আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখা না দেখাঃ ইনসাইড দি মাইন্ড অফ আ জিনিয়াস



গেল হফতার বইমেলার সময় পুরা ছয় ঘন্টা বইসা ছিলাম মাগার মানুষজন সেই অনুপাতে আসে নাই। তাই বলতে গেলে আমার জন্য অত্যান্ত আনন্দময় একটা বিকেল গেছে। কারণ একগাদা বই আর কেউ নাই নজরদারি করার জন্য। তাই ঝটপট দুটো বই খতম করে ফেললাম। চলো বিয়ে করে ফেলিঃ) জাকারিয়া স্বপনের লেখা হালকা উপন্যাস টাইপের বই।

এই পাবলিকের লেখার সাথে পরিচয় আজকে না। সেই নব্বইয়ের শেষের দিকে যখন অনলাইন নামে প্রযুক্তি বিষয়ক লেখা শুরু করেন যায়যায়দিনে সেই তখন থেকেই পড়া। উনিও পড়াশোনার গন্ডী শেষ করেননি আর আমিও স্কুল শেষ করিনি। তবে অকপটে স্বীকার করি যে যায়যায়দিনের অনলাইন কলামটা নিয়মিত ফলো না করলে প্রযুক্তিতে আমি ব্যাক্তিগতভাবে কয়েকবছর পিছিয়ে যেতাম। তাই সেদিক থেকে আমি কৃতজ্ঞ।

সেটা গেল টেকি রচনার কথা। ঝরঝরে বাংলায় প্রযুক্তির নতুন অবদানগুলো খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরার বিষয়ে উনার হাত খুবই চমতকার। এখন আসি সাহিত্য বিষয়ে। আমেরিকার প্লেন-বোমা হামলার কিছুদিন পরেই ই-মেলা.কমে পড়েছিলাম রাউটার্স। মোটামুটি লেগেছিল কিন্তু উগ্রপন্থী মৌলবাদীদের ওপরকার তীব্র ঝাঁঝটুকুর কথা মনে আছে।

তারপর আরো বেশ কিছু বই বেরিয়েছে কিন্তু পড়া হয়ে উঠেনি। সেদিন নাম দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। তুলেই নিলাম বইটা, আর মাছিমারার টাইম বলে, এক বসাতেই মোটামুটি পুরোটা পড়ে ফেললাম। ফলাফলঃ ঠিক কিভাবে রেটিং করব শিওর না। তিন আনি বাস্তবতা, ছয় আনি প্রেম, দুআনি সাসপেন্স, এক আনি বড়দের জিনিষ, দুআনি মানবতা আর দুআনি অন্যান্যকিছু।

সব মিলিয়ে একটা চমৎকার উপন্যাস হবার জন্য যা লাগে সব মশলাই ছিল। কিন্তু কেন যেন মনে হয়েছে, সব উপকরণ ঠিকমত মিশিয়ে নেড়েচেড়ে অমৃত পরিবেশন করার মত হাতটা এখনো পেকে উঠেনি। লাস্টের পাঁচ পাতা ছাড়া পুরোটাতেই মনে হয়েছে লয় উঠেছে নেমেছে অনিয়মিত ভাবে। আরেকটু সেন্সিবল হলে মনে হয় ভালই লাগতো। পরে মনে হয়েছে এইরকম ফার্স্টক্লাশ একটা টাইটেল মুটামুটিভাবে জলেই গেল।

আশা করি লিখতে লিখতে উনার কলম থুক্কু কিবোর্ড আরো সাবলীল হয়ে উঠবে। আমার রেটিং ১০০ তে ৫৫-৬০। দেখা না দেখাঃ বর্তমানের সাহিত্য সম্রাট হুমায়ুনের সাম্প্রতিক কয়েকটা বিদেশভ্রমণের ঘটনা নিয়ে এই বই। কিছুটা আত্মজীবনী/ আত্মপক্ষ আর কিছুটা ভ্রমণকাহিনী নিয়ে এই বই। তেমন কিছু লেখার নাই, কিন্তু অন্য কারণে লিখছি বইটা সম্পর্কে।

হুমায়ুনের ভ্রমণকাহিনী এইটাই প্রথম না, বহু আগে বেশ মুগ্ধতা নিয়েই পড়েছি মে ফ্লাওয়ার আর হোটেল গ্রেভার ইন। আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই পড়ে কখনো দমফাটা হেসেছি, কখনো ভেজা চোখে তাকিয়েছি। কিন্তু সেই হুমায়ুন আর এবারের যেই মানুষটাকে পেলাম মনে হল অনেক বদলে গেছে। গত কয়েকবছরের এবনরমাল ব্যাক্তিগত জীবনের প্রভাব কিনা জানি না, তবে আগের লেখায় যেমন, দেশের জন্য মন কাঁদা এক জিনিয়াস গবেষকের ছায়া ছিল এখানে অনেকটাই তার পরিবর্তন। এবারে মনে হয়েছে, একজন নিঃস্বঙ্গ, কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন, কিছুটা লোভী একজন মানুষের অদ্ভূত কার্যকলাপ।

নিজের চারপাশের মানুষগুলো যে অনেকাংশেই তোষামোদকারী আর সুযোগসন্ধানী, সেটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পারেন, আর সেটা বুঝেও মনে হয় বিষয়টা উপভোগই করেন, আর প্রয়োজনমত ব্যাবহার করতে আপত্তি নাই। আর বইয়ের যায়গায় যায়গায় প্রচুর পরিমাণে ছবির ব্যাবহার কিছুটা দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। আর বইয়ের কভারে ইস্টার আইল্যান্ডের ছবি দিয়ে সেখানকার কোন ভ্রমণকাহিনী না দিয়েই বই খতম। আরেক ফাজলামি। তবে টাইটেলে যা বলছিলাম, একজন মহাক্ষমতাধর শক্তিশালী কলমের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

বই মানুষকে লেখাকের চিন্তার ভিতরে ডুবিয়ে ফেলে, এবারের হুমায়ুনের এই রূপ আমাকে মুগ্ধ করেনি। তবুও লেখার যে বুনন, আর বাঁধাই তাতে ১০০ তে ৬৫ না দিয়ে পারছি না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.