আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ড্রেজিংয়ের বালু ফের নদীতে

'নদীর বালু তো নদীতেই চইলে যাচ্ছে। তাহলি এত ট্যাকা-পয়সা খরচ কইরে নদী কাইটে লাভ কী'- এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হারিপুরে গড়াই নদী পারের বাসিন্দা এনামুল হক।

সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলভাগের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়ার গড়াই নদী খনন প্রকল্প নিয়ে এমনই বক্তব্য এখন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব মহলের। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে প্রায় ৪৫০ কোটি ব্যয় হয়ে গেছে। তবে ড্রেজিং করে নদীতীরেই উত্তোলনকৃত বালু ফেলায় তা আবার নদীতেই চলে যাচ্ছে।

চলতি বর্ষায় এসব বালু বৃষ্টিতে ধুয়ে ও প্রবল সে াতে ফের নদীতে গিয়ে পড়ছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় গড়াই নদী খনন নিয়ে ব্যাপক অনিময়, লুটপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ধরেন অনেকে। এর পরিপ্রেক্ষিত জেলা প্রশাসক খননকাজের অনিয়ম চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন।

জানা যায়, প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) কাজ পায় চীনের চায়না হারবার নামে একটি কোম্পানি। ২০১১ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম খননকাজ শুরু হয়।

গড়াই নদীর উৎসমুখ তালবাড়িয়া থেকে শুরু করে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পর্যন্ত মোট ৩০ কিলোমিটার নদীপথ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৩০ কোটি টাকা খরচ করা হয় খননকাজে। পরবর্তী অর্থবছরে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। চলতি অর্থবছরে মাত্র ১৩ কিলোমিটার খননকাজ করা হয়েছে। এতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গড়াই খনন প্রকল্পে দুটি ড্রেজার কেনাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড তিন বছরে ব্যয় করেছে ৪৭৫ কোটি টাকা। তবে প্রতি বছরই নদী খননের পর উত্তোলনকৃত বালু পানির কোলঘেঁষেই ফেলা হয়। ফলে বর্ষা এলে যেখানকার বালু আবার সেখানেই ফিরে যায়। পরের বছর আবার টাকা খরচ করে সেই বালু কাটা হয়। এদিকে খননকাজের স্বচ্ছতা নিয়ে খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন কক্ষে মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদকে নিয়ে নানা সমালোচনা করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন খননকাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করেন। তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নদী খননকাজে উত্তোলনকৃত বালু ও মাটি দিয়ে নদীর পাড় ও ভাঙন এলাকা ভরাট করে সেখানে চাষাবাদযোগ্য কৃষি জমি সৃষ্টি করা, বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বাগান সৃজন ও জনসাধারণের সুবিধার্থে মাঝেমধ্যে ঘাট তৈরি করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নদী বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিসহ গড়াই নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম সরেজমিন পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

স্থানীয় পরিবেশ বিশ্লেষক গৌতম কুমার রায় জানান, গড়াই খননের প্রধান লক্ষ্য ছিল সুন্দরবনকে বাঁচানো এবং এ অঞ্চলের লবণাক্ততা হ্রাস করা। শুধু উত্তোলনকৃত বালু নদীকূলে ফেলার কারণে খননের যে উদ্দেশ্য তা ভেস্তে যেতে বসেছে।

তবে গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদ বলেন, নদীর পানি এবার অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে কয়েকটি পয়েন্ট থেকে খনন করা বালু ও মাটি স্রোতের তোড়ে নদীতে পড়ছে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

নাব্য ঠিক রাখতে দীর্ঘমেয়াদি খনন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করে প্রথমবারের মতো গড়াই নদী খনন করা হয়। কিন্তু এর থেকে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।