www.runews.weebly.com
দোকানের বাইরে কোন সাইন বোর্ড নেই। তবু চিনতে কারো অসুবিধা হয় না। ভিড় লেগেই আছে সারাণ। 'এই দোকানের সাইন বোর্ড লাগে না', খোদ মালিকের মুখে এমন কথা। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীগুলো যখন বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কেবল তাদের পণ্যের প্রচারে।
তাহলে রাজশাহীর এই পুচকে দোকান মালিকের মুখে এমন কথা কতটা সাহসের ! তবে সাদামাটা দোকানের ভেতরে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন কেন সাইনবোর্ড দরকার নেই এই দোকানের।
রাজশাহীর জিরোপয়েন্ট একটু সামনে এগুলেই বাটার মোড়। আশপাশের দোকানের চেয়ে একটু খাপছাড়া ভাবেই রয়েছে একটা দোকান। এটাই রাজশাহীর বিখ্যাত বাটার মোড়ের জিলাপীর দোকান। গোটা রাজশাহী জুড়ে এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যে একবারও চোখ বন্ধ করে এই দোকানের জিলাপীর স্বাদ নেন নি।
রাজশাহীবাসীর নানা আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গী বাটার মোড়ের এই জিলাপী। সারা শহরে মিষ্টির দোকান গজিয়ে উঠলেও বাটার মোড়ের জিলাপীর কদর কমে নি। প্রায় 50 বছর ধরে মাথা উচু করেই দাঁড়িয়ে আছে নাম-সাইনবোর্ড বিহীন এই দোকানটি। আস্তে রাজশাহীর ঐতিহ্যর সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে এই জিলাপী। কেবল রাজশাহীতেই নয়, সারা দেশেই নামকরা বাটার মোড়ের এই জিলাপী।
উত্তরাধিকার সুত্রে প্রায় 3 পুরুষ ধরে চলে আসছে এই জিলাপীর ব্যবসা। দোকানে বসেছিলেন সোহেল। তার দাদাই এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে বাবার হাত ধরে চলে এসেছেন এই ব্যবসায়ে। তিনি জানালেন, প্রায় 50 বছর আগে তার দাদা তামিজ উদ্দিন এই দোকান প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রথমে এটি ছিল মিষ্টির দোকান। তারপর জিলাপীর কারিগর হিসেবে এখানে নিয়ে আসা হয় জামিল শাহ্ কে। তার হাতের তৈরি জিলাপীর খ্যাতি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহী জুড়ে। তবে এখন তিনি আর জিলাপী তৈরি করেন না। তার ছেলেই এখন এই দোকানের 'ওস্তাদ'।
একটু পরেই 'ওস্তাদ' কালিবাবু তার স্থুল শরীর নিয়ে বেরিয়ে এলেন দোকানের ভেতর থেকে। তিনি জানালেন, কয়েক পুরুষ ধরেই তারা মিষ্টি তৈরির সাথে জড়িত। তার বাবা, দাদা, দাদার বাবা সকলেই ছিলেন মিষ্টির কারিগর। 1974/75 সাল থেকে তিনি এখানে জিলাপী তৈরি করেন। উত্তরাধিকার সুত্রে বাবার কাছ থেকেই তিনি জিলাপী তৈরি শিখেছেন।
তারপর থেকে এখানেই কাজ করেন। এখান থেকেই কাজে অবসর নেবেন তিনি।
বাটার মোড়ের জিলাপী কেন আর সবার থেকে আলাদা? কিইবা এর আলাদা বৈশিষ্ট্য? কালিবাবু জানালেন, তৈরির পদ্ধতিই বাটার মোড়ের জিলাপীর বৈশিষ্ট্য। সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় এই জিলাপী। আর এর বিভিন্ন উপাদানও নির্ভেজাল।
এ কারণেই এই জিলাপীর স্বাদ আলাদা। তিনি বললেন, মালিকের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই জিলাপীর এই মান ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। বাজারে অনেক দোকানেই জিলাপী তৈরি হয়। কিন্তু রাজশাহীর মানুষের কাছে বাটার মোড়ের জিলাপী মানেই স্পেশাল, একেবারে আলাদা কিছু। অন্য দোকানে এভাবে মান নিয়ন্ত্রন করা হয় না।
তাই খদ্দেররা এখানেই আসে। দোকানে জিলাপী খেতে আসা পঞ্চাশোর্ধ রফিক বললেন, এমন সুস্বাদু আর মচমচে জিলাপী আপনি আর কোথাও পাবেন না। এ কারণেই এখানে আসা। তবে বাটার মোড়ের জিলাপী নিয়ে বিড়ম্বনাও কম নয়। গতমাসেই এই দোকানের পাশেই শিফট হয়েছে সমকাল রাজশাহী বু্যরো অফিস।
শুনুন সমকালের রাজশাহী বু্যরো প্রধান শিবলী নোমানের কথা। বললেন, এই মোড়ে অফিস নিয়েই বিপাকে পড়েছি। যেই আসে এখানে , সেই বাটার মোড়ের জিলাপী খেতে চায়। জিলাপী খাওয়াতে খাওয়াতে অবস্থা খারাপ।
খরিদ্দারদের কাছে জিলাপীর দাম নিতে ব্যস্ত সোহেল জানালেন, প্রতিদিন কমপ ে40 কেজি বিক্রি হয় জিলাপী।
তাছাড়া, নানা অনুষ্ঠানের জন্যও অর্ডারে তৈরি করা হয় জিলাপী। এখন চিনি ও অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে 60 টাকা দরে। আর রাজশাহীবাসীর ইফতারে তো আলাদা যায়গায় করে নিয়েছে এই জিলাপী। তিনি আরো জানালেন, বাবার নির্দেশেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে এই ব্যবসায়ে এসেছেন। তবে তার সন্তানদেরকে তিনি এই ব্যবসায় না এনে আরো ভালো কিছু করতে বলবেন।
তবে পুর্ব পুরুষদের পেশা এ সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নন ওস্তাদ কালি বাবু। গরম কড়াইয়ে আঁচ উঠা তেলে জিলাপী ছাড়তে ছাড়তে তিনি বললেন, আমার অন্তত একটা ছেলেকে হলেও আমি এই পেশায় নিয়ে আসতে চাই।
...................................
30 সেপ্টেম্বর, 2006
3টা 40
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।