আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: গন্দম (পর্ব ৩)

তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

৬ ফেব্রুয়ারী সময়: দুপুর ২:৪০-৩:১২ স্থান: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কথা গল্প-উপন্যাসে অনেক পড়েছে রাজীব, ইচ্ছা ছিল কলকাতায় আসলে আর যাই হোক মেমোরিয়ালটা দেখে যেতে হবে। কলকাতায় এসে বুঝেছে মেমোরিয়ালটা অনেকটা ঢাকার সংসদ ভবনের মত। বিদেশীদের কাছে দর্শনীয় আর স্থানীয়দের কাছে আড্ডা-প্রেমের জায়গা। টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে একটা টিকেট চাইলো ও। ভারতে আসার পর অবধি দেখছে এখানে সব জায়গাতেই বিদেশীদের জন্য আলাদা টিকেট-মূল্য।

মেমোরিয়ালের টিকেট বিক্রেতা অবশ্য কিছু জি্গাস না করেই রাজীবের বিশ রুপীর নোটটা নিয়ে আঠারো রুপি আর টিকেট ফেরত দিল। মুচকি হাসলো রাজীব - বিক্রেতা ও বিদেশী কিনা সেটা জিগাস করারই প্রয়োজন বোধ করেনি - স্থানীয়দের মূল্য রেখেছে! দু' রুপী কখনই বিদেশীদের মূল্য হবেনা, কম করে হলেও পনেরো রুপী। এটা মোটেই মানতে পারেনা রাজীব। মেমোরিয়াল সহ ভারতের প্রায় সব দর্শনীয় স্থানই তৈরী হয়েছে ঐ সময়টায় যখন বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান এক রাস্ট্র 'ভারতবর্ষ' হিসেবে পরিচিত ছিল। সবই তৈরী হয়েছে তৎকালীন ভারতবর্ষের নাগরীকেদের দেয়া কর দিয়ে - সে হিসেবে উপমহাদেশের সব নাগরীকদেরই কি স্থানীয় মূল্য পাবার কথা নয়? বুঝলাম এসব দর্শনীয় স্থান তদারকীতে তাদের অনেক পয়সা খরচ হয়, কিন্তু সেটা কি টিকেটের টাকা থেকে উঠে আসে না? রাজীব জানে ভারতীয়রা নিজেদের স্বার্থটা ভালোই বোঝে, যতই যুক্তি দেখানো হোক ওরা তা কখনই মেনে নেবে না।

ছোট্ট গেটটার দিকে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ বুলালো ও - একটা লেমন সোডার ভ্যান, একটা পানিপুরীর ঝাঁকা আর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-ইতিহাস পুস্তিকা হাতে কয়েকজন হকার। সংসদ ভবনের মত হকারের মেলা নেই কেন? পুলিশের তদারকী? টিকেট চেকারকে টিকেট দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল রাজীব। ভেতরে ঢুকেই মনটা ভালো হয়ে গেল - এক কথায় চমৎকার! জিনস্‌ জ্যাকেটের জিপার খুলে কলকাতার বাতাস নিল ও - একই মানুষ, একই ভাষা, একই আবেগ, তবুও বিদেশী বাতাস! দু'চোখ ভরে সাদা মার্বেল আর প্রকৃতির অবিশ্বাস্য সামঞ্জস্য ‌দেখতে দেখতে গাড়ি রাস্তা পেরিয়ে গেল ও। প্রধান ভবনে পৌছেঁ ভালো লাগাটা আরও বাড়লো। ক্যামেরা বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিল রাজীব, ভাইয়াকে ইমেইল করে পাঠাতে হবে।

সিড়ি বেয়ে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়েই বাঁধা। খাঁকী পোশাকে দারোয়ান বলল, "টিকেট দেখান। " পকেট থেকে টিকেট বের করে দিল রাজীব। এক নজর দেখেই মাথা নাড়লো দারোয়ান, "এতে হোবে না! এটা বাগানের টিকেট। ভেতরে ঢুকতে হলে আলাদ টিকেট লিতে হোবে।

" "কোথা থেকে নেব?" "বাইরের কাউন্টার থেকে। " "মানে? বাইরে গেলে তো এ টিকেটটা নষ্ট হবে। ভেতরে কোন কাউন্টার নেই?" এবার রাজীবের টোন ধরতে পারলো ঋজু দারোয়ান, এক গাল হেসে বলল, "বাইরে যেতে হোবে! আর আপনি তো বিদেশী, টিকেটের দাম বাশী লিবে। যদি কিছু বোলে তাহলে বোলবেন দিল্লি থেকে এয়েচেন। " হেসে নিচে নেমে গেল ও।

কলকাতার অনেক মানুষই বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা দূর্বোধ্য ভালোবাসা পোষণ করে, আমরাও কি করি ওদের জন্য? নিচে নেমে একটা বেনসন ধরালো রাজীব। ঢাকা থেকে এক কার্টুন এনেছে। অন্য সিগারেট ওর পোষায় না। এখন এত দূর হেঁটে বাইরে গিয়ে আরেকটা টিকেট কিনতে ইচ্ছে করছে না। এর চেয়ে সামনে যে চৌবাচ্চা টাইপ জিনিস দেখা যাচ্ছে সেখানে গিয়ে বসাটাই বেশী লোভনীয় মনে হচ্ছে।

আর ভবনের ভেতরে কি আছে কে জানে! তেমন কিছু না থাকলে ঢোকার কোন মানে নেই। কাউকে জিগাস করে দেখতে হবে। ডান দিক থেকে মিষ্টি-শ্যামলা একটা মেয়েকে মাথা নিচু করে ওর দিকেই আসতে দেখলো রাজীব। ওকেই না হয় জিগাস করা যাক। মেয়েটার দিকে হেঁটে গিয়ে জিগেস করলো রাজীব, "কিছু মনে করবেন না, একটা কথা জা..." এর পর যা ঘটলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না ও।

মেয়েটা শক্ত হাতে ওর হাতটা পাকড়াও করে অন্ধের মত ছুটে চলল। ঘটনাটা এতই আকস্মিক যে বিব্রত-বিস্মিত রাজীবেরও ওর সাথে ছোটা ছাড়া আর কোন উপায়ই রইলো না! © অমিত আহমেদ (চলবে) গন্দম - পর্ব ১ গন্দম - পর্ব ২

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.