আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার এই শহরে প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি -03



কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে মণির কাছ থেকে জেনেছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখার টেবিল জানালার কাছে রাখতেন না। তাতে নাকি দৃষ্টি লেখার পাতা ছেড়ে প্রকৃতির কোলে গিয়ে গিয়ে ঠাই নেয়। আমাদের এখানে পড়ার টেবিল ঘেষে জানালা থাকলেও খুব একটা ক্ষতি নেই - এ শহরে জানালা দিয়ে বড় একটা আকাশ দেখা যায় না, মাঠতো শহর থেকেই মুখ লুকিয়েছে। আমার পড়ার টেবিলটার ডান পাশ ঘেষে মস্ত একটা হলদে দেয়াল রঙ চটে সিমেন্টের রঙ ধরেছে। দিনের পর দিন দেয়ালটা পর্দার ফাক গলে ঝুলে থাকে ঈশ্বরের মতো অনন্ত অস্তিত্ব তুলে ধরে।

কোনদিন এই দৃশ্যের অন্যরকম কোন কিছু হবে তা কল্পনাও করি না। মানুষমাত্র অভিযোযিত প্রাণী, আমিও অভ্যস্ত হয়ে গেছি সিেেমন্ট আর বালুর আস্তরনে। ঢাকা শহর বেশ মেট্রোপলিটন হয়ে গেছে আজকাল। মেট্রোপলিটন শব্দটির আভিধানিক অর্থটা আমার জানা নেই। আমার কাছে মেট্রাপলিটন জীবন মানে একধরনের বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে বাস।

চোখের উপর অটল অনড় দেয়ালের ওপাশে কে বা কারা থাকে তার কোন আভাস দেয়ালটা দেয় না। শহরের পুরোনো অংশে আমাদের শহরের জেলখানা। জেলখানা মানে উচু হলুদ রঙের একটা ফ্যাকাসে দেয়াল সরু গলির এক পাশ ঘেষে চলে গেছে। রিক্সা দিয়ে সদরঘাট যাওয়ার সময় ঐ দেয়াল আর ফুরোয় না। এখন টেবিলের সাথে ঐ দেয়ালটই যেন হাজির হয়েছ - বই এর পাতার অক্ষর, পর্দা আর সেই হলদেটে দেয়াল।

প্রত্যেকদিনের চেনা দৃশ্যে বাগড়া বাধালো একটা পুতুল। বোধহয় উপর থেকে একটা পুতুল পড়ে গেছে নিচে পড়তে পড়তে থমকে গেছে কার্ণিসে বাধা পেয়ে। হাত পা ছড়িয়ে গোলাপী নীলে ডিজাইন করা একটা জামা গায় দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কালো চুলের মেয়েটা- বিণুনী জোড়া কার্ণিস থেকে ঝুলে আছে। পুতুলটা এ দেয়ালটাকে অদৃশ্য করে একটি বাচ্চার মুখচ্ছবি টেনে আনে। আমি বাচ্চাটার সাথে খেলতে থাকি।

পরদিন দেয়ালটি ভেসে উঠতেই দেখি দেয়ালটিতে সবুজ আর পুতুলটি উধাও। সবুজ মানে সবসময় রঙ নয় সবুজ কখনও কারো নাম। সম্ভবত দুরন্ত সবুজ নামের বালক পুতুলটি নিতে কার্ণিসে উঠে পড়ে থাকা ইটের টুকরোয় নিজের নাম লিখে চলে গিয়েছিল। এই দুরন্তপনার স্পর্শ ইট সিমেন্টের এই দেয়ালটিকে একদিনের জন্য হলেও আমার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।