাব করতে করতে কিভাবে যেন চার-সাড়েচার বয়েসের দিকেই পেপারের শিরোনাম (বড় অক্ষরগুলো) পড়ার মতো হয়ে গেলাম। তখন আমার বদ্ধমূল ধারনা ছিল যে পেপারের বড় অক্ষরগুলো ছোটদের জন্য লেখা হয়, আর ছোট অক্ষরগুলো বড়দের জন্য। তো, ছেলে বলেই হোক বোঝার সুবিধা বলেই হোক, মা পেপার পড়তে বসলে আমি টুক করে খেলার পাতাটা সরিয়ে নিতাম, কারণ ওতে ফুটবলের ছবি দেখা যেত। এমনি একদিন দেখলাম, শিরোনাম লেখা "মোহামেডান বিজয়ী, আজাদ ধরাশায়ী" টাইপের কিছু আর শিরোনামের ঠিক উপরে দুজন খেলোয়াড় বল কাড়াকাড়ি করছে তার ছবি।

আমার খালাতো ভাইয়ের নাম ছিল আজাদ (ঠিক ধরেছেন, ৭১ এ জন্ম), ছবিতে দেখলাম একজন একজন বল নিয়ে খেলছে। আমাকে আর পায় কে! আমি মোটামুটি বুঝে নিলাম যে মোহামেডান একটা ছেলে, আর আজাদ আরেকটা ছেলে। অনেকদিন পর্যন্ত আমি জানতাম আবাহনী/মোহামেডান এগুলো মানুষের নাম। স্কুলে ভর্তি হবার পর যখন দলবেঁধে ফুটবল খেলা শুরু করলাম, তখন বুঝলাম এটা অনেকে মিলে খেলে, আর ওগুলো ক্লাবের নাম। আরেকটা মজার বিষয় ছিল 'সরকার' কে নিয়ে।

পেপারেও দেখতাম, বাবা-মাকেও দেখতাম শুধু সরকারকে বকাবকি করে। সরকার এই করেনা, সেই করেনা। আমার ছোট্ট মাথায় ঢুকে গেল সরকার হলো একটা খুব বাজে লোক। একদিন আমার ব্যবসায়ী মেঝখালু তাঁর কর্মচারীকে নিয়ে ঢাকায় আমাদের বাসায় আসলেন। সেসময়, ব্যবসায়ীদের হিসাবরক্ষক কর্মচারীদের 'সরকার' বলা হতো।

আমাকে আর পায় কে! আমি মনে মনে হিসেব মিলিয়ে নিলাম 'এই সেই খুব খারাপ লোকটা তাহলে!!' আমার পিঠাপিঠি বড় আপাটা যখন ক্লাস টুতে পড়ত তখনও আমি স্কুলে ভর্তি হইনি। কিন্তু ওর বাংলা আর চয়নিকা বইটার প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করতাম, মূল কারণ ওটার বাংলা অক্ষরগুলো বড়বড়, সব পড়া যায়। তো, সেখানে 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানটা ছিল, সাথে ছবি ছিল একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ছড়াটা পড়ে আমি বুঝেছিলাম কারও ভাইয়ের কোন খারাপ কিছু হয়েছে। আমি আপাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি? সে এখন আমাকে কোনভাবেই বোঝাতে পারছেনা, এই 'আমার ভাই'টা সবার ভাই।

আমিও কোনভাবেই মানছিনা, আমি বলছি নিশ্চয়ই ছবির মেয়েটার ভাইয়ের কথা বলছে। এটা নিয়ে তুমুল ঝগড়া, মারামারি। ফলাফল হলো, আপা বলল তুই আর কোনদিন আমার বই পড়বিনা। ভাগ্যিস 'সরকারে'র ব্যাপারটা মাকে জিজ্ঞেস করিনি, তাহলে হয়ত বলত 'খবরদার! কোনদিন পেপার পড়বিনা!!'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।