আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাস আসলেই কান্দে...ধর্ম আর সাম্রাজ্যবাদ যখন একথালাতে খাওন খায়...

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

ইতিহাস কেন কাঁদে? আমার বন্ধু পল্লব হঠাৎ হঠাৎ এই প্রশ্ন করতো, কারে করতো সেইটা আমরা ধরতে পারতাম না বইলা তারে পাগল ঠাউরাইতাম, অহেতুক নিজের সাথে যারা কথা কয় তাগো তো আমরা ঠিক স্বাভাবিক মানুষ কইতে পারি না। তারা সামাজিক নয়...তারা অসুস্থ...তাগো সাথে সঙ্গটাও আমরা ঠিক উপভোগ করি না। কিন্তু এতোকাল পর হঠাৎ পল্লবের এই প্রশ্ন আমার স্মৃতিতে নাড়া খাইলো, আমি কেরম উদ্্বেলিত হইলাম, অতীতের সুখময়তা আসলে এখন আমারে কাঁদায়... সময়টা ছিলো 1991 সাল আমরা তখন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আড্ডা দেই। কলেজ পাশ দিছি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিমু, তার আগে কার কি পড়নের সাধ তা'ই নিয়া চাপাবাজি, তুমুল! অনেক ভিন্নতা ছিলো আমাগো ব্যাচ 'কচি আতেলদের আসর'-এ, কেউ ডাক্তার হইতে চাইছে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক, কেউ বাউন্ডুলে...কিন্তু একটা বিষয়ে আমাগো ব্যাচে অদ্ভুত মিল ছিলো, আমরা রাজনীতি নিয়া সুনির্দিষ্ট ভাবনা ভাবতাম, আজকাইলকার পোলাপাইনের মতো রাজনৈতিক ঔদাসীন্য আমাগো ছিলো না একবিন্দুও। দেশের রাজনৈতিক দল বইলা তখনো আমরা আশা হারাই নাই বিএনপি, আওয়ামি লীগের গণতান্ত্রিক বিনির্মাণের র স্বপ্নে, সোভিয়েত বিপর্যয়ের পরেও আমরা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে আস্থাশীল ছিলাম।

তাই আমাগো অধিকাংশ বন্ধু বান্ধবই রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আকাঙ্খা লালন করতেছিলো প্রাণে। এমন সময়েই ইরাক দখল করলো কুয়েত! আমাগো বুঝ হওনের পর থেইকা আসলে এইরম দেশ দখলের কোন ঘটনা ঘটে নাই। বরং দেখছি স্বাধীনতার আন্দোলনে বিদ্রোহ, শুনছি মুক্তির আকাঙ্খায় থাকা মানুষের স্বপ্নের গল্প, এইরম কালে দেশ দখলের পায়তারা! তয় দেশ দখলের লেইগা যেই কইলজার জোর লাগে তা বাপের বেটা সাদ্দামের আছিলো...তার পেছনে তখন পৃথিবী প্রায় একক ক্ষমতাধর কর্পোরেট রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । মার্কিনীরা সোভিয়েত বিপর্যয়ের অপারেশনে ছিলো পুরাপুরি সফল, এখন তারা যা ইচ্ছা তা'ই করবো এইটা সকলেই জানতো। মহল্লার টং চায়ের দোকান দার আবুলভাইও জিগায়," কমুনিস্টরা নাকি আর নাই ভাস্কর ভাই?...তাইলে তো এখন আমেরিকা সারা পৃথিবীটাই দখল কইরা লইবো! দেইখেন মুসলমানেগো ধরবো সবাইর আগে।

" কিন্তু সেই আমেরিকানরা তাগো পেয়ারের সাদ্দামরে দিয়া দখল করাইলো আরেক মুসলিম দেশ কুয়েতের পবিত্র মাটি!? যাই হোক সেইবার জাতি সংঘ ঢুকলো তার নেতৃত্বে মার্কিনীরাও ছিলো...আমরা হঠাৎ সন্দেহপ্রবণ হইলাম। কি হইলো! এতোকালতো ইসলামী মৌলবাদী শক্তিরা আমেরিকানগো পেয়ারে বান্দা আছিলো। আফগানিস্তানে নজীবুল্লাহ বিরোধী আন্দোলনে তালেবানগো অস্ত আর যুদ্ধের টাকা জোগাইছে তারাই! এমন কি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ইসরায়েলরেও তারাই টাকা আর প্রযুক্তিগত সাহায্য দিছে চিরকাল...সেই আমেরিকা এখন আবার নতুন বিরোধী পক্ষ পাওনের খেলা খেলতাছে? তখন আমরা মাত্র একটা প্রকাশনা করনের পরিকল্পণা করতেছি যুদ্ধ যুগে যুগে...সকল যুদ্ধের ইতিহাসেই আমরা দেখতেছিলাম শাসক শ্রেণী ধর্ম আর অতিন্দ্রীয় শক্তির দোহাইয়ে যুদ্ধে প্রণোদনা জোগাইতো সকল সৈনিকগো। ধর্মরে ব্যবহার কইরা দেশ দখলের পায়তারা বহুত পুরানা ইতিহাস...এমনকি ক্রুসেড যুদ্ধের মতো বড় যুদ্ধ'ও তার ক্ষমতার টানাটানির চরিত্ররে ছাপাইয়া যাইতে পারে না। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি উপনিবেশে গিয়া প্রথম যেই কাজ করে সেইটা হইলো ধর্মপ্রচার তারপর বাকী সব পরিবর্তন।

আর 2য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে আমেরিকানরা যখন আরেকটা মহামন্দার সম্ভাবণা নিয়া দিন গুজরাণ করতাছে ঐরম একটা সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার সামনে হুমকীর মতো আওতা বাড়ানের লক্ষ্য হাসিল করতাছে। মার্কিনীরা এইরম টাইমে সমাজতান্ত্রিক শত্রুর সবচেয়ে বড় দূর্বলতা খুঁইজা বাইর করলো। আর তা হইলো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আর যাই হোক না হোক ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষণা হয় না, তার মানে যোগাযোগ করতে হইবো সকল ধর্মীয় ক্ষমতালোভীগো লগে। যেই ভাবা, সেই কাজ! 70 দশক থেইকা এই প্ল্যান বাস্তবায়ন শুরু হইলো পুরামাত্রায়। ইসরায়েল ক্ষমতাধর হইয়া দাঁড়াইলো, তার বিপরীতে যারা ইসলামিক তারাও অস্ত্র আর প্রাযুক্তিক সহযোগিতা পাইতে শুরু করলো...তয় যারা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে দাঁড়াইতে চাইলো আরব দেশ হইয়া...তারা কিন্তু আমেরিকার নেক নজর থেইকা বহুত দূর সইরা গেলো।

মিশরের গামাল আব্দুল নাসির পরলো বিপদে। আমেরিকানরা তো প্রয়োগবাদী, তাগো চরিত্রমতো তারা চলছে, কিন্তু ইসলামী শক্তিরা কি করছে? আমেরিকানগো মিত্র হিসাবে কেমনে তারা বাইছা নিছে! মুসলিমগো কি এইরম বিধান আছে? তারা কি মার্কিনীগো সাথে গাটছড়া বান্ধনের যৌক্তিকতা নিয়া হাদীস খুঁইজা পাইছে? আসলে পুরাটাই ক্ষমতার খেলা! ধর্ম ব্যবহার কইরা মানুষরে দাবাইয়া রাখনের কিচ্ছা বহুত যুগ আগের থেইকাই মানবসমাজে চলে, সেই দাস যুগেও দাস প্রভূগো সবচেয়ে কাছের মানুষ হইতো পুরোহিতেরা, সামন্তপ্রভূরা আর সবাইরে তুচ্ছাতি তুচ্ছ দৃষ্টিতে এড়াইয়া গেলেও ধর্মীয় গোষ্ঠীরে পুইছাই চলছে চিরটাকাল, আর বুর্জোয়া-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি এই অভিজ্ঞতা থেইকাই ধর্মকেন্দ্রীক রাজনৈতি গোষ্ঠীরে হাতে রাখছে সবসময়। মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিরে দিয়া তার নিজের শত্রুরে প্রতিরোধ করনের পথ খোলা রাখছে। ধর্মকেন্দ্রীক চিন্তাতেও যেহেতু শ্রেণী বিরোধী কোন প্রয়াশ নাই আর তাই সেইখানেও থাকে বড়লোকী স্বপ্ন, ধর্ম ব্যবহারের মধ্য দিয়া সহজে আরো বড়লোক হওনের ধান্ধা! ক্ষমতায় যাওনের পথ মসৃণ করনের কৌশল হিসাবে ধর্ম এখনো কার্যকরী রইয়া গেছে। পুরা 60 আর 70 দশক জুইড়া বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি তাগো হাত প্রসারিত কইরা রাখছে দেশে দেশে মৌলবাদী শক্তির সম্প্রসারণের পথ উন্মুক্ত করতে, তার সুবিধাতে বাড়ছে ধর্ম ব্যবহার কারী শক্তি...যারা আসলে ক্ষমতালোভী একদল প্ররোচনাকারী! যাইহোক পোস্টের শুরুর কাহিনীতে ফিরা যাই...পল্লব বন্ধু প্রশ্ন করতো ইতিহাস কেন কাঁদে? তখন এর মর্তবা বুঝি নাই বহুত হাসাহাসি করছি।

এখন বুঝছি ইতিহাস আসলেই কান্দে, কারণ ইতিহাস মনে রাখতে চায় না কেউ...কিন্তু ইতিহাস ফিরা ফিরা আসে...ফিরা আসে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.