স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।
অনেকদিন পর হঠাৎ নীলক্ষেতের কথা মনে হলো। নীলক্ষেতের সাথে আমার পরিচয় 1997 সালের শেষের দিকে। আর আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় আমার বন্ধু হয়রান।
হয়রানের আসল নাম ছিল রায়হান। কিন্তু তার হয়রানীমূলক কর্মকান্ডের জন্য কিছুদিনের মাঝেই কলেজের বন্ধুমহলে আমার দেয়া হয়রান নামটা পপুলারিটি পেয়ে রায়হানের সহায়ী নামে পরিণত হয়।
তখন ডিমান্ড ছিল সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা, কিশোর ক্লাসিক, তিন গোয়েন্দা আর ওয়েস্টার্ন বইগুলোর। এরমধ্যে মাসুদ রানা আবার বাসায় আইনত নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ যেকোন কাজেই আনন্দ ও এ্যাডভেঞ্চার থাকে প্রচুর।
তাই মাসুদ রানার উপর ছিল দুর্দ্মনীয় আকর্ষণ কারন পড়তে হতো চুরি করে। বলাইবাহুল্য চুরি করে পড়ার সেরা টেকনিক ছিল পাঠ্য বই খুলে তার মাঝে মাসুদ রানার বই রেখে পড়াশুনার ভাণ করা। আরও ছিল টেবিলের ড্রয়ারে রেখে পড়া। আর বাবা-মার উপসিহতি টের পেলেই দমাদম ড্রয়ার বন্ধ করা। তবে যখন কোনটাই কাজ করত না, তখন শেষ ও সবচেয়ে কার্যকরী উপায় ছিল টয়লেটের দরজা বন্ধ করে মাসুদ রানার কিচ্ছা পড়া।
মাসুদ রানাকে কেজিবি ধরে নিয়ে গিয়ে পিটুনি দিচ্ছে আর আমি তাকে উদ্ধার না করে অংক-বিজ্ঞান পড়ছি, একথা আমি কখনই চিন্তা করতে পারতাম না।
ধরা যে পড়িনি তা নয়। তবে পড়েছি অনেক দেরিতে। কলেজের দ্্বিতীয় বর্ষের শেষভাগে এসে যখন ধরা খেলাম, তখন আমার পিতৃদেব চিন্তা-ভাবনা করে বললেন, মসুদ রানা পড়ার মতো বয়স আমার হয়েছে, আমি মাসুদ রানা পড়তে পারি তবে তা অবশ্যই পড়ার সময় বাদে। হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম ওইদিন।
আমি চড়-থাপ্পড়ের বৃষ্টি আশা করলেও সৌভাগ্যবশত সেদিন তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি।
যাইহোক মাসুদ রানার বইয়ের বিশাল সংগ্রহ ছিল নীলক্ষেতে। হয়রানের সাথে যেতাম বই কিনতে। হয়রান দেখতে হাবুমাকর্া হলেও ছিল বিশাল চাল্লু চিড়িয়া। হকার গুলোকে ব্যস্ত রাখত এটা চাই,ওটা কই,দ্্বিতীয় পর্ব কোথায় বলে।
আর অন্যদিকে ব্যাগের মধ্যে চালান দিত একের পর এক বই। হয়রান 10টা বই কিনলে 6টা নিত ফাউ। পরের দিকে অবশ্য ওর এই চুরির প্রবণতা কমে গিয়েছিল। কিনতু কথায় আছে না ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাণে। তাই ঐ স্বভাব ও পরিপূর্ণভাবে কখনই ত্যাগ করতে পারে নি।
এ ব্যাপারে হয়রানের ছিল হয়রানি যুক্তি। সে বলত মার্ক টোয়াইন অন্যের বই চুরি করে পড়লে দোষ হয় না, ওর কেন দোষ হবে। অকাট্য যুক্তি, এর বিরুদ্ধে তাই আমরা কখনই কথা বলিনি। তবে স্বীকার করতে দ্্বিধা নেই চুরির মাল হোক বা পয়সা দিয়ে কেনা বই হোক, পড়ার সময় কম রোমাঞ্চকর লাগত না কোনটাই।
সোনালী দিনগুলো এখন আর নেই।
মাসুদ রানাও পড়া হয় না আজকাল। তবে স্মৃতিতে রয়ে যাওয়া দিনগুলোর কথা ভাবতে ভালোই লাগে। কারন আমি বিশ্বাস করি সে সময়টা ছিল আমার জীবনের সেরা সময়, যা কখনই আর ফিরে পাব না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।