ফেলে দেওয়া মাল, কেউ নেই ধারে কাছে, বাতাস এলে উড়ে সব তালগোল,এখনই ঠিক সময়,লুঠ তো করতেই হবে। হা হা হা...

মাঝে মাঝেই রাস্তা দুভাগ হয়ে যায়,আবার কখনো দুটো রাস্তা এক যায়গায় মেলে,রাস্তায় রাস্তায় মেলামেলির এই সব গল্পকথা অনেক সময় গল্প হওয়ার চেষ্টা করে,গল্প হয়ে ওঠেনা কখনো। প্রথম গল্প ...এক দেশে এক রাজা ছিলেন। খান 70/75 রানি,খানসামা বাঁদী ধরলে আরো শ দেড়েক শয্যার সংকল্প। পাঁচতলা রাজপ্রাসাদে কোন ঘরে যে কোন রানী বসে আছেন তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

সন্ধ্যায় পরাষনক্ষ্মআন্ত রাজা কোন এক ঘরে ঢুকে পড়ে নিশ্চিন্ত হন। কোন এক শয্যায়। রাস্তা বাতলানোর মত কোন মানচিষন তৈরি করার কথা আজ পর্যন্ত তার মাথায় ও আসেনি তাই বেগুনী-লাল-জরীর ফুলাকরীর আলখাল্লার জেবের মধ্যে মানচিষেনর দেখা পাওয়াটা খুব আশ্চর্যের। আর রাজাও ক্লান্ত, সন্ধ্যা হয়ে আসছে দ্রুত। কাজেই ভুল রাস্তা বা রাস্তা ভুল যাই হোক রাজার পরিচর্যা বাঁধা।

যুদ্ধজয় মানে নতুন বিবাহ। ফলে যখন যুদ্ধে যেতেন, বা নতুন বিবাহ করেন,সেটা প্রায়শই,তাই প্রায়শই ভাবেন, নতুন রানীর ঘরের আন্দাজ, অর্থাত্ তার একটা নকশা,রাস্তা বাতলানোর মানচিষন তার জেবে থাকলে মন্দ হয়না। কি করে মানচিষন বানান যায়? রাজা ভাবেন, ভাবতে থাকেন, স্বপ্নে দেখেন তার প্রিয় কুকুরটি চলছে তার সাথে,এইভাবে বলাটা বোধ হয় ঠিক নয়,অন্যের গোপন স্বপ্ন ফাঁস করে দেব? পেটেন্ট বলেও তো একটা কথা আছে, হাচ, এয়ারটেল, ব্লা, ব্লা, ব্লা চুটিয়ে ব্যবসা তা রাজার সহ্য হবে কেন। ধরে নিয়ে এলেন পাঠশলার কোন এক ভুগোলের মাষ্টারকে সে রাজপুরীতে এসে অনেক ছক-আঁক কষল, এ নকশা সে নকশা, তারপরে রাজা যখন মিলিয়ে দেখতে চান, ভো ঁভাঁ। ফলে নির্ভূল নকশার লক্ষ্যে, রোজ রাতে,নকশা পড়ার জন্যে হাজির থাকতে হয় ভূগোলের মাষ্টারকে, ধুস এ তো জ্তুপর্ণর অন্তরমহলের গল্প হয়ে যাচ্ছে।

তার চেয়ে মানচিষন ফানচিষন ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেল, সেটাই বেশ হবে,পথ ঘাট নিজে নিজে ফুটে উঠবে জ্যোত্স্নার আলোয়,কাজেই রাজার পথ ভূল হওয়ার যো নেই... দ্বিতীয় গল্প ...বড় বড় পীচের ড্রামে থলথল করছে গলানো পীচ। একটা ছোট্ট মেয়ে, যে ড্রাম বরাবর কিছুতেই নাগাল পায়না,আরো একটা খালি ড্রাম শুইয়ে, সেই গরম হল্কায় নাক ডুবিয়ে পরখ করছে কতটা গলল। রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা মেরামত ও হয়। কাজেই কেও যখন তাকে জিজ্ঞাসা করে এ রাস্তা কোথায় গিয়েছে তখন তার ভাষার সমস্যা হয়, ভাবলেশহীণ।

আজ অব্দি কোন রাস্তার নাম সে জানেনা,গতানুগতিক। যদিও গতি ও অনুপাতের অংকে সে সিদ্ধহস্ত 5:2::2:1,আর ছুটে চলা। কখনো এক ট্রাকে গাদাগাদি হয়ে পীচের ড্রামের সাথে। যদি এইরকম শীতকাল হয় তাহলে পীচের ড্রামের পাশে উঠে বারবার দেখে নেয়া যায় কতটা গলল পীচ অথবা রাষেন ট্রাকের ওপর গুটিশুটি মেরে শোয়ানো খলই পীচের ড্রামের ভিতর, মাতৃজঠরের মত, যে তার বেরিয়ে আসার রাস্তা জানেনা... ...গরমকাল এলে,বসন্তের পর,ভারী ভাল লাগে,পথঘাট ভেঙে বসে থাকো রোলারের ওপর,রোলার ও ওপরে চলে কেননা বসন্তের হাওয়া। কে রোলারের ওপরে কে রোলারের নীচে এই সব ভাবতে ভাবতে সব রাস্তা কালো হয়ে যায়,গরম গলানো পীচ জমাট বেঁধে থাকে... তৃতীয় গল্প ...বুড়োরা প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় এই গাছটার তলায় গজল্লা করে।

কার বাড়ির বৌমা কোন সিরিয়াল দেখে, কাদের বাড়ির বৌ রাষিনবাসে সারারাত অপেক্ষা করে বারান্দায়,এমনকি কোন বৌটা বাচ্চা চায়না বলে ঝগড়া করে রাষিন দ্বিপ্রহরে। যখন শুনশান বটগাছতলা তখনই জমতে থাকে গল্প,গল্পেরা তৈরি হয়,যে যার মত দেখতে শুনতে থাকে। রোজ বিকেলবেলা সাত/আটটা বুড়োমানুষ জমা হয় এই বটগাছটার তলে। বটগাছ রোজই শোনে এইসব কথা, সেও বুড়ো হয়েছে বিস্তর, কাজেই অংশগ্রহণে বাঁধা নেই। কাকে বলে অংশগ্রহণ? সেকি কেবলই শোনে? তারও কত কিছু বলার আছে, কে এসে চিঠি রেখে যায় তার গোপন কোঠরে আর নিয়ে যায় স্কুলফেরত কোন সে মেয়েটি,কারা এসে বসে থাকে রোজ দুপুরবেলা,নিশ্চুপ,হাতে হাতে হাত ধরে।

অথচ তার বলার কোন রাস্তা জানা নেই,পাতা খসে পড়ে যায়,কেবল। ...বুড়ো বট, ডালপালা মেলে দেওয়া বুড়ো বট,নদী মাটি ধরে রাখা বুড়ো বট, পাখি পাখি ঘিরে দেওয়া বুড়ো বট, কেবল রাস্তা জানেনা। জানেনা বললেই হয়? তাকে জানতেই হয়, কোন রাস্তা ধরে হেঁটে আসবে সেই যুবক যুবতী, কোন রাস্তার শেষে কোন এক বালিকা বিদ্যালয়, কোন রাস্তা ধরে হেঁটে আসে গল্পের অভিসারী রাধা,রাতপোষাকে একাকিনী বারান্দায়। রোজ বিকেলে বুড়োর দল এসে জমা হয় বটগাছের নিচে। পরচর্চার ইপ্সিত প্রবাহে উষ্ঞতার পদসঞ্চার হয়,আসলে যে রাস্তা বরাবর হেঁটে এসেছে তারা,কোন রাস্তার শেষে রাখা আছে বাড়ি,সংসার,নিভৃত গল্প কিছু তা তারা ভালভাবেই জানে দিনের আলোর মত।

নিস্তার কোথায়? আসলে এইসব ছেড়ে-ছুড়ে অন্য রাস্তায় হরিদ্বারে গঙ্গার ঘাটে, হিমালয়ের কোন গোপন গুহায়, বৃদ্ধাশ্রমে ধুকে ধুকে মরা বুড়োদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব বটতলা থাকে, পালাবার পথ থাকেনা... (চলবে)
।