প্রতিটি সর্যাস্তে বুক বাঁধি একটি অন্যদিনের সূর্যোদেয়র প্রত্যাশায়.......
দীক্ষক দ্রাবীরের "আরবে নবীদের জন্ম হ্রাস বনাম পাপ পূণ্যের হিসাব" শীর্ষক পোষ্ট-এর উপর কমেন্ট করতে গিয়ে এই বিশাল পোষ্টটা দাড়িয়ে গেল। আমার মনে হয় দী. দ্রাবীর গং রা কোন একটা বিশেষ বই থেকে বিতর্কিত বিষয় গুলো কোট করছেন। আমি বইটা সম্পর্কে যৎসামান্য অবগত। বলা হয়ে থাকে, একজন খুব সাধারণ শিক্ষিত মানুষ বইটা লিখেছেন। যখন বাংলাদেশে ইউনিতে ছিলাম, তখন আমার এক বন্ধু (চন্দন, একজন হিন্দু ব্রাকমণ) আমাকে ওই বইটা দিয়েছিল।
কিছুটা পড়ে আর পড়ার রুচি হয়নি। বাংলাদেশে যারা নিজেদেরকে ধর্মহীন মনে করে বা অধর্মের বাণী প্রচার করতে চান, তাদের কাছে বইটা কোরআন বা বাইবেল-এর মত।
সে যাই হোক। আলোচ্য বিষয়ে আসি। দী. দ্রাবীর সাহেবের বড় আপত্তি কেন তখন বছরে 30 জনের বেশী নবী এসেছিলেন।
আর কেনই বা শুধু আরবে নবী এলেন। আমাদের বঙ্গদেশে কেন এলেন না। কিংবা এই জাপানেই বা কেন এলেন না। আরো আপত্তি, কেন ভাই-ভাই, শশুর-জামাই, পিতা-পুত্র নবী হলেন।
আসলে কি জানেন, যারা নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী মনে করেন, যারা ধর্ম সম্পর্কে নিজের জানাটাকে সাফিসিয়েন্ট ভাবেন, ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চান, তারাই এসব বিষয়ে তর্কে লিপ্ত হয়।
এটা কোন বিতর্কের বিষয় নয়। কোরাআন আর বাইবেল থেকে আপনার কোটেশান দেখে মনে হয় (আপনি মনে করেন) আপনি অনেক বড় আলেম। বড় আলেমকে তো আমার মত সাধারণ কেউ জ্ঞান দিতে পারবে না। তবে খুব সামান্য কটা মন্তব্য করব।
আজ পর্যন্তযত মানব সভ্যতা (হিউম্যান সিভিলাইজেশান) -এর খোঁজ নৃবিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, তার মধ্যে প্রাচীনতম সভ্যতাগুলো কোথায় কোথায় ছিল আপনার জানা আছে কি? মেসোপটেমিয়া, বেবিলন এগুলো কিন্তু শুধু কোরআনেই নয়, আধুনিক নৃবিজ্ঞানীদের বড় বড় গ্রন্থেও বিশাল বিশাল চাপ্টারে স্থান পেয়েছে।
সে তুলনায় পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে মানব সভ্যতার বিকাশ অনেক পরে হয়েছে। যখন মেসোপটেমিয়া, বেবিলন সভ্যতা বিকাশের শীর্ষে, তখন আমেরিকার মায়ান সভ্যতার বানরগুলো তখনো মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। তো আল্লাহ কি এতই বেকুব (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) যে, তিনি বেবিলন বা মেসোপটেমিয়ার মানুষের কাছে নবী না পাঠিয়ে ওই আমেরিকার জঙ্গলের বানরদের কাছে পাঠাবেন?
আমরা জানি, প্রত্যেকটা জীবের জন্য ভাষা একটা বিশাল ব্যাপার। কোন কোন জীবের ক্ষেত্রে ভাষাটা কোন একটা মাধ্যমের মধ্যদিয়ে শব্দ তরঙ্গ হয়ে শ্রোতা এবং বক্তার মাঝে একটা সম্পর্ক তৈরি করে দেয় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা একটা ইলেকট্রিক সিগনাল বা আলোক সিগনাল। সেই কোষহীন ভাইরাস থেকে শুরু করে বিশালাকার তিমির ও ভাষা আছে।
তবে এই সমস্ত কিছুর চেয়ে মানুষের মুখের ভাষ সব চাইতে সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ। আবার স্থান ভেদে মানুষের ভাষার ও ভিন্নত আছে। এক ভারতেই না কি 52 টির উপরে ভাষা আছে। পৃথিবীর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত যত ভাষা আবিষ্কার হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আরবদের আরবী আর হিব্রু ভাষা সবচাইতে প্রাচীন, সমৃদ্ধ, সহচএবং শ্রোতী মধুর। সেই সময়ে আমাদের বাংলা বলেন, ইংরেজদের ইংরেজী বলেন, চাইনিজ কিংবা জাপানীজ বলেন, সবগুলোই তখন আরবীর কাছে শিশু।
কালের আবর্তে এসব ভাষার এত রুপান্তর হয়েছে যে হাজার বছর আগের অধিকাংশ শব্দই আর এখন ব্যবহৃত হয়না। এখনো মহাভারত কিংবা রামায়নের পাঠোদ্ধার করা আমাদের মত আধুনিক বাঙ্গালীদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আরবী আর হিব্রু ভাষার রুপান্তর হয়েছে খুবই সামান্য। 1400 বছর আগের আরবী ভাষা এখনো আধুনিক এবং অপরিবর্তিত। বুঝতে কোন পন্ডিতের প্রয়োজন পরে না।
যদিও বৃটিশদের 200 বছরের উপনিবেশিক শাষন আর আমেরিকার বর্তমান অর্থনৈতিক দাপটে ইংরেজী ভাষাটা সবার মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সত্য আর সুন্দরের মেসেজ সবার কাছে দ্রুত পৌছাতে তখন আল্লাহ এমন একটা ভাষার জনগোষ্ঠিকেই বেছে নিয়েছিলেন, যে জনগোষ্ঠির ভাষা এত সমৃদ্ধ আর স্টেবল।
দী. দ্রাবীরের খুব বেশী অসুবিধা যেখানে হয়েছে, সেটা হল কেন ভাই-ভাই, শশুর-জামাই, পিতা-পুত্র নবী হলেন। এটা কি কোন যৌতিক প্রশ্ন হল? অন্ততঃ আমার কাছে এই প্রশ্নের কোন যৌক্তিকতা নেই। বাবা ছেলে কিংবা জামাই শশুর দুজনই যদি একই ধরণের কাজের যোগ্য হয়, তবে কেন তারা একই সাথে একই কাজ করতে পাররেন না? কোন সংবিধানে কি এমন কোন আইন করা আছে? আমার জানা নেই।
এবার আসি দী. দ্রাবীরের অন্য একটি আপত্তির বিষয়ে। তিনি বলেছেন, কেন নবী আসা বন্ধ হয়ে গেল। তবে কি পৃথিবীতে এখন সবাই ভাল মানুষ হয়ে গেছে। মোটেও না। পৃথিবীতে এখনো ফেরাউন, নমরুদ জন্ম নিচ্ছে।
তাদের অত্যাচারে শান্তি প্রিয় মানুষগুলো ধুকে ধুকে মরছে। কোরআনের ভাষায় "....... তোমরা কি তাদের কথা শুনতে পাওনা যারা চিৎকার করে বলছে, হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে এই জালিমের জনপদ থেকে মুক্ত কর ........." (সুরা আর আয়াতের নাম্বারটা আমার মনে নেই। আয়াতের একদম পারফেক্ট অনুবাদ না ও হয়ে থাকতে পারে। তবে ভাবার্থটা এমনই)। কিন্তু তিনি আর নবী পাঠাবেন না।
কেন পাঠাবেন না, সেই কথা তিনি তাঁর শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে দিয়ে আরাফাতের ময়দানে হাজার হাজার সাহাবীর সামনে বলে দিয়েছেন "আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ওয়া আতমামতু আলাইকুম নিয়মাতি ওয়া রাদিতু লাকুম ইসলামা দ্বীনা" যার অর্থ "আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পূর্ণ করলাম, আমার রহমত (কোরআন) নাজিল শেষ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের একমাত্র পুণর্াঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে মনোনিত করলাম"। পাঠক, লক্ষ্য করুণ এই আয়াত নাযিল হওয়ার আগে কোরআন সহ আগের অন্যান্য নবীদের উপর অবতীর্ণ হওয়া ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে কিন্তু আল্লাহ এমন করে তাঁর নেয়ামত (ওহী) অবতীর্নের সমাপ্তির কথা বলেননি। কেন বলেন নি। কারণ, তখনো আল্লাহ তার দ্বীনকে পূর্ণতা দেননি। ইসলাম দ্বীন (জীবন বিধান) হিসাবে পূর্ণতা পেয়েছে আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমেই।
প্রশ্ন হতে পারে, আসলেই কি আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে ইসলাম দ্বীন (জীবন বিধান) হিসাবে পূর্ণতা পেয়েছে? কোন সন্দেহ নেই। মানুষের একদম নগন্য দৈনন্দিন কাজ কর্ম থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা, বৈদেশিক নীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা সহ জীবনের এমন কোন দিক নেই যা সম্পর্কে কোরআনে আলোচনা এবং দিক নির্দেশনা দেয়া নেই। কোরআন স্টাডি করুন, দেখবেন সমস্ত কিছু কেমন সুন্দর করে বলা আছে। কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) বলুন, মুসা (আঃ)-এর ইনি্জল বলুন, পূর্বের কোন গ্রন্থেই কিন্তু সমস্ত কিছুর আলোচনা বা দিক নির্দেশনা দেয়া নেই। যার কারনে, ইব্রাহীম (আঃ), মুসা (আঃ) ওনাদের পরেও নবী পাঠাতে হয়েছে।
কিন্তুআমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে ইসলাম দ্বীন (জীবন বিধান) হিসাবে পূর্ণতা পেল, তখনতো আর নিঃসন্দেহে আর কোন নবীর প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে না। যদি কোন মানুষ পথব্রষ্ট হয়, তবে আল্লাহর সর্বশেষ গ্রন্থ কোরআর আর সেই কোরআনের বাস্তব প্রতিবিম্ব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর সুন্নাত (যাকে আমরা হাদিস বলি) এই দুটোই যথেষ্ট।
আসলে আমরা কোন একটা বিষয়ে পজিটিভ মন নিয়ে তার গভীরে যাই না। কোন একটা বিষয়ের গভীরে যেতে চাইলে প্রথমে আমরা তার নেগেটিভ দিকগুলো দিয়ে শুরু করি। যার কারণে আমরা আলোচ্য বিষয় থেকে তেমন কোন ভাল ফলাফল পাইনা।
ধরুন, আপনি একটা ছুড়ি নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আপনি ছুড়ি দিয়ে কি কি অঘটন ঘটানো যেতে পারে বা কি কি খারাপ কাজ করা যেতে পারে সেটই জানার চেষ্টা করলেন। তাতে কিন্তু আপনি ছুড়ির ভাল ব্যাবহার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবেন না। ফলাফল কি দাড়াবে? ছুড়িকে আপনি সবার কাছে একটা খারাপ বস্তু হিসাবে উপস্থাপন করবেন। এটা আসলে মানুষ হিসাবে আমাদের দোষ নয়।
কারণ, মানুষ হিসাবে আমাদের চিন্তার পরিধি খুবই কম। তাই চিন্তা আর গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্য নিয়ে থাকি। যেমন ধরুন কম্পিউটার। আমরা একই সময়ে অনেক কিছু চিন্তা করতে পারিনা বলে আমাদের মস্তিস্ক থেকে কিছু আউটপুট ওই কম্পিউটারের ভিতর ইনপুট করে নিই। তারপর কম্পিউটার আর আমাদের মস্তিস্কের যৌথ ব্যাবহারের মাধ্যমে খুব দ্রুত একটা উন্নততর আউটপুট বা ফলাফল পাই।
সুতরাং দীক্ষক দ্রাবীর গং দের প্রতি আনুরোধ, কোন একটা ব্যাপক এবং বিশাল জিনিসকে মুল্যায়ন করার ক্ষেত্রে শুধু নিজের বা কারোর একার ছোট্র মস্তিস্কের আউটপুটকে পযর্াপ্ত মনে কররেন না। অনেকগুলো মস্তিস্কের চিন্তার আউটপুট বিবেচনায় রেখে নিজের দৃষ্টিকে আরো প্রসারিত করুন। পজিটিভ এটিচিউট নিয়ে আরো গভীর অধ্যাবসায়ে মনোনিবেশ করুন। দেখবেন সব কেমন ফকফকা হয়ে গেছে। কোথাও কোন দন্ধ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।