আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিউনিখের অক্টোবর ফেষ্ট: পৃথিবীর সবচে বড় জাতীয় আনন্দমেলা

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

পৃথিবীর সবচে বড় জাতীয় মেলা হিসেবে মিউনিখের অক্টোবর ফেষ্টকে ধরা হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো লাখো লোক এই আনন্দমেলায় অংশ নেয়ার জন্যে জার্মানীর বাভারিয়া প্রদেশের রাজধানী মিউনিখে ভীড় করে। ইউরোপের আশে পাশের দেশগুলো ছাড়া সুদুর আমেরিকা, কানাডা বা অষ্ট্রেলিয়া থেকেও অনেকে যোগ দেয় এই অনুষ্ঠানে। বাভারিয়ার ঐতিহাসিক পোষাক লেদার হোজে (চামড়ার প্যান্ট ) পুরুষ ও মেয়েদের ডির্নডেল (বিশেষ ধরণের ফ্রক) পড়া নারীতে তখন ছেয়ে যায় শহর। সেই সাথে চলে ট্রাডিশনাল বাজনার তালে তালে নাচ।

আধুনিক চলনবলন ও মধ্যযুগীয় পোষাক ও বাজনার জমকালো সমারোহে মেতে উঠে পুরো শহর। এ অনুষ্ঠানের শুরু 1810 সালের 12ই অক্টোবর। প্রিন্স লুডউইগ ও প্রিন্সেস টেরেসার বিয়ের পর মিউনিখ শহরের এই মাঠে সাধারণ জনগনের জন্যে বিবাহ পরবর্তী অনুষ্ঠান হিসেবে বিশাল এক ঘোড়দৌড় এর আয়োজন করা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছর পালিত এই অনুষ্ঠান নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাঝে পৃথিবীব্যাপী পরিচিত এই অনুষ্ঠানের চেহারা ধারণ করে। অক্টোবরের শীতের কারণে একে সেপ্টেম্বরে এগিয়ে আনা হলেও এ অনুষ্ঠানের নাম অক্টোবর ফেষ্টই রয়ে যায়।

মেলার প্রধান আকর্ষন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে বাভারিয়ার বিখ্যাত বিয়ার ও সবার জন্যে নানা ধরণের খেলাধুলাও আনন্দের বন্দোবস্ত। বিয়ার পানের জন্যে এখানকার বড়বড় বিয়ার প্রস্তুতকারী কোম্পানী বিশাল হলঘর তৈরী করে। হাজার হাজার লোক বাজনার তালে তালে বিয়ারের চুমুকে চুমুকে তাদের সারা বছরের কর্মময় জীবনের অবসাদ ভোলায় প্রয়াসী হয়। এক একটি বিয়ার গ্লাসে (এখানকার ভাষায় বলা হয় মাস) এক লিটার বিয়ার ধরে। তাতে এলকোহলের পরিমানও সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেশী থাকে।

সেই সাথে চলে মুরগীর রোষ্ট। তিন সপ্তাহ ধরে সকাল এগারোটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত ধরে চলে এই পানপর্ব। সেই সাথে বিয়ার হলের বাইরে চলে নানা ধরণের আমোদের জন্যে তৈরী চড়কীও যানবাহনের যান্ত্রিক শব্দ ও তাতে অংশগ্রহনকারী নারী পুরুষ ও শিশুদের আনন্দ চিৎকার। মনে হয় সারা শহরটিই মেতে উঠে আনন্দে। এই তো গেলো মুদ্রার একটি পিঠ।

অন্য পিঠটির চেহারা তেমন সুখপ্রদ নয়। সন্ধ্যা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশ মাতাল নারীপুরুষে ভরে উঠে। কেউ শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তায়, কেউ বমি করছে কোনায় দাড়িয়ে, কেউবা অন্যের কাধে ভর করে কোনক্রমে ফিরে যাচ্ছে বাড়ী। কখনো কখনো ছোটখাট হাতাহাতিও দেখা যায়। কিন্তু মুল পরিবেশটি আনন্দের হওযায় তা বেশীদুর গড়াতে পারে না।

পুলিশ পাহাড়া ও এ্যম্বুলেন্সের বাড়িয়ে দেয়া হয় এ সময়ে। প্রায় সবার ভেতরেই এ সময়টাতে সহশীলতার চেষ্টা থাকায় পরিস্থিতি বেশী অপ্রীতিকর হয় না। তাছাড়া অফিস আদালতে কাজের কোন তি হয়না বললেই চলে। প্রায় সারারাত বিয়ারের আনন্দে কাটিয়ে পরদিন কাজে অনুপস্থিত থাকা বা অবহেলা করার মতো জার্মান খুব কমই দেখা যায়। 2005 সালে 6 মিলিয়ন দর্শক এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন।

6 মিলিয়ন লিটার বিয়ার ও প্রায় পাঁচ লাখ মুরগী বিক্রি করা হয়। এই প্রদেশের বাৎসরিক আয়ের এক বিরাট অংশ এই অনুষ্ঠানের আয় থেকে সরকারী কোষাগারে প্রবেশ করে। বড় বিয়ার কোম্পানীর সারা বছরের বিক্রির প্রায় এক তৃতীয়াংশ এখানেই হয়। বারো হাজার লোক এ সময়ে এখানে কাজ করে থাকেন, এর মাঝে 1600 জন টেবিলে টেবিলে বিয়ার সার্ভিসে ব্যস্ত। দুই হাতে একবারে আট থেকে দশটি এক লিটারের বিয়ার গ্লাস নিয়ে শত লোকের ভীড় ঠেলে টেবিলে টেবিলে বিয়ার পরিবেশন করা সহজ কাজ নয়।

যারা এ কাজটি করেন তারাও এ অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ জমকালো আকর্ষন। 1980 সালের 26 শে সেপ্টেম্বর এই অনুষ্ঠানএলাকায় ঢোকার প্রধান তোরনে এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসবাদীরা। তাতে 13 জন দর্শক নিহত ও 200 জন আহত হন। জার্মানীর ইতিহাসে এটা সবচে' বড় সন্ত্রাসী আক্রমণ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।