তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
৩ মার্চ, ২০০৬
সময়: দুপুর ১২:০০-১:০০
অফিস - তিস্তা গ্রুপ, মহাখালী
টি.ভি ছাড়বেনা ছাড়বেনা করতে করতেও ছেড়ে ফেলল রাজীব। কার্টুন নেটওয়ার্কে 'ফ্লিন্টস্টোনস' দেখাচ্ছে। কার্টুনের উপর ওর শিশুকালের দূর্বলতাটা এখনও টিকে আছে। টি.ভি দেখার একটা বড় অংশ ও কার্টুন দেখেই পার করে। অফিসের কাজ বাদ দিয়ে টি.ভি দেখছে সেটা ভাইয়া জানতে পারলে কপালে খারাবি আছে, কিন্তু গতকালের ডিলটা ফাইনাল করে ওর মন আজ পুরা বিন্দাস! দেখলে দেখুক, যা হবার হবে।
কাল রাত ১টার দিকে বাসায় গিয়ে দেখে বাবা-মা-ভাইয়া কেউ ঘুমায়নি। সবাই জেগে অপেক্ষা করছে ওর জন্য। ডিলটা ফাইনাল হয়েছে শুনে বাসায় সেই ১টার সময়ই একটা উৎসব মত হয়ে গেল। তিস্তা আর ভুঁইয়া গ্রুপ দু'জনেই কাজটার ৫০ ভাগ করে পেয়েছে। রেট ঠিক হয়েছে ১৮ পার পিস।
সত্যি কথা বলতে কি বাবা-ভাইয়া মনে করেছিলেন ও কাজটা হাতছাড়া করে ফেলবে। তাই উৎসবটা যতটা না ছিল এগ্রিমেন্ট সাইন করার জন্য তার চেয়ে বেশী ওর সাফল্যে। একমাত্র মার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল ওর উপর, উনি সন্তান সাফল্যে উদ্ভাসিত হয়ে বলে চললেন, "আগেই বলেছিলাম না, রাজু ঠিকই পারবে!"
চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলে পা তুলে দিল ও। গতকাল মিটিংটা একদমই একমাত্রিক ছিল। ভুঁইয়া সাহেব প্রথম থেকেই বলেছেন দুই গ্রুপে ৫০-৫০ করে কাজ ভাগ করে দেয়া হোক।
এ প্রস্তাবে প্রতিবাদের কোন কারন দেখেনি রাজীব। পরে আসল তর্কা-তর্কীটা হয়েছে রেট পার পিস নিয়ে। মার্সেলের মত পিচ্ছিল বায়ার আগে দেখেনি রাজীব... এক্ষুনি হয়তো বলল, "আমার লাভ থাকছে ১৫%", একটু পরেই সে কথা বেমালুম অস্বীকার করে যাবে। সে সময় ভুঁইয়া সাহেবের সাথে চমৎকার বোঝাপোড়া হয়েছে। ভদ্রলোক রাজীবের প্রতিটা প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করেছেন, ছোট বলে কোন অবহেলা দেখান নি।
লোকটাকে ভাইয়ার কেন পছন্দ তা এখন বুঝতে পারছে রাজীব। এগ্রিমেন্ট সাইন করার পর রাজীবের হাতটা শক্ত করে ধরে ভদ্রলোক বলেছেন, "তুমি আর তোমার ভাই, দু'জনের মধ্যেই একটা জিনিস আছে যেটা যে কোন ব্যবসায়ীর থাকাটা খুব জরুরী, তোমরা দু'জনেই জান কখন চুপ থাকতে হয়। তোমার বাবা অসম্ভব ভাগ্যবান!"
'ফিন্টস্টোনস' শেষে 'দ্য পাওয়ার পাফ্ গার্লস' শুরু হলো। কোন এক বিচিত্র কারনে এই শিশুতোষ মেয়েলি কার্টুনটাও ওর বেশ ভালোই লাগে।
এমন সময় মোবাইলটা কর্কষ স্বরে বেজে উঠল রাজীবের, অচেনা নাম্বার।
"হ্যালো!"
"হ্যালো, ক্যান আই টক টু রাজীব প্লীজ?"
"স্পিকিং!"
"রাজীব, হাই! আমি তৃণা। "
"তৃণা?"
"এরই মাঝে ভুলে গেছ? কাল পরিচয় হলো মনে আছে? বিয়ার?" মেয়েটার গলায় স্পষ্ট অভিমান! আশ্চর্য তো! ওর ফোন নাম্বার কোথা থেকে পেল!
"হ্যাঁ মনে আছে। কেমন আছ তৃণা?"
"ভালো। শোন, তোমার কাজ আছে কোন আজ বিকালে?"
সতর্ক হয়ে গেল রাজীব, "কেন বল তো?"
"সেটা তো এখন বলা যাবে না! আগে বল কাজ আছে নাকি?"
তৃণা এমনটাই বলবে সন্দেহ ছিল রাজীবের। এখন যদি বলে কাজ নেই তাহলে হয়ত দেখা করতে চাইবে।
রাজীবের নীতি গ্রামের চোরদের মত, নিজের মহল্লায় চুরি করেনা ও। তাও মেয়ের বাবা যেখানে ভুঁইয়া সাহেব,
"আজ বিকালে একটু কাজ আছে অবশ্য। কি ব্যাপার শুনি?"
"কাজটা পরে করা যায় না?"
"নাহ্, সমস্যা হয়ে যাবে, খুবই জরুরী কাজ। কি হয়েছে বল না আগে শুনি?"
"তোমার কিচ্ছু শোনার দরকার নেই!" রাগ দেখিয়ে দুম করে ফোন রেখে দিল মেয়েটা।
বোকার মত মোবাইল হাতে বসে থাকল রাজীব! ঘটনা কি ঘটল তা ঠিক হজম করতে পারছে না।
বড় করে শ্বাস নিয়ে মোবাইলের বোতাম টিপে রানার নাম্বারটা বের করলো ও। রানা ওর ছোটবেলার বন্ধু। পরিচয় সেই ক্লাস সিক্স এ, বনানী বিদ্যানিকেতনে। এর পরে শাহীন কলেজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সব একসাথে পেরিয়ে দু'জনের কয়লা বন্ধুত্ব আজ হীরকে পরিণত।
রানাকে বলা যায় মেয়েদের চলমান ডেটাবেস।
ঢাকার হেন মেয়ে নেই যার সম্পর্কে রানা জানে না। ছেলে হিসেবে সে রাজীবের সম্পূর্ন উল্টো। কমপিউটার বিজ্ঞান থেকে ভাল রেজাল্ট করে এখন সিমেন্সে মোটা বেতনে কাজ করছে। মেয়েঘেষা স্বভাবের ছিটেফোঁটাও নেই ওর মাঝে। ওর শখ কেবল মেয়েদের নিয়ে ঢাকার বাতাসে ওড়া গুজব গুলো সংগ্রহ করে ওর ঝোলা সমৃদ্ধ করা।
রাজীব নিশ্চিত যে তৃণা সম্পর্কে রানার কাছে সলিড খবর পাওয়া যাবে।
"কিরে দোস্ত, লাঞ্চ করবি নাকি একসাথে?" ফোন ধরেই উদ্দাম গলায় সুধালো রানা। উত্তর দেবার ধারে কাছ দিয়েও গেল না রাজীব,
"তুই তৃণাকে চিনিস?"
"কেন দোস্ত? কাহিনী কি?" বাঁধ ভাঙা আনন্দ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো রানা।
"কাহিনী বলতেছি। আগে বল চিনিস নাকি?"
"৫টা তৃণাকে চিনি।
কোনটার কথা কস্?"
এই না হলে রানা!
"ভুঁইয়া সাহেবের মেয়ে। "
"বলিস কি! ভুঁইয়া গ্রুপের ভুঁইয়া!" রানার গলায় বিস্ময়টা স্পষ্ট।
"না তো কি! কয়টা ভুঁইয়াকে চিনিস তুই?"
"কস্ কি দোস্! কাহিনী কি বল তো?"
"ধুর ব্যাটা! খামাখা কথা প্যাচাস। কইলাম তো পরে কমু। তুই কি জানিস?"
"মেয়ে তো চরম হট দোস্ত।
কোকড়া চুল না?"
"হুম!"
"লম্বা, শ্যামলা? বিপাশা বাসুর মত দেখতে?"
"লম্বা, শ্যামলা ঠিক আছে। বিপাশা বাসুর মত দেখতে নাকি বলতে পারবো না!"
"দোস্তওওওওওও... কি করছ তুমি শুনি?"
"কিচ্ছু না। এত খুশি কেন তুই শুনি?"
"মেয়ে তো চরম প্লেয়ার দোস্ত!"
"প্লেয়ার মানে?"
"প্লেয়ার মানে তোমার নারী ভার্সন! বুঝছো? মেয়ে তো দুই দিন পর পর বয়ফ্রেন্ড বদলায়!"
"তাই?"
"হ ব্যাটা! কেউ মাস খানেকের বেশী টিকে না। বাপে চিন্তায় আছে ওকে নিয়ে। ইংল্যান্ডে ফুপুর কাছে পাঠানোর ধান্দায় আছে।
মেয়ে যেতে চায় না। "
"কেন?"
"সেইটা আমি কেমনে জানুম। মনে হয় বয়ফ্রেন্ড গুলো ছাইড়া যাইতে মন চায় না। "
"মেয়ের বয়স কত?"
"সিওর জানি না। তবে আই.ইউ.বি. তে বি.বি.এ. পড়ে।
থার্ড ইয়ারে। গর্ধভ টাইপ স্টুডেন্ট... ফেইল আর রিটেকের উপরে আছে। "
"তুই এত জানিস কিভাবে?" অবাক হলো রাজীব।
"আরে আমার খালাত বোনটা আছে না, সীমা, ওর সাথে পড়ে। সীমার বাসায় দেখেছি কয়েক বার।
দুইটাই গর্ধভ তো, ভালো মিল। আমার কিঞ্চিত ইচ্ছা আছিল মেয়ের সাথে প্রেম করার। গর্ধভ তো, আসল প্রেম চিনে নাই!"
হেসে ফেলল রাজীব, খুলে বলল কি হয়েছে গত রাত্রে।
তৃণা ফোন করেছিল শুনে লাফিয়ে উঠলো রানা,
"দোস্তওওওওওওও! কাহিনী তো বেশ প্যাচ খাইছে!"
"শোন দোস্ত। এটা ভুঁইয়া সাহেবের মেয়ে।
বুঝছিস কি বল্লাম? ওর সাথে আমি কিচ্ছু করবো না। "
"আরে ব্যাটা, মেয়ে তো তোকে বিয়া করতে চাবে না। কইলাম না, মেয়ে প্লেয়ার?"
"ডাসন্ট ম্যাটার দোস্ত। আমার পক্ষে সম্ভব না। "
"বুঝছি! শোন আজ এন.এস.ইউর সামনে আসবি না বিকালে? তখন কথা হবে এটা নিয়ে।
ঠিক আছে?"
"আচ্ছা!"
"ভালো কথা, এই মেয়ের কিছু ছবি কিন্তু ইন্টারনেটে অনেক চালাচালি হইছে!"
"কি!"
"ইয়েস। ইন্টারন্যাশনাল কার শোর কিছু ছবি। মেয়ে সেখানে মডেল ছিল। আমার কোন ইমেইলের এটাচমেন্টে এখনও থাকতে পারে। পাঠাবো তোকে?"
"পাঠা!"
"আচ্ছা, পনের মিনিট পরে মেইল চেক করিস।
আমি এখন গেলাম। "
লাইন কাটতেই আবার বেজে উঠল রাজীবের মোবাইল। ওপাশ তৃণা বলল,
"রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছিলাম। স্যরিইই... তুমি রাগ করনি তো?"
© অমিত আহমেদ
(চলবে)
গন্দম - পর্ব ১ | গন্দম - পর্ব ২ | গন্দম - পর্ব ৩ | গন্দম - পর্ব ৪ | গন্দম - পর্ব ৫ | গন্দম - পর্ব ৬ | গন্দম - পর্ব ৭.১
বি.দ্র.: "এ গল্পের প্রত্যেকটা চরিত্র কাল্পনিক, জীবিত বা মৃত কারও সাথে কোন সাদৃশ্য পাওয়া গেলে তা নেহায়তই কাকতালীয় হিসেবে গন্য হবে। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।