কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!
প্রোফেসর শঙ্কুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় সম্ভবত ক্লাস সিক্সে। সময়টা ২০০২।
তখন মাগুরায় থাকতাম। আমার এক চাচা তখন ঢাকায় চাকরি করতেন, এখন চাকরি ছেড়ে ঢাকায়ই ব্যবসা করেন। তো মাসখানেক পরপরই আমি ফোনে উনার কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করতাম – অ্যাঁ অ্যাঁ, গল্পের বই দাও, অ্যাঁ অ্যাঁ।
আদরের ভাতিজার ঘ্যানর ঘ্যানরে টিকতে না পেরে উনি প্রায়ই আমাকে ঢাকা থেকে পার্সেলে গল্পের বই পাঠিয়ে দিতেন।
তখন কেবল হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম দুটি বইয়ের অনুবাদ হয়েছে। আমার চাচা ঐ দুটি বই সহ “সেরা সত্যজিৎ” নামের সত্যজিৎ রায়ের একটা সংকলন পাঠালেন সেবার। হ্যারি পটার পড়তে গিয়ে সত্যজিতের বইতে হাত দেয়া হল না প্রথমে। পরে সুযোগ করে লাল মলাটের পুরনো বইটা হাতে তুলে কয়েকটা গল্প পড়ার পরই বুঝলাম – বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কীর্তিমানের লেখা পড়ছি আমি এখন।
ঐ বইটাতে প্রোফেসর শঙ্কুর চারটা গল্প ছিল – শঙ্কুর শনির দশা, নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো, কর্ভাস এবং মরুরহস্য। চারটাই, বিশেষ করে মরুরহস্য পড়ে আমার মাথা খারাপের মত হয়ে গেল। এত ভালো লেখা মানুষ লেখে কিভাবে! সত্যি বলছি মরুরহস্যের মত অসাধারণ গল্প এর জেনারে খুব সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে আর একটাও নেই।
ক্লাস সেভেন আর এইট ক্যাডেট কলেজে মার খেয়েই কেটে গেল। ক্লাস নাইনের প্রাক্কালে আমরা সপরিবারে মাগুরা থেকে ফরিদপুরে চলে এলাম।
পনের বিশ দিনের ছুটিতে ক্যাডেট কলেজ থেকে বাসায় এসেই আমার একমাত্র কাজ ছিল একা একা ফরিদপুরের বইয়ের দোকান খুঁজে বের করে ঢুঁ মারা। সেইভাবেই মোসলেম লাইব্রেরির সাথে পরিচয়, সেইভাবেই আনন্দ বিপণী বা পাঠক সমাবেশ সম্বন্ধে আগ্রহ। এই আনন্দ বিপণী থেকেই কেনা শঙ্কুসমগ্র, আনন্দ পাবলিশার্সের বই, দাম মাত্র ২০০ টাকা, টাকার উৎস আম্মাজানের পার্স, সময়টা ২০০৫।
তারপর এক টানে পড়ে ফেলা ৬৪৪ পৃষ্ঠা, ৩৮ টি পূর্ণ গল্প এবং ২ টি অসমাপ্ত। মনে আছে অসমাপ্ত ২ টা গল্প পড়ে খুব হতাশ হয়েছিলাম, সেই ক্লাস নাইনেই ভেবেছিলাম এই দুটো অসমাপ্ত গল্প আমিই শেষ করব লিখে, কিন্তু পরে হাত গুটিয়ে নিয়েছি এই ভেবে যে শঙ্কুর মত অসামান্য চরিত্রে কালি তুলির আঁচড় শুধু তার লেখককেই মানায়, পৃথিবীর আর যে কেউ লিখলেই এই চরিত্রে ধ্বস নামতে বাধ্য।
সেই ছুটিতে প্রথম পড়া, তার পরের ছুটিতে আবার পড়া। তারপর এতকাল বইটা বাসায় পড়েই ছিল, কত দিন কত সময় কত মিনিট সেকেন্ড কেটে গেল কত লোককে জোরগলায় বললাম বাংলা ভাষায় সত্যজিতই আমার প্রিয় লেখক শঙ্কু আমার অন্যতম প্রিয় চরিত্র ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু গল্পগুলো আর নতুন করে পড়া হল না। সেই খায়েশ মিটল এতদিন পর। মেডিকেল লাইফের ত্রাস সেকেন্ড প্রফ দীর্ঘ সাতষট্টি দিন ধরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নাড়িয়ে চাড়িয়ে চিবিয়ে চুষে ছারখার করে অর্ধেক জীবনীশক্তি নিয়ে বিতাড়িত হলেন, আর সেই ফাঁকে বাসায় এসে আমি আবার মত্ত হলাম শঙ্কুবিলাসে।
এবার শঙ্কু প্রসঙ্গে আসি।
কে এই শঙ্কু? শঙ্কু একজন বাঙালি বৈজ্ঞানিক। আবিষ্কারক। “স্বর্ণপর্ণী” গল্পে শঙ্কু বলছেন – “সাফল্যের স্বাদ আমি পেয়েছি আমার জীবনে তাতে সন্দেহ নেই। কোন ভারতীয় বিজ্ঞানী দেশেবিদেশে এত সম্মান পেয়েছে বলে তো মনে হয় না। আমার খ্যাতি প্রধানত ইনভেন্টর বা আবিষ্কারক হিসাবে।
এ ব্যাপারে টমাস আলভা এডিসনের পরেই যে আমার স্থান, সেটা পাঁচটা মহাদেশেই স্বীকৃত হয়েছে...”
কি এমন আবিষ্কার করেছেন শঙ্কু? তার আবিষ্কারগুলোর একটা তালিকা পরিচিতিসহ নিচে দেয়া হল...
মিরাকিউরল = সর্বরোগনাশক বড়ি। সকল প্রকার বিষক্রিয়া ও অসুস্থতাকে অল্প সময়েই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এই বড়ি খেয়ে। এতে ২৭৭ রকমের ব্যারাম সারে।
অ্যানাইহিলিন পিস্তল = এই পিস্তল কোন জ্যান্ত মানুষ বা প্রাণীর দিকে তাক করে কিছুক্ষণ টিপে রাখলে সে বিনা রক্তপাতে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এক টুকরো ছাইও আর পাওয়া যাবে না তার।
এয়ারকন্ডিশনিং পিল = জিহ্বার তলায় এই পিল রাখলে শরীর শীতকালে গরম থাকবে এবং গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা থাকবে।
রিমেমব্রেন = লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারে এই যন্ত্র।
সমনোলিন = ঘুমের অব্যর্থ বড়ি।
লুমিনিম্যাক্স = অতি সস্তায় উজ্জ্বল আলো দেয়া বস্তু।
লিঙ্গুয়াগ্রাফ = অচেনা ভাষা ইংরেজিতে অনুবাদ করার যন্ত্র।
অর্নিথন = পাখিকে শিক্ষা দেবার যন্ত্র।
নার্ভিগার = স্নায়ু সজাগ রাখবার ঔষধ।
সেরিব্রিলান্ট = মাথা পরিষ্কার ও অনুভূতি সতেজ রাখার ঔষধ।
অমনিস্কোপ = বিশেষ ধরণের চশমা যেটাকে মাইক্রোস্কোপ, টেলিস্কোপ অথবা এক্সরেস্কোপ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
স্নাফগান/নস্যাস্ত্র = এই বন্দুক কারো নাকের নিচে ধরে ট্রিগার টিপে দিলে সে হাঁচতেই থাকবে।
ম্যাঙ্গোরেঞ্জ = আম ও কমলার শঙ্কর। “আমলা”।
নিও-স্পেকট্রোস্কোপ = যে যন্ত্রের সাহায্যে ভুত নামানো যায়, ভুতের সাথে কথা বলা যায়।
শ্যাঙ্কোভাইট = ওজনহীন ধাতু, যেটাকে শূন্যে ছেঁড়ে দিলে সেটা শূন্যেই রয়ে যাবে।
ক্যামেরাপিড = দ্রুত ছবি তোলার ক্যামেরা।
এভলিউটিন = যে ওষুধ খুব কম সময়ে কাউকে বিবর্তনের ধারায় অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকে রূপান্তরিত করে।
মাইক্রোসনোগ্রাফ = প্রকৃতির সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শব্দ, যা মানুষের কানে আজ অবধি কখনও শোনা যায়নি এমনকী যার অনেক শব্দের অস্তিত্বই মানুষে জানত না – সেই সব শব্দ এই যন্ত্রের সাহায্যে পরিষ্কার শোনা যায়।
এবার আসুন জানি শঙ্কুর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে। শঙ্কুর পুরো নাম ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। তার বাবার নাম ছিল ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু।
তিনি বিহারের গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুর্বেদিক মতের চিকিৎসক ছিলেন।
“স্বর্ণপর্ণী” গল্পে শঙ্কু বলছেন – “আমি গিরিডির ইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলকাতায় যাই কলেজে পড়তে। আমি নিজেই বলছি, ছাত্র হিসাবে আমি ছিলাম যাকে বলে ব্রিলিয়ান্ট। শুধু যে জীবনে কোনওদিন সেকেন্ড হইনি তা নয়, এত কম বয়সে বিদ্যায় বুদ্ধিতে এতটা অগ্রসর হবার উদাহরণও বিরল। বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করি; চোদ্দোয় আইএসসি, আর ষোলোয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে ভালো অনার্স নিয়ে বি.এস-সি...
...বিশ বছর বয়সে কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে আমি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকের কাজ পাই।
যাদের পড়াতাম তাদের বেশ কয়েকজন আমারই বয়সী। এমনকী, দু-একজনের বয়স আমার চেয়ে বেশি...”
নিজের চেহারা ও বয়স সম্বন্ধে শঙ্কু “স্বপ্নদ্বীপ” গল্পে বলছেন – “তেরো বছর বয়সে আমার মাথায় প্রথম পাকা চুল দেখা দেয়। সতেরো বছরে টাক পড়তে শুরু করে। একুশে পড়তে না পড়তে আমার মাথা-জোড়া টাক—কেবল কানের দুপাশে, ঘাড়ের কাছটায় আর ব্রহ্মতালুর জায়গায় সামান্য কয়েকগাছা পাকা চুল। অর্থাৎ আজও আমার যা চেহারা, পঁয়তাল্লিশ বছর আগেও ছিল ঠিক তাই”।
শঙ্কুকে সত্যজিৎ প্রথম মানুষের চোখের সামনে আনেন ১৯৬১ সালে, সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত “ব্যোমযাত্রীর ডায়রি” গল্পের মাধ্যমে। প্রথম দিন থেকেই শঙ্কু ছেলেবুড়ো সবার মন জয় করে নেয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয় শঙ্কুর গল্পগুলো, এই ত্রিশ বছরে শঙ্কু মাতিয়ে রাখে দুই বাংলার অজস্র সাহিত্যপ্রেমী বাঙ্গালীকে।
শঙ্কুসমগ্রের ভূমিকায় বলা আছে – “এই বৈজ্ঞানিক ও আবিষ্কারক মানুষটি খাঁটি বাঙালি। ভয়ঙ্কর অভিযানে তিনি অকুতোভয়, অথচ আত্মভোলা।
আবার আশ্চর্য সংযমী। তার কর্মক্ষেত্র কলকাতা হলেও গবেষণাক্ষেত্র বিহারের গিরিডিতে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীমহলে তিনি সসম্মানে গৃহীত হয়েছেন। তাঁর আত্মপ্রত্যয় ও বিচিত্র উদ্ভাবনী প্রতিভা বিস্ময়কর।
শঙ্কুর জগতে প্রাকৃত ও অতিপ্রাকৃতের দারুণ সহাবস্থান।
গবেষণা ও আবিষ্কারের সূত্রে শঙ্কু বিশ্বভ্রমণ করেছেন। তিনি “সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স” কর্তৃক সম্মানিত, সাউ পাউলোর বিখ্যাত রাটানটান ইন্সটিটিউট কর্তৃক “ডক্টরেট” সম্মানে ভূষিত।
শঙ্কুর কাহিনীগুলো শুধু সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান কাহিনী বললে সবটুকু বলা হয় না। কল্পবিজ্ঞান তো অবশ্যই, একই সঙ্গে এই কাহিনীগুলোতে মিশে আছে ভ্রমণ, রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চার রস। আবার দুরন্ত অভিযান, অতীন্দ্রিয় পরিপার্শ্ব, ফ্যান্টাসি ও রোমাঞ্চের মিশ্রণে গল্পগুলি জমজমাট।
শঙ্কুকাহিনীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, এই কাহিনীগুলির জগতে ঢুকে ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল পাঠক যেন একবয়সী হয়ে ওঠে”।
প্রিয় পাঠক, এবার চলুন প্রতিটা গল্পের ভিতর থেকে একটু ঘুরে আসা যাক।
১/ ব্যোমযাত্রীর ডায়রি (সন্দেশ। আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ১৩৬৮) – প্রফেসর শঙ্কুর আশ্চর্য ডায়রি ঘটনাপরম্পরায় পত্রিকার সম্পাদকের হাতে আসে। সে ডায়রিতে শঙ্কুর মঙ্গলগ্রহ অভিযানের রোমহর্ষক কাহিনী লেখা।
মঙ্গল হতে পালিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রফেসর শঙ্কু সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন অজানা গ্রহ টাফায়, যেখানে সভ্যতা মানুষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। প্রফেসর শঙ্কু তাদেরকে বিজ্ঞানের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই তারা বলে – “ও সব বিজ্ঞানটিজ্ঞান দিয়ে আর কী হবে? যেমন আছেন থাকুন না। আমরা মাঝে মাঝে আপনার কাছে আসব। আপনার সহজ সরল কথাবার্তা শুনতে আমাদের ভারী ভালো লাগে”।
২/ প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক (সন্দেশ।
বৈশাখ ১৩৭০) – মিশর হতে চার হাজার বছর পুরনো মমি নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে শঙ্কুর গিরিডি প্রত্যাবর্তন। রহস্যময় মিশরীয় যুবকের দাবী – মমিটা তারই পূর্বপুরুষের। মমি নিয়ে শঙ্কু ও যুবকের মধ্যে হাতাহাতি। শঙ্কুর বেড়াল নিউটনের আঁচড়ে যুবক মৃত, ঠিক যেভাবে চার হাজার বছর আগে নেফদৎ দেবীর (যার অবতার ছিল বেড়াল) অবমাননা করার দায়ে মারা গিয়েছিল রহস্যময় যুবকের পূর্বপুরুষ, যার মমি নিয়ে এত কাণ্ড সেই মানুষটি!
৩/ প্রোফেসর শঙ্কু ও হাড় (সন্দেশ। পৌষ ১৩৭০) – রহস্যময় সাধুর আবির্ভাব।
সেই সাধু মরা প্রাণীর কঙ্কালকে জীবিত প্রাণীতে রূপান্তরিত করতে পারেন। তার জীবনসঞ্জীবনী মন্ত্র গোপনে রেকর্ড করার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান শঙ্কু। সাধু শঙ্কুর উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য জ্যান্ত করে তোলেন বহু পুরনো এক ভয়ানক ডাইনোসরকে। অথচ উদ্ভিদভোজী ক্ষুধার্ত ডাইনোসর শঙ্কুর দিকে না তাকিয়ে সোজা সাধু সে গাছে ঝুলে আছেন সেই গাছের উপর হামলে পড়ে উদরপূর্তি করার জন্য। সাধুর ক্রোধের বলি হন সাধু নিজেই।
৪/ প্রোফেসর শঙ্কু ও ম্যাকাও (সন্দেশ। শারদীয়া ১৩৭১) – অদৃশ্য হবার ওষুধ আবিষ্কার করেন শঙ্কু। আশ্চর্য শক্তিশালী স্মৃতিশক্তির অধিকারী এক ম্যাকাও পাখির সাহায্যে সেই ওষুধের ফরমুলা হাতিয়ে নেন শয়তান বিজ্ঞানী গজানন তরফদার। নিজের কাজ মিটে গেলে ম্যাকাওটাকেই খতম করতে যান গজানন, যার ফলশ্রুতিতে ম্যাকাও নিজেই অদৃশ্য হবার ওষুধ গিলে অদৃশ্য হয়ে তার উপর প্রতিশোধ নেয়।
৫/ প্রোফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল (সন্দেশ।
ফাল্গুন ১৩৭১) – গ্রেগর লিন্ডকুইস্ট। নরওয়েজিয়ান শিল্পী। তিনি বিখ্যাত মানুষদের অবিকল অনুকরণে ক্ষুদ্র পুতুল তৈরি করেন। আশ্চর্য, অবিশ্বাস্য ডিটেইলিং সেইসব পুতুলের শরীরে। শঙ্কু লিন্ডকুইস্টের বাসায় আমন্ত্রিত হন।
এবং এক পর্যায়ে জানতে পারেন, এসব পুতুল আদৌ পুতুল নয়, বরং আসল মানুষকে সাইজে ছোট করবার ভয়ঙ্কর ওষুধ খাইয়ে এত ছোট করে পুতুল বানিয়ে নিজের সংগ্রহে রাখছে সাইকো লিন্ডকুইস্ট। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। শঙ্কু নিজেও হয়ে গেছেন ছ’ ইঞ্চি সাইজের পুতুল। তারপর...
৬/ প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক রহস্য (সন্দেশ। বৈশাখ ১৩৭২) – আশ্চর্য এক গোলক এসে পড়ে শঙ্কুর হাতে।
গোলক ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়, গোলকের উপস্থিতিতে মারা যায় ঘরের কীটপতঙ্গ। শঙ্কু তার মাইক্রোসনোগ্রাফ দিয়ে যোগাযোগ করেন গোলকে বসবাসকারী আশ্চর্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীর সাথে, জানা যায়, এটা আদৌ সাধারণ কোন গোলক নয়, বরং এটা সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ “টেরাটম”। টেরাটমের অধিবাসীরা শঙ্কুর কাছে প্রার্থনা করে গোলকের উপর থেকে কাঁচের ঢাকনা সরিয়ে দেবার জন্য, কারণ এটার কারণে তারা জীবনসঞ্জীবনী অক্সিজেন পাচ্ছে না। এটা না সরালে পুরো একটা গ্রহ সৌরজগৎ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, আর সেটার দায় সারা জীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে শঙ্কুকেই। অথচ শঙ্কু জানেন, এরা ভাইরাসের মত, সমস্ত পৃথিবীকে এরা তিন মাসের মধ্যে জনশূন্য করে দেবার ক্ষমতা রাখে।
এখন কি করবেন শঙ্কু?
৭/ প্রোফেসর শঙ্কু ও চী-চিং (সন্দেশ। শারদীয়া ১৩৭২) – বিখ্যাত জাদুকর চী-চিং ম্যাজিক দেখাবার অনুষ্ঠানে শঙ্কুকে সম্মোহিত করতে না পেরে চরমভাবে অপমানিত হলেন। সেই অপমানের প্রতিশোধ নেয়া হল কয়েক বছর পর। চী-চিং এর আশ্চর্য সম্মোহনে শঙ্কু দেখলেন তার বাড়ির সাধারণ একটা টিকটিকি আস্তে আস্তে আয়তনে বড় হয়ে উঠছে, আরও বড় এবং ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সে, এবং শঙ্কুর ল্যাবরেটরির সবচেয়ে ভয়াবহ অ্যাসিড ঢকঢক করে খেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে শঙ্কুর ল্যাবরেটরি প্রচণ্ড আক্রোশে ভাংচুর করা শুরু করেছে সে। অথচ আসলে...
৮/ প্রোফেসর শঙ্কু ও খোকা (সন্দেশ।
আষাঢ় ১৩৭৪) – সাধারণ এক বালক মাথায় আঘাত পেয়ে হঠাৎই হয়ে উঠল রহস্যময় এক মানুষ, এমন মানুষ যে তার জ্ঞানের কোন সীমা পরিসীমা নেই। খোকাকে নিয়ে জমে উঠল নাটক, খোকাকে নিয়ে হয়ে গেল স্টেজ পারফরম্যান্সের জল্পনা কল্পনা। খোকা গোপনে শঙ্কুর ল্যাবরেটরিতে ঢুকে ভয়াবহ সব অ্যাসিডের মিক্সচার তৈরি করে ঢকঢক করে গলাধঃকরণ করল, এবং তারপর গল্পটি শেষ হল এভাবে – “আধ ঘণ্টা হল খোকাকে ঝাঝায় তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছি। ঝাঝা যাবার পথে গাড়িতেই খোকার সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল। যখন চলে আসছি, তখন সে তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়িয়ে বলল, ‘আমায় লজঞ্চুস এনে দেবে দাদু, লজঞ্চুস?’
আমি বললাম, ‘নিশ্চয়ই দেব।
কালই আবার গিরিডি থেকে এসে তোমায় লজঞ্চুস দিয়ে যাব’।
মনে মনে বললাম, ‘খোকাবাবু, একদিন আগে হলেও তুমি আর লজঞ্চুস চাইতে না – তুমি চাইতে দাঁতভাঙ্গা ল্যাটিন নাম-ওয়ালা কোনও এক বিচিত্র, বিজাতীয় বস্তু’। ”
৯/ প্রোফেসর শঙ্কু ও ভূত (শারদীয়া আশ্চর্য। ১৯৬৬) – নিওস্পেকট্রোস্কোপের সাহায্যে মৃত মানুষের প্রেতাত্মার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন শঙ্কু। এদিকে একাধিক মানুষ তাকে দেখতে পাচ্ছে নদীর ধারে, আমবাগানে, অথচ শঙ্কু সেটা স্বীকার করছেন না, কারণ তিনি সেখানে যান-ই নি।
অবশেষে শঙ্কু বুঝলেন, এ আসলে তারই...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।