আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিসভা থেকে ।। মানস চৌধুরীর অনুবাদে ভ্রাম্যমান তালিবান রাষ্ট্রদূত সাইয়ীদ রাহমাতুল্লাহ্ হাশেমীর (জন্ম 1978) লস এনজেলস বক্তৃতা

স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।

অদৃশ্য আফগানিস্তান সাইয়ীদ রাহ্মাতুল্লাহ্ হাশেমী (সাইয়ীদ রাহমাতুল্লাহ্ হাশেমী তৎকালীন আফগানিস্তানের ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। নিচের লেখাটি লস এনজেলসের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে 10 মার্চ, 2001 তিনি যে বক্তৃতা দেন তার শ্রুতিলিপির সম্পাদিত রূপ। ) অনুবাদ: মানস চৌধুরী পবিত্র কুরআনে আছে "হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিবে, পাছে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সমপ্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়া বস, এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদিগকে অনুতপ্ত হইতে হয়।

" সুরা হুজুরাত 49: 6এই মাত্র আমি পণ্ডিতদের সাথে একটা সভা থেকে আসছি, এবং সেখানে প্রথম যে বিষয়টা নিয়ে আমরা কথা বলতে শুরু করেছিলাম তা হচ্ছে মূর্তি। এবং এখানে প্রথম যে বিষয়টা নিয়ে আমরা কথা শুরু করেছি তাও হচ্ছে মূর্তি। এটা বড়ই পরিতাপের যে, আমরা কত কম দেখতে পাই এবং কত কম জানি। কেউই আফগানিস্তানের সমস্যাগুলো দেখলো না; আগেও কেউ তা দেখেনি। আর এখন যে একমাত্র বিষয়বস্তু আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করছে তা হচ্ছে মূর্তি।

আফগানিস্তানকে এশিয়ার সন্ধিস্থল বলা হয়। তাই আমরা ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে দুর্ভোগ পোয়াচ্ছি। আমরা 18 শতকে দুর্ভোগ সয়েছি, 19 শতকে, এবং এখন এই শতকেও আমরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। আমরা ব্রিটিশদের আক্রমণ করিনি। আমরা রুশদের আক্রমণ করিনি।

তারাই আমাদেরকে আক্রমণ করেছে। তাহলে দেখেন আফগানিস্তানের সমস্যা আমাদের তৈরি করা নয়। সোভিয়েত আগ্রাসনআফগানিস্তানের সামপ্রতিক সমস্যার সূত্রপাত ঘটে 1979 সালে। আফগানিস্তান একটা শান্তিপূর্ণ দেশ ছিল। রুশরা তাদের 140,000 সেনাসহ 1979 সালের ডিসেম্বর মাসে আফগানিস্তান আক্রমণ করলো, সেখানে এক দশক ধরে থাকলো, পনেরো লক্ষ মানুষ মেরে ফেললো, আরো দশ লক্ষ লোককে পঙ্গু করলো, এবং রাশিয়ার নৃশংসতার কারণে পৌনে দু কোটি লোকের মধ্যে 60 লক্ষ দেশান্তরী হলো।

এমনকি এখনও, আমাদের সন্তানেরা মারা যাচ্ছে কারণ তারা আমাদের জন্য মাইন পুঁতে রেখে গেছে। এবং কেউই এসব জানে না। অন্যদিকে, রাশিয়ান দখলদারিত্বের কালে মার্কিন সরকার, ব্রিটিশ সরকার, ফরাসী, চীনা, এবং অন্য সকলে সমর্থন যুগিয়ে এসেছে মুজাহিদীন নামের প্রতি-বিপ্লবীদের। পাকিস্তানে এরকম মাত্র সাতটি দল এবং ইরানে আটটি দল রাশিয়ার দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়েছে। রাশিয়ানরা চলে যাবার পর তারা সকলে আফগানিস্তানে এসে ঢুকলো।

তাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ, আর ছিল গাদা গাদা অস্ত্র। এবং একটা কোনো অখণ্ড প্রশাসন না থাকবার কারণে তারা আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে থাকলো। তারা যে ক্ষয়-ক্ষতি করেছে তা রাশিয়ানদের থেকেও ভয়ঙ্কর। কেবল রাজধানী কাবুলেই 63,000 মানুষ মারা পড়েছে। এই নৈরাজ্যের কারণে আরো লক্ষ দশেক লোক দেশ ছেড়েছে।

তালিবানের শুরুএই নৈরাজ্য আর ধ্বংস দেখে তালিবান নামে একদল ছাত্র, তালিবান শব্দের মানে একদল ছাত্র (আমাদের ভাষায় ছাত্রের বহুবচন হচ্ছে তালিবান; আরবী ভাষায় এটা দুইজন ছাত্রকেও বোঝাতে পারে, কিন্তু আমাদের ভাষায় বোঝায় ছাত্ররা) আন্দোলন গড়ে তুললো যার নাম শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এটা প্রথমে শুরু হয়েছিলো আফগানিস্তানের দক্ষিণের একটা প্রদেশ কান্দাহারে। এটা ঘটেছে যখন একজন যুদ্ধপ্রভু বা কমান্ডার দুজন কিশোরী মেয়েকে অপহরণ করে তাদের শ্লীলতাহানি ঘটালো। সেই মেয়ে দুটোর মা-বাবা একটা স্কুলে গিয়ে শিক্ষকের কাছে সাহায্য চাইলেন। ঐ স্কুলের শিক্ষক তখন, তাঁর 53 জন ছাত্র সমেত, কেবল 16 টা বন্দুক যোগাড় করে ঐ কমান্ডারের ঘাঁটি আক্রমণ করলেন।

মেয়ে দুজনকে উদ্ধার করবার পর তাঁরা ঐ কমান্ডারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, সাথে তার দলের আরো অনেককে। এই কাহিনী সর্বত্রই বলা হয়ে থাকে। বিবিসিও এই কাহিনীটাকে উদ্ধৃত করেছে। এই কাহিনী শুনে আরো বহু শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন এবং অপরাপর যুদ্ধপ্রভুদের নিরস্ত্র করতে শুরু করেছিলেন। এই শিক্ষার্থী আন্দোলনই এখন রাজধানী সহ দেশের 95% নিয়ন্ত্রণ করে।

সেই যুদ্ধপ্রভুদের একাংশ কেবল আফগানিস্তানের উত্তর ভাগে রয়ে গেছে। আমাদের অর্জনআমরা মাত্র পাঁচ বছর সরকারে আছি, এবং নিচে লেখা এগুলো অর্জন করেছি, এবং আপনারা অনেকেই তা জানেন না:1. প্রথম আমরা যা করেছি তা হচ্ছে এই খণ্ড-বিখণ্ড দেশটাকে একত্রিত করা। আফগানিস্তান আগে পাঁচ ভগ্নাংশে খণ্ডিত ছিলো। আমরা একে জোড়া লাগিয়েছি, এমন সময়ে যখন এ কাজ আর কেউ করেনি। 2. দ্বিতীয় যে জিনিসটা আমরা করেছি, যাতে সবাই বিফল হয়েছে, তা হলো মানুষজনকে নিরস্ত্র করা।

যুদ্ধের পর প্রতিটি আফগানের কাছে একটা কালাসনিকভ ছিল, এমনকি আরো অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র যেমন স্টিংগার মিসাইল, এমনকি তাদের ফাইটার প্লেন এবং ফাইটার হেলিকপ্টার ছিল। এই লোকগুলোকে নিরস্ত্র করা প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিলো। 1992 সালে জাতিসংঘ 3 বিলিয়ন ডলারের জন্য আবেদন করে, সেই টাকা দিয়ে অস্ত্রগুলো পুনঃক্রয় করবে বলে। এই উদ্যোগটার অসারতার জন্য কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি, এবং সকলেই আফগানিস্তান প্রসঙ্গ ভুলে গেল। তাহলে দ্বিতীয় কাজটা আমরা করেছি দেশের 95% অংশের অস্ত্র উদ্ধার।

3. তৃতীয় যে কাজটা করেছি আমরা তা হচ্ছে আফগানিস্তানে একটা একক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা যা বিগত 10 বছর ধরে এখানে ছিলো না। 4. আমাদের চতুর্থ অর্জনটা সকলের কাছেই বিস্ময়কর যে আমরা বিশ্বের আফিম চাষের 75% কমিয়ে এনেছি। আফগানিস্তান বিশ্বের আফিমের 75% উৎপাদন করতো। গত বছর আমরা একটা ডিক্রি জারি করি যাতে মানুষজন আর আফিম চাষ না করে, এবং এই বছর, জাতিসংঘ মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ইউএনডিসিপি, এবং তাদের প্রধান মি: বার্নার্ড এফ সগর্বে ঘোষণা করলেন যে আফিম চাষ 0%। গোল্লায়, হচ্ছে না, একেবারেই চাষ হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত এটা জাতিসংঘের নিজের জন্য খুব ভাল খবর ছিলো না কারণ তাদের অনেকেরই এতে চাকরি খোয়া গেছে। ইউএনডিসিপি-তে, 700 তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কাজ করতেন সেখানে এবং মাইনে পেতেন এবং কখনোই আফগানিস্তানে যাননি। ফলে আমরা যখন এই ডিক্রি জারি করলাম, আমি জানি যে তাঁরা খুশি হননি। এবং এই বছরে তাঁরা চাকরি হারিয়েছেন। 5. আমাদের পঞ্চম সাফল্য হচ্ছে মানবাধিকার পুনপর্্রতিষ্ঠা।

এখন, আপনারা ভাবতে পারেন যে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে যুক্ত আছি। বাস্তব হচ্ছে একেবারেই উল্টো। একজন মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে আছে বেঁচে থাকার অধিকার। আমাদের আগে, আফগানিস্তানে কেউই শান্তিতে বসবাস করতে পারতো না। আমরা প্রথম যে কাজটা করেছি তা হলো, মানুষজনকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবন দান করা।

দ্বিতীয় বড় যে জিনিসটা আমরা নিশ্চিত করেছি তা হচ্ছে মানুষজনের জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার; ওখানে আপনাদের মতন না, বিচার কিনতে হয় না। আফগানিস্তানে ন্যায়বিচার হচ্ছে মুক্ত এবং অনায়াসলভ্য। নারী অধিকারনারী অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আমাদের সমালোচনা করা হচ্ছে। আপনারা কি জানেন আমাদের আগে কী ঘটতো? এখানে কিছু আফগান দেখতে পাচ্ছি, তাঁরা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, আফগানিস্তানের গ্রামদেশে নারীদের জীব-জন্তুর মতো করে ব্যবহার করা হতো। আক্ষরিক অর্থেই তাদের বিক্রি করা হতো।

এই ঘৃণ্য রেওয়াজ আমরা বন্ধ করি। স্বামী বাছাই করবার বেলায় তাদের মতামতের কোন দাম ছিলো না। প্রথম আমরা যেটা করলাম তা হচ্ছে তাদেরকে নিজ ভবিষ্যত বেছে নিতে দিলাম। আফগানিস্তানে আরেকটা ব্যাপার ঘটতো যে, উপঢৌকন হিসেবে নারীদের বিনিময় চলতো। অবশ্যই এতে ধর্মীয় কিছু নেই, এটা সাংস্কৃতিক।

দুটো বিবদমান গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে রফা করতে চাইলে তারা নারী বিনিময় করতো। এটা এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাধারণত যা বলা হয়ে থাকে আফগানিস্তান সম্বন্ধে, তার উল্টোটাই ঘটে, নারীরা কাজ করে। এটা সত্য যে 1996 সালে রাজধানী কাবুল দখল করবার আগ পর্যন্ত আমরা নারীদের ঘরের ভেতরে থাকতে বলতাম। এর মানে এই নয় যে আমরা চেয়েছি তাঁরা চিরকালই ঘরের ভেতরে থাকুন।

আমরা বলেছি কোথাও আইন নেই, শৃঙ্খলা নেই, আপনাদের ঘরের ভেতরে থাকতে হবে। আমরা মানুষজনকে নিরস্ত্র করলাম, আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করলাম, এবং এখন নারীরা কাজ করছেন। সত্য, নারীরা এখানকার মত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন না। আমরা চাই না যে আমাদের নারীরা যুদ্ধ-বৈমানিক হোন, কিংবা তাঁরা বিজ্ঞাপনে দর্শনীয় বস্তু আকারে ব্যবহৃত হোন। তাঁরা কাজ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে, এবং এরকম।

একই ভাবে নারী শিক্ষা নিয়ে আমাদের কোনোই সমস্যা নেই। আমরা বলেছি যে আমরা শিক্ষা চাই, এবং শিক্ষিত আমরা হবোই তা কারো কোনো চাপ থাকুক বা নাই থাকুক, কারণ তা আমাদের বিশ্বাসের অংশ। আমরা সেটা করতে আদিষ্ট। যখন আমরা পৃথক স্কুল থাকার কথা বলি, তার মানে এই নয় যে আমরা চাই না আমাদের নারীরা শিক্ষিত হোক। এটা সত্য যে আমরা সহ-শিক্ষার বিপক্ষে; কিন্তু এটা সত্য নয় যে আমরা নারী শিক্ষার বিপক্ষে।

এমনকি আমাদের এখনও স্কুল আছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সহায়-সম্পদের। আমরা এই কর্মসূচিগুলো বাড়াতে পারছি না। আমাদের সরকারের আগে নানা ধরনের পাঠ্যসূচি চালু ছিলো। রাজাদের বন্দনা করে এমন পাঠ্যসূচি ছিলো, কমু্যনিস্টদের বন্দনা করে এমন পাঠ্যসূচি ছিলো, এবং সাতটা দলের পক্ষের পাঠ্যসূচি ছিলো। সে কারণে, কী পড়া উচিত, তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা দোটানায় পড়ে যেতো।

আমরা পাঠ্যসূচি একত্রীকরণের কাজে হাত দিয়েছি এবং সেটা চলছে। সমপ্রতি আমরা আফগানিস্তানের সকল বড় শহরে এবং কান্দাহারে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদ পুনরায় চালু করেছি। চিকিৎসা অনুষদে ছাত্রদের থেকে বেশি সংখ্যায় ছাত্রীরা লেখাপড়া করছে। তবে তারা পৃথক পৃথক শিক্ষায়তনে পড়ছে। এবং সুইডিশ পর্ষদগুলোও মেয়েদের জন্য স্কুল চালু করেছে।

আমি জানি তা যথেষ্ট নয়, কিন্তু এটুকু পর্যন্তই করবার সামর্থ্য হয়েছে আমাদের। ওসামা বিন লাদেনআমরা সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতার দায়েও অভিযুক্ত। আর মার্কিনীদের কাছে সন্ত্রাসবাদ কিংবা সন্ত্রাস বলতে বোঝায় কেবল বিন লাদেন। আপনারা এখন সেই আফগানিস্তানকে জানবেন না, কিংবা জানবেন না যে বিন লাদেন 17 বছর ধরে আফগানিস্তানে আছেন এমনকি আমাদের অস্তিত্ব তৈরি হবার ঢের আগে। বিন লাদেন আফগানিস্তানে ছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, এবং মি: রোনাল্ড রেগ্যান, মার্কিনের তখনকার প্রেসিডেন্ট, এবং মি: ডিক চেনি এসব মানুষজনকে বলতেন মুক্তিযোদ্ধা কিংবা বলতেন স্বাধীনতার বীরবর্গ, কারণ এঁরা তাঁদের স্বার্থে লড়েছিলেন।

আর এখন যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, এসব লোকের আর দরকার নেই, এবং তাঁরা সন্ত্রাসবাদীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বীর থেকে সন্ত্রাসবাদী। একেবারেই মি: ইয়াসির আরাফাতের মত যিনি সন্ত্রাসবাদী থেকে বীরে রূপান্তরিত হয়েছেন। বিন লাদেন যে সকল কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত তার সঙ্গে 1998 সালে আফগানিস্তানে ক্রুজ মিসাইল হামলার পার্থক্য কী?দুটোর কোনোটাই ঘোষিত ছিলো না এবং দুটোই সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। যদি নির্বিচারে সাধারণ মানুষ মারবার প্রসঙ্গ আসে তাহলে দুটোতেই তা ঘটেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার একজন লোককে মারতে চেষ্টা করেছে তাকে একটা ন্যায্য বিচারের সুযোগ পর্যন্ত না দিয়ে। 1998 সালে তাদের মনে হলো আর আফগানিস্তানে ক্রুজ মিসাইল পাঠিয়ে দিল এবং তারা ঘোষণা করলো যে তারা ওসামা বিন লাদেনকে মারবার চেষ্টা করেছে। আমরা তখন ওসামা বিন লাদেনকে চিনতাম না। আমি তাঁকে চিনতাম না; তিনি নিছক একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাই আমরা সবাই হতভম্ব হয়েছিলাম।

অনেকের মতো আমি রাত্রে বাসায় বসেছিলাম, আমাকে জরুরী কাউন্সিল সভায় ডেকে পাঠানো হলো এবং বলা হলো যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করেছে। 75টা ক্রুজ মিসাইল দিয়ে তারা একটা মাত্র লোককে মারার চেষ্টা করেছে। এবং তারা সেই লোকটাকে পায়নি; অন্য 19 জন ছাত্রকে মেরে ফেলেছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কখনোই অনুতাপ প্রকাশ করেনি। আপনারা যদি আমাদের জায়গায় থাকতেন তাহলে কী করতেন? যদি আমরা গিয়ে 75টা ক্রুজ মিসাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেলতাম এবং বলতাম যে আমরা একটা লোককে মারতে গিয়েছিলাম যাকে আমরা আমাদের দূতাবাস হামলার জন্য দায়ী মনে করছি, এবং আমরা সেই লোকটাকেও পাইনি, এবং আমরা অন্য 19 জন মার্কিনীকে মেরে ফেলেছি কী করতো তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? তাৎক্ষণিক ভাবেই যুদ্ধ ডাকতেন আপনারা। কিন্তু আমরা নম্র।

আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করিনি। আমাদের প্রস্তাবনাবরং আমরা এ ব্যাপারে বরাবরই খোলা-মনের ছিলাম। আমরা বলেছি, যদি এই লোকটা সত্যিই কেনিয়া/তাঞ্জানিয়ার ঘটনাতে জড়িত হয়ে থাকে, যদি এসব ভয়াবহ ঘটনায় তার জড়িত থাকার কোনো দলিল-প্রমাণ কেউ আমাদেরকে দেয়, আমরা তাকে শাস্তি দেবো। কেউ আমাদের কোনো প্রমাণ দিলো না। আমরা তাঁকে 45 দিনের ট্রায়ালে রাখলাম এবং কেউই আমাদের কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ দিলো না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বললো, আমাদের বিচার ব্যবস্থায় তাদের আস্থা নেই। আমরা হতবাক হয়েছি যে তাদের বিচার ব্যবস্থাটা তাহলে কোন্ ধরনের?তারা একটা লোককে মারবার চেষ্টা করেছে কোনো রকমের বিচারের সুযোগ তাকে না দিয়েই। এখানে আমাদের মধ্যে যদি কেউ অপরাধী হয়, পুলিশ গিয়ে তার বাড়িঘর ভাঙতে শুরু করবে না, নিশ্চয়ই প্রথমে তাকে আদালতে নেবে। তাহলে আমাদের প্রথম প্রস্তাবটি নাকচ হয়েছে। তারা বললো তারা আমাদের বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না, এবং আমাদের অবশ্যই তাঁকে নিউ ইয়র্কে হস্তান্তর করতে হবে।

প্রথম প্রস্তাবটি নাকচ হবার পর আমরা বলে আসছি যে আমরা রাজি আছি, আপনারা চাইলে একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল আফগানিস্তান এসে এই লোকটির কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারে। যাতে তিনি কোন কিছু না করতে পারেন। এমনকি তাঁর কোনো টেলিযোগাযোগ নেই। আমাদের সেই প্রস্তাবও নাকচ হলো। তৃতীয় প্রস্তাব আমরা দিয়েছি ছয় মাস আগে, সেটা ছিলো যে আমরা তৃতীয় একটা ইসলামী দেশে ওসামা বিন লাদেনের বিচার মেনে নিতে রাজি আছি, যেখানে সৌদি আরব ও আফগানিস্তানের সম্মতি থাকবে।

সেটাও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আমরা এখনও যথা সম্ভব খোলা মন নিয়ে আছি। এবং চতুর্থ বারের মতো, আমি এখানে, আমার নেতৃবর্গের পক্ষ থেকে পত্র নিয়ে এসেছি যেটা আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে চাচ্ছি এই আশায় যে তাঁরা সমস্যাটার সমাধান করবেন। কিন্তু আমি মনে করি না যে তাঁরা সেটা করবেন। কারণ আমরা মনে করি, এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই একজন জুজু বুড়ি খুঁজে বেড়ায়।

মনে আছে গর্বাচেভ কী বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন যে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বড় ক্ষতিটি করতে যাচ্ছেন। সবাই মনে করলো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র উড়িয়ে দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি বললেন, আমি ওদের শত্রুকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছি। এবং তারপর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে খণ্ড খণ্ড করলেন। তিনি সঠিকই বলেছিলেন।

তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেবার পর বহু লোকের চাকরি গেছে: পেন্টাগন থেকে, সিআইএ থেকে, এবং এফবিআই থেকে, কারণ তখন তাঁদের আর প্রয়োজন নেই। তাই আমাদের মনে হয় যে বোধহয় এই লোকগুলো এখন একজন জুজু বুড়ি খুঁজছে। হতে পারে যে তারা তাদের বার্ষিক বাজেটকে সিদ্ধ করতে চায়, হতে পারে যে তারা চায় তাদের নাগরিকেরা তাদের প্রয়োজন বোধ করুক। আফগানিস্তান কোনো সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নয়; আমরা এমনকি একটা সূঁচও

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।