যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে
আগের বাড়িটা পালেট নতুন বাসায় আসতে হলো কারন কনট্রাক্টের টার্ম শেষ। ইদানিং সিংহপুরে বাড়ির দাম বাড়ছে, ফলে বাড়িওয়ালারা পুরনো ভাড়াটের সাথে নতুন চুক্তি না করে নতুন ভাড়াটেদের বেশি দামে ভাড়া দিতেই আগ্রহী।
খুব ব্যস্ততা, নতুন বাসা খুজে না পাওয়া অন্যদিকে বাসা ছাড়ার সময় আগত - সব মিলিয়ে একেবারে রাস্তায় থাকার মতো অবস্থার শেষ মুহুর্তে পরিচিত এক হাউজিং এজেন্ট বাসার খোঁজ দিলো। হাউজিং ডেভলপমেন্ট বোর্ড বা এইচডিবি বলে পরিচিত কলোনীর মতো বাসাগুলো সিংহপুরের নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের মাথা গোজার মূল ঠাই। বিদেশী ছাত্রদের মধ্যেও এ ধরনের বাসাগুলো বেশি জনপ্রিয়, কারন ভাড়া তুলনামূলক কম।
বাসার ক্রাইসিসে একজন বাসার এজেন্টের জায়গায় দুইজন মিলেঝিলে খোজ পেয়েছে একটা বাসার। আমার দরকার ছিলো নিজের জন্য একটা ঘর। এজেন্টের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করে হাজির হলাম বাসা দেখতে। বাড়ি ওয়ালা চাইনীজ। নিজের এক পনের ষোল বছরের ছেলে নিয়ে থাকে।
বউ থাকে মূল চীনে, ছুটি ছাটায় বেড়াতে আসে। বেশ ঝামেলা বিহীন অবস্থা।
বাড়িওয়ালা মানুষটা জব্বর ভদ্রলোক। খোদার কৃপায় কপালটা বরাবরই ভালা। বাসাটা ভালোই।
ঘরটাও বড় সড় । তবে রান্নাবান্না করা একটা ঝক্কি। ট্রাডিশনালি চাইনীজরা বিশেষ করে সিংগপুরের চাইনীজ (এবং মালে) জাতিরা বাইরেই খায়। ব্যস্ত লাইফস্টাইলের কারনে কেউই বাসায় রান্না বান্না করে না। ফলে আমি রান্না বান্না করবো কি না এইটা নিয়া বাড়ি ওয়ালা প্রথমে সংকিত ছিলো।
গ্যাসের বিল বেড়ে যাবে, রান্নাঘর নোংরা হবে ইত্যাদি ভয়। আশ্বস্ত করি আমি কেবল উইক এন্ডে হয়তো কিছু রান্না করবো, তার বেশি না। সকালে পাউরুটি সেকে নেওয়া বা ডিম ভাজাই আমার চুলা/ টোস্টর ব্যবহারের শুরু ও শেষ। আমি নিজেও অনেকটা সিংহপুরিয়ান হয়ে গেছি। দুপুরে ইউনির ক্যান্টিনে খাই, সন্ধ্যার মুখে ছয়টা সাতটায় রাতের খাবার সেরে ফেলি।
এ পর্যন্ত সব ভালো। বাড়ি ওয়ালা এতটাই ভালো যে একদিন বাসায় ফিরে দেখি আমার ঘর থেকে ঝাড়ু হাতে লাজুক মুখে বেরিয়ে চাইনীজ উচ্চারনে অদ্ভুত ইংরেজীতে বলছে তোমার ঘরটা ঝাড়ু দিয়ে দিলাম। আমিতো মহা খুশি। থ্যাংকস থ্যাংকস। হাউজ কিপিংয়ে যে আইলসামী আমার!! আরেকদিন ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে চলে গিয়েছিলাম।
রাতে ফিরে দেখি সুন্দর করে দড়িতে টানিয়ে রেখেছে ক্লিপ দিয়ে দিয়ে।
নাহ, এই লোকটা বাড়াবাড়ি রকমের ভালো মানুষ।
ভালো কথা, নতুন বাসায় ইন্টারনেট কোন লাইন নাই। তবে ধন্যবাদ সিংহপুর। আকাশে বাতাসে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সিগনাল পাওয়া যায়।
প্রথমে দেখি আমার ঘরে সিগনাল পাওয়া যায় না। সারা বাড়িতে কোই পাওয়া যায় খুঁজতে খুঁজতে দেখি কেবলমাত্র রান্না ঘরের ওভেনের টেবিলে সিগনাল পাওয়া যায়।
আপাতত সেইখানে বইসাই ব্লগাইতাছি। ভাগ্যিস এই মাগনা ওয়্যারলেস সিগনালটা ছিলো! জয়তু সিংহপুর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।