আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যানেকডট 3 ।। ফ্রিডরিখ ভিলহেল্মের উচ্চাকাঙ্ক্ষা

স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।

ফ্রিডরিখ ভিলহেল্মের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রুশিয়ার রাজা প্রথম ফ্রিডরিখ ভিলহেল্ম (Friedrich Wilhelm I, 1688-1740) বাবার কাছ থিকা একটা জ্যান্ত সেনাদল গিফট পাওনের পরে বাহিনীতে বেশি উচ্চতার সৈন্য নিয়োগ শুরু করলেন। লম্বা সৈন্যের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায় বাহিনীর নাম রাখলেন 'পটসড্যাম জায়ান্টস' বা পটসড্যামের দৈত্যকূল। সৈন্যগো নূ্যনতম উচ্চতার দরকার পড়তো 5 ফুট 11 ইঞ্চি।

সবচেয়ে যিনি লম্বা আছিলেন তার উচ্চতা হইছিল সাত ফুট। 4 ফুট 11 ইঞ্চি উচ্চতার ভিলহেল্ম বছরে কমপক্ষে শ' খানেক লম্বা সৈন্যের আবদার করতেন। প্রুশিয়া থিকা লম্বা লম্বা লোক জোগার করা হইত বলপ্রয়োগ কইরা আর অন্য দেশ থিকা করা হইত কিডন্যাপ। প্রুশিয়ার এই রাজা তার লম্বা সৈন্য জোগাড়ে যা খুশি করতে রাজি আছিলেন। তিনি লম্বাগো যুদ্ধ করতে দিতেন না।

প্রত্যেক দিন ড্রিল করাইতেন। যত খুশি টাকা বরাদ্দ আছিলো সৈন্য সংগ্রহে। এমনকি যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিলেও রাজা পিছপা হইতেন না। যে কোনো মাত্রার বলপ্রয়োগের সুযোগ আছিল রিক্রুটিং এজেন্টগো। বিশালদেহী উচ্চ এক কাঠমিস্ত্রিরে একবার কৌশলে কাঠের বাক্সে ঢুকাইয়া বন্দি করা হইল।

এরপর জাহাজে কইরা পাঠানো হইল পটসড্যামে। রাজার কাছে বাক্স পৌঁছাইলে দেখা গেল বাক্সে বায়ু চলাচলের ছিদ্র না থাকায় বায়ু চলাচল করে নাই। তাই সম্ভাবনাময় লম্বা কাঠমিস্ত্রির মৃতু্য হইছে। রাজা ক্ষিপ্ত হইয়া রিক্রুটিং এজেন্টরে যাবজ্জীবন জেলদণ্ড দিছিলেন। ফ্রিডরিখ ভিলহেল্ম-এর এইসব এজেন্টগো হাত থিকা এমনকি বিদেশি কূটনীতিকরাও নিরাপদ আছিলেন না।

একবার অতিরিক্ত উচ্চতার এক অস্ট্রিয়ান ডিপ্লোম্যাট হ্যানোভারে এজেন্টগো হাতে আটকা পড়ছিলেন। শেষমেশ পালাইয়া বাঁচেন তিনি। রাজার লোকরা পতর্ুগিজ, হাঙ্গেরিয়ান, স্লাভ, রুশ, ইংলিশ, তুর্কি, ইথিওপিয়ান ও আমেরিকান লম্বা লোকগো কিডন্যাপ কইরা সেনাদলে নিয়োগ দিছিল। ইউরোপের বাকি অংশ প্রুশিয়ার রাজার এই উদ্ভট খেয়ালরে আমোদজনক বিবেচনা কইরা আসতেছিল। এমনকি সভ্য ইউরোপের নানা অংশ থিকা রাজা লম্বা লম্বা উপহার পাইতেন।

রাজা যেইখানেই যাইতেন ইশারায় ইঙ্গিতে বোঝাইতেন যে, লম্বাদের পাইলে খুব ভালো হয়। আরেক ফ্রিক পিটার দি গ্রেট রাশিয়া থিকা 6 ফুট 4 ইঞ্চি উচ্চতার শ' খানেক লম্বা লোক নাকি উপহার দিছিলেন রাজা ভিলহেল্মরে। বৃটিশ সরকার একান্তই তাগো কামে আসব এমন একটা চুক্তিতে রাজি করাইতে গিয়া 15 টা অস্বাভাবিক উচ্চতার আইরিশম্যানরে প্রুশিয়ার রাজার কাছে 'গিফট' পাঠায়। স্যাক্সনের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রিডরিখ ভিলহেল্মরে বার্থডে গিফট হিসেবে দামি টার্কিশ পাইপ আর ভালো মানের কিছু টোবাকো পাঠাইছিলেন। প্যাকেট লইয়া গেছিল সাত ফুট উচ্চতার বার্তাবাহক।

প্যাকেটের উপরে লেখা আছিল : 'ডেলিভারি বয়কে রেখে দিন। ' স্যাক্সনির অগাস্টাস দি স্ট্রং-এর কাছ থিকা ফ্রিডরিখ একটা আট ফুট লম্বা উপহার পান। তিনি তার এই নতুন উপহাররে ড্রিল করাইতে গিয়া দেখেন যে এইটা কোনো কামের না। পর্যাপ্ত বেত্রাঘাত সত্ত্বেও লম্বা লোকটি নড়ে চড়ে না। মানসিক জড়ত্বের কারণে এই প্রথম পটসড্যাম সেনাদল থিকা একজনরে মুক্তি দেয়া হইল।

বেচারা শিশুতোষ আটফুটি বহিষ্কৃত সৈনিকটা বার্লিনের রাস্তায় ভিক্ষা করতে করতে এক সময় মারা যায়। সৈন্য সংগ্রহ ক্রমে ব্যয়বহুল আর বিপজ্জনক হইয়া ওঠে। রাজা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পথ ধরেন। তিনি প্রুশিয়ার সকল লম্বা পুরুষরে সকল লম্বা মেয়ে বিবাহ করতে বাধ্য করলেন। কিন্তু এই যজ্ঞ অকার্যকর ও শ্লথগতির প্রমাণিত হওনে পুনরায় তার পুরানা পদ্ধতি কিডন্যাপিং-এ ফিরা আসেন রাজা।

এক সময় তার দৈত্যাকৃতি সৈন্যসংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজারে। পটসড্যামের এই সেনাগো জীবনযাত্রার মান বলতে কিছু আছিল না। প্রায় সকলেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিযুক্ত হইছিল সেনাদলে। এক সময় এরা বিদ্রোহ করতে থাকে এবং পটসড্যামে কয়েকবার আগুন ধরায় এই আশায় যে এইভাবে হয়তো রাজারে উৎখাত করন যাবে। প্রত্যেক বছর গড়ে আড়াই শ'র মত সৈন্য পালাইতে পারতো।

কিন্তু রাজার বাউন্টি হান্টাররা হেগোরে ঠিকই ধইরা আনতো। এইসব বন্দিগো নাক আর কান ফালা কইরা স্পানডাউ বন্দিশিবিরে কয়েদ করা হইত। রাজার এইসব দৈত্যাকৃতি সৈনিকরা আত্মহত্যার পথ বাইছা নিতো, কেউ অন্য সৈনিকগোরে অনুরোধ করতো হেগোরে মাইরা ফেলানের লাইগা। 1740 সালে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজার মৃতু্যর পরে সিংহাসনে আরোহী প্রিন্স ফ্রিডরিখ ব্যয়বহুল সেনাবাহিনীটা ডিশমিশ কইরা দেন। পটসড্যাম জায়ান্টস রেজিমেন্টরে তিনি অপ্রয়োজনীয় খরচের খাত বিবেচনা করেন।

সৈনিকের ট্রেনিং পাওয়া ভিনদেশি লম্বা লোকরা তখন আপন আপন দেশে ফিরা যায়। সূত্র : যায়যায়দিন, 24/8/6 ছবি : মূর্তিমান ফ্রিডরিখ ভিলহেল্ম,সেনাভিসারে ভিলহেল্ম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।