- আপনি কি করেন?
(হাসি হাসি মুখ হঠাত্ গম্ভীর হয়৷ তারপরে অতি শুদ্ধ ভাষায়)
: আমি নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে লিখি৷
- তারপরে?
: আবার জিগায়?! লিখে ফাটিয়ে দেই৷ জানেন আমার লেখা পড়ার আগে কতজন টিস্যু বক্স নিয়ে বসে?! আর লেখা নামালে কি কারবারটাই না হয়, পাবলিকে আহা উহু করে ওয়েবসাইট ফাটিয়ে দেয়৷ কেউ বলে:
তুই সব বইলা ফেলাইছিস, আর কি বলুম!
কেউ বলে: প্রতি শব্দে আগুন৷
কেউ গুরু গুরু বলে ভাষা হারিয়ে ফেলে!
কেউ বলে: এই আবেগের যে অর্নিবাণ বিচ্ছুরন তাতে জ্বলে পুড়ে যাই৷
এতজনে সহমত প্রকাশ করে যে কি বলবো!
- খুব ভালো৷ চমত্কার! অসাধারন!
আচ্ছা আপনি যে এই মুসলিমদের নিয়া লেখেন, আর ঐদিকে আপনার নিজের দেশের কোটি কোটি লোকজন আজ পর্যন্ত কোন মতে বেঁচে আছে তাদের কথা তো বলতে শুনি না৷ তাদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছরের অবিচার, দেশের অবহেলা। মার্চ মাস নাইলে ডিসেম্বরে অল্প বয়স্ক ছেলে ছোকরা সাংবাদিক হয়তো কোন বস্তি থেকে এরকম অসহায় মানুষদের খুজে বের করে৷ তাদের কথা আমরা শুনি বছরের ঐ দুইদিনেই৷ আপনি সিনিয়ার মানুষ৷ আপনি কি নিয়া লেখেন সাধারনত?
: আবারো জিগায়? (হালকা বিরক্ত) লিখি ২০০৭ এর ইসরাইল আর ইহুদীবাদ নিয়া৷ (ভুরু কুচকে যায়)
- ইহুদীবাদ, ক্যামনে কি, বুঝায়ে বলেন প্লিজ৷ আপনি বস-মানুষ, না বুঝাইলে ক্যামনে৷
: আরে বোকা ১৯৬০ এর পশ্চিমাদের আমরা স্পর্শ করতে চাই না৷ আমি নিজেই পশ্চিমে যাওয়ার জইন্য জি আর ই ফাইট দিতেছি আইজ কয়েকবছর ধইরা। দরকার হইলে ইহুদী প্রফেসরের গু চাইটা খাইতেও আপত্তি নাই। দরকারটা পরে বলছি৷
আমি ও আমার মতো এলিট লেখকেরা যারা এলিট পত্রিকা (যেমন যায়যায়দিন, কম্পিতুটার জগৎ) এর পাতায় লিখি আবার লিখিও না তারা মনে করি আমাদের পাড়ায়, পানের দোকানে, সাইবার ক্যাফেতে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে - (কোথায় নেই) চারিদিকে এই নতুন ইহূদী সমর্থকরা আমাদের ভিড় করে আছে৷ আমি ও আমরা নতুন ইহূদী, ভারতের দালাল সমর্থক তৈরী করি, তাদের খেতাব দেই৷
নতুন ভারতের দালাল তৈরী করা মানে এই আমরা হয়ে উঠি নতুন কলমবাজ ইসলামের সেনানী৷ আমার প্রতিবেশির কলেজে পড়ুয়া ছেলেকে (বই পত্র পড়ে করে, এমটিভি দেখে, স্বাধিনতার পক্ষের বই পত্র পড়ে নি:সন্দেহে ও হার্ডকোর ভারতের দালাল) দালাল ডাকলে আমি হতে পারি ইসলাম বিষক লেখক৷ আসল ইস্যু তখন আর মুখ্য না।
বুঝলেন না, শত্রু বানায়ে নিতে হয় অনেক সময়ে৷ আর এই নতুনদের চোখে পড়ার জন্য দরকার হয় আসল ভারতের দালালদের, তারা একটা ইমোশনাল ক্যাটালিস্ট৷ তাদের দরকার আছে৷ এই কারনে যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষক, প্ল্যানার, আল বদর কমান্ডারদের বিরুদ্ধে আমরা তেমন কিছু বলি না৷ আমরা নতুন দালাল সনাক্ত করি, চায়ের টেবিলে বসে হাতি ঘোড়া মেরে প্ল্যান করি আর ঠিক করি নতুন কাকে "মুখোশ টুখোশ" খুলে দেওয়ার নাম করে ভারত আর ইহূদিবাদের দালাল বলে ডাকা যায়৷
- তাইলে লেবানন এর খুনীরা, শিশু হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীরা?
:: আরে রাখেন৷ ওরা আমার ও আমাদের ইন্টারাকশনের আওতায় নেই৷ আম্রিকার সৈন্য সৌদি পবিত্র ভুমিতে সেইটার প্রতিবাদ আমরা কেন করবো? একটা ইয়ে বলে কথা আছে না।
কিছু ইস্যু জমিয়ে রাখা সবসময়ের জন্য, অনেক কারনেই লাভজনক৷
আমি আমার সাধ্যের সাথে আপোষ করতে যাবো ক্যান? বোকা নাকি!
- বুঝলাম৷ তাইলে আপনি ও আপনারা সাধ্যের মধ্যে আর কি কি করেন?
: একটা উদাহরন দেই৷ বুঝতে সুবিধা হবে৷ এই যেমন মনে করেন অমুক নামের একটা ছোকরা সেইদিন মুখের উপরে বেয়াদবের মতো বলে উঠলো: 'লেবাননের শিশুদের ছবিরে যেইখানে সেইখানে ব্যাবহার করবেন না৷' আরে সেইদিনের ছেলে৷ ১৯৯২ এ মনে হয় স্কুলে পড়ে যখন আমরা বাংলাদেশে প্রায় আরেকটা জিহাদ করতে ব্যস্ত ছিলাম (গলা ঝাকানী ও কাশি)৷
সে কিনা কয় জিহাদের ছবি যেইখানে সেইখানে ব্যবহার করলে নাকি কি হয়! হি সাউন্ডস লাইক মুরতাদ ইউ নো। হরিবল। ভাবছি ছোকরাকে মুরতাদ সাব্যস্ত করার জন্য আমরা ওয়েব সাইটে হরতালে যাবো, একটা একশন না হলে জমছে না।
ভাবেন। ঐ ছবিগুলা হইলো আমাদের লেখার পেইজ মেকআপ এলিমেন্ট৷ শোভা বর্ধক৷ ঐ সাদাকালো আর্কাইভ ছবি দেইখইতো ফাস্টে পাবলিক আসল ইস্যু ভুলে যায়৷ ওগুলা ব্যবহার, অতি ব্যবহার, অতি অতি অতি অতি ব্যবহার আমাদের আবেগকে আরো আরো আরো আরো আরো শানিত করবে, করেছে, করতেই থাকবে, করতেই থাকবে ককককককককককককককরতেই থাকবে৷
তারপরে আমি যেদিকে ইস্যু টানি, তারাও সেইদিকে যায়৷ শেষ হয় বাহবা দিয়া৷
- অতি ব্যবহারের তো একটা বিপদ আছে এইটাতো মানবেন?
: জ্বি না৷ মানবো না৷ মানার দরকার নাই৷ আপাতত আমরা জিহাদী, আমরা ইসলামের সৈনিক, ব্যস৷ আমি ভাই খেটে খাই৷
- তাইলে লেবাননের নির্যাতিত মানুষদের অধিকার বা এর যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে খুব একটা লিখেন না?
: লিখবো না কেন৷ অবশ্যই লিখি৷ ওগুলাতো প্রাইম আইটেম৷ হটের ভিতরে হট।
বছরের বিশেষ দিনে ওই লেখা নামাই আমি ও আমার বন্ধুরা৷ মনে করে ১০টা লেখার ভিতরে একটা ফ্যাকচুয়াল লেখা নামাই৷ কাগজপত্র ঘাটতে হয়, বইপত্র পড়তে হয়৷ এত কষ্ট! তারচেয়ে আবেগের নক্সাকাটা অনেক বেশি সহজ৷ পাবলিকে খায়ও বুঝলেন৷
ঝট করে বসো, চট করে লিখে দাও৷ সঙ্গে একটা লেবাননের শিশুদের ছবি, তাদের ধর্ষিত মায়ের ছবি, অথবা গলিত লাশ৷
ব্যস৷
ভালো কথা, আমি যে ওয়েবসাইটে লিখি সেইটার ঠিকানাটা নিয়ে যান৷ দেখবেন কেমন খায় পাবলিক৷ আমিতো রীতিমতো সুপারস্টার সেইখানে! নিন নোট করে নিন৷ ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট সামাহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট, হ্যা সামহোয়্যারইনব্লগ একটা শব্দ৷ তারপরে একটা ...
বিশেষ গোষ্ঠিবদ্ধ কলমবাজ ইসলামী লেখকেরা যখন নতুন মুরতাদ তৈরী করতে গিয়ে আমার পাড়ার জুনিয়ার কাউকে (যাকে আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের একজনই দেখি) বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ২১৯ রুমের জুনিয়ার রুমমেটকে তার পলিটিক্যাল ভিউয়ের জন্য ভারতের দালাল শিরোনামে আখ্যায়িত করে পুলকিত হয় এবং নিজেদের আরো তুখোড় থেকে তুখোড়তম ইসালমের সৈনিক ভাবতে চায় তখন আমি সেইটার প্রতিবাদ করি৷ আমি মনে করি এই ধরনের দালালি বিষয়ক ডিসকোর্স আর হাইপোথিসিস আমাদের জিহাদবিষয়ক অর্জনকে আন্ডারমাইন করে, যা প্র্যাক্টিক্যালী এখনও সম্ভব তাকেও সেকেন্ডারী প্রায়োরিটিতে ঠেলে দেয়৷
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।