আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্ট্রোস্পেকশন৷ একটা সাক্ষাত্‍কার আবার ঠিক সাক্ষাত্‍কারও না

বৃষ্টি হচ্ছে সুনিশ্চিত এই মুহুর্তে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও

- আপনি কি করেন? (হাসি হাসি মুখ হঠাত্‍ গম্ভীর হয়৷ তারপরে অতি শুদ্ধ ভাষায়) : আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখি৷ - তারপরে? : (মনে মনে বলে, আবার জিগায়?!) লিখে ফাটিয়ে দেই৷ জানেন আমার লেখা পড়ার আগে কতজন টিস্যু বক্স নিয়ে বসে?! আর লেখা নামালে কি কারবারটাই না হয়, পাবলিকে আহা উহু করে ওয়েবসাইট ফাটিয়ে দেয়৷ কেউ বলে: তুই সব বইলা ফেলাইছিস, আর কি বলুম! কেউ বলে: প্রতি শব্দে আগুন৷ কেউ গুরু গুরু বলে ভাষা হারিয়ে ফেলে! কেউ বলে: এই আবেগের যে অর্নিবাণ বিচ্ছুরন তাতে জ্বলে পুড়ে যাই৷ এতজনে সহমত প্রকাশ করে যে কি বলব! - খুব ভালো৷ চমত্‍কার! অসাধারন! আচ্ছা আপনি যে এই মুক্তিযুদ্ধ নিয়া লেখেন, আর ঐদিকে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যে কয়জন আজ পর্যন্ত কোন মতে বেঁচে আছে তাদের কথা তো বলতে শুনি না৷ তাদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছরের ধারাবাহিক অন্যায়, দেশের অপরিসীম, অমার্জনীয় অবহেলা। মার্চ মাস নাইলে ডিসেম্বরে অল্প বয়স্ক ছেলে ছোকরা সাংবাদিক হয়তো কোন বস্তি থেকে এরকম পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের খুজে বের করে৷ তাদের কথা আমরা শুনি বছরের ঐ দুইদিনেই৷ আপনি সিনিয়ার মানুষ৷ আপনি কি নিয়া লেখেন সাধারনত? : আবারো জিগায়? (হালকা বিরক্ত) লিখি ২০০৭ এর নতুন রাজাকারদের নিয়া৷ (ভুরু কুচকে যায়) - নতুন রাজাকার, ক্যামনে কি, বুঝায়ে বলেন প্লিজ৷ আপনি বস-মানুষ, না বুঝাইলে ক্যামনে৷ : আরে বোকা ১৯৭১ এর রাজাকারদের আমরা স্পর্শ করতে চাই না৷ তারা থাকুক, এমপি হোক, গদীকে যাক, টিভিতে ভাষন দিক৷ পাবলিকের ভিজিবিলিটিতে ওদের দরকার আছে৷ দরকারটা পরে বলছি৷ আমি ও আমার মতো এলিট লেখকেরা যারা এলিট পত্রিকা (যেমন ভোরের কাগজ, প্রথম আলো, যায়যায়দিন) এর পাতায় লিখি আবার লিখিও না তারা মনে করি আমাদের পাড়ায়, পানের দোকানে, সাইবার ক্যাফেতে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে - (কোথায় নেই) চারিদিকে এই নতুন রাজাকারেরা আমাদের ভিড় করে আছে৷ আমি ও আমরা নতুন রাজাকার তৈরী করি, তাদের খেতাব দেই৷ নতুন রাজাকার তৈরী করা মানে এই আমরা হয়ে উঠি নতুন কলমবাজ মুক্তিযোদ্ধা৷ আমার প্রতিবেশির কলেজে পড়ুয়া ছেলেকে (নামাজ টামাজ করে, দুই একটা জামাতের ছেলে ছোকরা ওর বন্ধু, নি:সন্দেহে ও হার্ডকোর জামাতী) রাজাকার ডাকলে আমি হতে পারি মুক্তিযোদ্ধা বিষক লেখক৷ আসল ইস্যু তখন আর মুখ্য না। বুঝলেন না, শত্রু বানায়ে নিতে হয় অনেক সময়ে৷ আর এই নতুনদের চোখে পড়ার জন্য দরকার হয় আসল রাজাকারদের, তারা একটা ইমোশনাল ক্যাটালিস্ট৷ তাদের দরকার আছে৷ এই কারনে যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষক, গনহত্যার প্ল্যানার, আল বদর কমান্ডারদের বিরুদ্ধে আমরা তেমন কিছু বলি না৷ আমরা নতুন রাজাকার সনাক্ত করি, চায়ের টেবিলে বসে হাতি ঘোড়া মেরে প্ল্যান করি, কখনো এমএসএন ক্লোজ গ্রুপে এ বসি (আমরা খুব আধুনিক) আর ঠিক করি নতুন কাকে "মুখোশ টুখোশ" খুলে দেওয়ার নাম করে রাজাকার বলে ডাকা যায়৷ - তাইলে ৭১ এর খুনীরা, বুদ্ধিজীবি হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীরা? :: আরে রাখেন৷ ওরা আমার ও আমাদের ইন্টাররাকশনের আওতায় নেই৷ নিজামীর গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ে সেইটার প্রতিবাদ আমরা কেন করবো? একটা ইয়ে বলে কথা আছে না। কিছু ইস্যু জমিয়ে রাখা সবসময়ের জন্য, অনেক কারনেই লাভজনক৷ আমি আমার সাধ্যের সাথে আপোষ করতে যাবো ক্যান? বোকা নাকি! - বুঝলাম৷ তাইলে আপনি ও আপনারা সাধ্যের মধ্যে আর কি কি করেন? : একটা উদাহরন দেই৷ বুঝতে সুবিধা হবে৷ এই যেমন মনে করেন অমুক নামের একটা ছোকরা সেইদিন মুখের উপরে বেয়াদবের মতো বলে উঠলো: 'মুক্তিযুদ্ধের ছবিরে যেইখানে সেইখানে ব্যাবহার করবেন না৷' আরে সেইদিনের ছেলে৷ ১৯৯২ এ মনে হয় স্কুলে পড়ে যখন আমরা বাংলাদেশে প্রায় আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করতে ব্যস্ত ছিলাম (গলা ঝাকানী ও কাশি)৷ সে কিনা কয় মুক্তিযুদ্ধের ছবি যেইখানে সেইখানে ব্যবহার করলে নাকি কি হয়! হি সাউন্ডস লাইক রাজাকার ইউ নো। হরিবল।

মাঝে মধ্যে ইসলাম নাইলে ধর্ম নিয়া কথা বলে। হাউ ফানি। প্রোফাইল পুরা রাজাকারের সাথে ম্যাচ। এ নিয়ে আমরা মেসেঞ্চারে বসে এনলাইসিস পর্যন্ত করেছি। বলেছিলাম না আমরা খেটে খাই।

ভাবছি ছোকরাকে রাজাকার সাব্যস্ত করার জন্য আমরা ওয়েব সাইটে হরতালে যাবো, একটা একশন না হলে জমছে না। ভাবেন। ঐ ছবিগুলা হইলো আমাদের লেখার পেইজ মেকআপ এলিমেন্ট৷ শোভা বর্ধক৷ ঐ সাদাকালো আর্কাইভ ছবি দেখেইতো প্রথমে পাবলিক আসল ইস্যু ভুলে যায়৷ ওগুলা ব্যবহার, অতি ব্যবহার, অতি অতি অতি অতি ব্যবহার আমাদের আবেগকে আরো আরো আরো আরো আরো শানিত করবে, করেছে, করতেই থাকবে, করতেই থাকবে ককককককককককককককরতেই থাকবে৷ তারপরে আমি যেদিকে ইস্যু টানি, তারাও সেইদিকে যায়৷ শেষ হয় বাহবা দিয়া৷ - অতি ব্যবহারের তো একটা বিপদ আছে এইটাতো মানবেন? : জ্বি না৷ মানবো না৷ মানার দরকার নাই৷ আপাতত আমরা মুক্তিযোদ্ধা, ব্যস৷ আমি ভাই খেটে খাই৷ - তাইলে ১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলিত অধিকার বা ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে খুব একটা লিখেন না? : লিখবো না কেন৷ অবশ্যই লিখি৷ ওগুলাতো প্রাইম আইটেম৷ হটের ভিতরে হট। বছরের বিশেষ দিনে ওই লেখা নামাই আমি ও আমার বন্ধুরা৷ মনে করে ১০টা লেখার ভিতরে একটা ফ্যাকচুয়াল লেখা নামাই৷ কাগজপত্র ঘাটতে হয়, বইপত্র পড়তে হয়৷ এত কষ্ট! তারচেয়ে আবেগের নক্সাকাটা অনেক বেশি সহজ৷ পাবলিকে খায়ও বুঝলেন৷ ঝট করে বসো, চট করে লিখে দাও৷ সঙ্গে একটা মুক্তিযুদ্ধের ধর্ষিত মায়ের ছবি, অথবা গলিত লাশ৷ ব্যস৷ ভালো কথা, আমি যে ওয়েবসাইটে লিখি সেইটার ঠিকানাটা নিয়ে যান৷ দেখবেন কেমন খায় পাবলিক৷ আমিতো রীতিমতো সুপারস্টার সেইখানে! নিন নোট করে নিন৷ ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট সামাহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট, হ্যা সামহোয়্যারইনব্লগ একটা শব্দ৷ তারপরে একটা ... >> টীকা: যখন দুই মেরুতে একদল আলট্রা রিয়েকশন্যারী, ফান্ডামেন্টালিস্ট ইসলামীস্ট, ৭১এর রাজাকারদের সরাসরি সহায়তা প্রদানকারী এবং তাদের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আরেকদিকে আলট্রা ন্যাশনালিস্টিক ব্যানারে অন্য আরেক এক্সিট্রিমিস্ট আইডিওলজী তৈরী হয় (যারা নতুন শত্রু তৈরীর জন্য নতুন শত্রুর ছায়া তৈরী করে), তখন দুই এক্সট্রিম আইডিওলজীই যে ভুল সেইটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর দরকার হয়৷ বিশেষ গোষ্ঠিবদ্ধ কলমবাজ মুক্তিযুদ্ধ লেখকেরা যখন নতুন রাজাকার তৈরী করতে গিয়ে আমার পাড়ার জুনিয়ার কাউকে (যাকে আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের একজনই দেখি) বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ২১৯ রুমের জুনিয়ার রুমমেটকে তার পলিটিক্যাল ভিউয়ের জন্য রাজাকার শিরোনামে আখ্যায়িত করে পুলকিত হয় এবং নিজেদের আরো তুখোড় থেকে তুখোড়তম মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে চায় তখন আমি সেইটার প্রতিবাদ করি৷ আমি মনে করি এই ধরনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ডিসকোর্স আর হাইপোথিসিস আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অর্জনকে আন্ডারমাইন করে, যা প্র্যাক্টিক্যালী এখনও সম্ভব তাকেও সেকেন্ডারী প্রায়োরিটিতে ঠেলে দেয়৷ >> স্টেরিওটাইপিং বাদ দিয়ে প্রায়োরিটি দেখার সময় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা অবশ্যই লেখা হবে।

যার লিখবেন তারা সন্মানিত। কিন্তু ক্যারিড এ্যাওয়ে হয়ে গিয়ে কেবলই "এই আকালে স্বপ্ন" দেখলে কবরে শোওয়া প্রণমি যোদ্ধারাও কষ্ট পান। তারা স্বপ্ন দেখেই জীবন দিয়েছ। এবার আপনারা কৃত কাজটি করুন। আবেগ আর স্বপ্নকে ছুটি দিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গার কথাটি ভাবুন।

প্রায়োরিটিগুলোকেও ইন্ট্রোস্পেকশনে আনুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।