আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মচমচে : মুড়িমঙ্গল

সুন্দরী বালিকাদের যত্ন করে কামড়াই

চ্যানেল আইতে মুড়ি নিয়ে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম। সেটা দেখেই এনথু পেলাম। ভাবলাম, ক্ষতি কী, লিখি। মুড়ি আমার প্রিয় খাদ্য। ঝাল চানাচুর, আচারের তেল, ছোলা-আলু, পেঁয়াজকুচি, মটরশুঁটি, মাঝে মাঝে ভুনা গরুর মাংসের কুচি আর ইত্যাদি মিশিয়ে মাখিয়ে খেতে খেতে বই পড়ি।

মুড়ির সঙ্গীসাথী সময়ের সাথে পাল্টায়, কিন্তু জীবনে চলার পথে মুড়ি আমার সাথী। হে মুড়ি, তোমাকে ভালোবাসি। তবে মুড়ি ভাজতে দেখিনি কখনো। দরকারও পড়েনি। ভাজা হয়েই মুড়ি বাজারে আসে, সেখান থেকে কিনে আনা হয়।

আমাকে মেখেও দেয়া হয়। মুড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ভোজনে। দিনকাল খারাপ গেলে নিজেকে মেখে খেতে হয় (যেমন গভীর রাতে), তখন মুড়ির গায়ে আমার আগ্রহী হাত পড়ে। মুড়ি মাইন্ড করে না। ভালোবেসেই তো গায়ে হাত দেই।

সঙ্গম করে মুড়ি খাও, এমন একটা ঝাড়ি আছে। আমাকে কেউ ঐ ঝাড়ি দিলে হেসে ফেলবো। বলবো, আচ্ছা। বলা লাগবে? ও তো এমনিতেই খাবো। তো, এমনই প্রেমঘন সম্পর্ক মুড়ির সাথে আমার, ঠিক যেন খাদ্যখাদক নয়, যেন এক অব্যক্ত প্রেমও ঐ মশলার সাথে মাখা হয়ে যায়।

মুড়ি, তোমার নেই জুড়ি। আজকে টিভিতে দেখি বাজারে কিছু খানকিরপোলা-টাইপ মুড়ি উৎপাদক ইউরিয়া মিশিয়ে মুড়ি ভেজে মার্কেটে ছাড়ছে। সাথে হাইড্রোজ। উদ্দেশ্য ঠিক সাধু বলা চলে না। ইউরিয়া আর হাইড্রোজ মিশিয়ে ভাজলে নাকি মুড়ি একটু ফুলকো হয়, একটু সাদাটে হয়, তবে ঝাঁঝরা হয়ে যায় একেবারে।

আমি এই ইউরিয়ামিশ্রণের গল্প যে আগে শুনিনি তা নয়। গা করিনি। মেশাক। নাহয় একটু পেট খারাপ করবে। তাতে কী।

কত কিছু হজম করে ফেলি। বাঙালি পেট। গানপাউডার দিয়ে ভাজলেও কাবু করতে পারবে না। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জনৈক শিক্ষক আমাকে ভড়কে দিলেন। তিনি বললেন, ইউরিয়া তো ক্ষার।

পেটে ঢুকে সে আগে পেপটিক এসিডে জরোজরো পরিবেশটার বারোটা বাজায়, তারপর আবার খাবারের সাথে মিশে রক্তে ঢোকে, ওখান থেকে মগজে, হৃদয়ে ...। নানা জায়গায়। আমি সাথে সাথেই বুঝে ফেলি, কেন আমার এই হৃদয়ঘটিত জ্বালা। কেন এই মাগজিক অধঃপতন। সেই মুড়িমাখা বিষ আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।

লোহার বাসরে ফুটো গলে সাপ ঢুকে পড়েছে একেবারে। বলতে না বলতেই আবার শ্রদ্ধেয় শাইখ সিরাজ সরজমিন সারমাখা মুড়ির সারমর্ম তুলে ধরেন। সসার মুড়ি আর অসার মুড়ির গুণগত তফাৎ ততক্ষণে বুঝে গেছি, রূপগত তফাৎও তিনি দেখিয়ে দেন। ইউরিয়াওয়ালি মুড়ি (স্ত্রীলিঙ্গেই বলি), আগেই বলেছি, ফ্যাকাসে, ফ্লাফি, কিন্তু ফাঁপা। আর ইউরিয়ার মেকাপবঞ্চিতা দেশি মুড়ি একটু বাদামী, কিন্তু তন্বী আর সলিড।

আমি তৎক্ষণাৎ অন্দরমহলে এত্তেলা পাঠাই, মুড়ির নমুনা দেখতে। হাতে নিয়ে দেখি, উঁহু, এগুলো সেই ফোঁপরা মাল। ইউরিয়া, হাইড্রোজে গিজগিজ অবস্থা। এরপর দেখি শাইখ সিরাজ আলাপ করছেন জনৈক সুশীল মুড়ি উৎপাদকের সাথে। উনার উৎপাদিত মুড়িও সুশীলা।

ইউরিয়া বা হাইড্রোজ তিনি মেশান না। কেন মুড়িতে ইউরিয়া মেশানো হয়, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 50 কেজি চাল থেকে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে 44 কেজি মুড়ি হয়। এই 6 কেজি "লস" পুষিয়ে নিতেই অনেকে ঐ কাজ করে, মুড়িতে ইউরিয়া মেশায়। রাগে আমার শরীর জ্বলতে থাকে, 6 কেজি মুড়ি একটি একটি করে ঐ ইউরিয়াবাজদের অপ্রশস্ত কোন দ্্বার দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেবার একটা অন্যায় বাসনা জ্বলে ওঠে মনের বারুদে। কেমন যেন নিঃস্ব, রিক্ত বোধ করি, ঠকে যাই একেবারে।

এ যেন সোফিয়া লরেনের ছদ্মবেশে কন্ডোলিদজা রাইসের সাথে উদ্দাম শারীরিক প্রেমের অপঅভিজ্ঞতা। আমার বেচারা পাকস্থলীর ওপর মায়া হয়। মগজে আর হৃদয়ে হাত বুলাই। রক্ত তো শরীরের আরো আরো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে গিয়ে বিশেষ বিশেষ সার্ভিস দেয়, ভয় হয় ওইসব ডিপার্টমেন্টেও কোন দীর্ঘমেয়াদী বদআছর পড়ে কি না। সব টুলস জরুরি ভিত্তিতে ঘন ঘন পরীক্ষা করে দেখতে হবে, এমন ভাবতে ভাবতে দেখি শাইখ সিরাজও পরীক্ষা করছেন মুড়ি নিয়ে।

একেবারে বাজার থেকে মুড়ি সংগ্রহ করে তিনি পাঠিয়েছেন বিএসটিআইতে। কিন্তু সেখানে মুড়িতে ইউরিয়া বা হাইড্রোজ পরীক্ষার কোন স্বীকৃত পদ্ধতি নেই, সংশ্লিষ্ট কর্তা সিরাজ সাহেবকে প্রতিশ্রুতি দেন যে শীঘ্রই তিনি অমন একটা টেস্টিং মেথড খাড়া করে টেস্ট শুরু করবেন। ওদিকে সুশীলা মুড়ির দাম চড়া, কেজি 60 টাকা। দুশ্চরিত্রা মুড়ির কেজি 28 টাকা। তার ওপর আবার ফ্যাকাসে, ফুলকো, লোকের কাছে কদরও বেশি।

বাঙালি দেখলাম মোটা, ফর্সা জিনিস ভালোবাসে। বাদামী, তন্বী ... এমন ভূমধ্যসাগরীয় চেহারা মার খেয়ে যায় এই বদ্্বীপে। যতোসব বদলোকের আখড়া। তবে কি মুক্তি নেই এই অপমুড়ির হাত থেকে? তখনই দেখি চ্যানেল আইতে এক প্রিয় মুখ, ভ্যাজালকারীর যম, বাসি খাবারবিক্রেতার দুশমন, বাংলার রবিনহুড ম্যাজিস্ট্রেট রোকনোদ্দৌলা। এবার ভরসা পাই।

রোকনোদ্দৌলা কঠিন চীজ, একবার উঠেপড়ে লাগলে তিনিই রাজপুত্র রোকনকুমার হয়ে বাংলার দুর্গতা মুড়িকে আবার ছিনিয়ে আনবেন দৈত্যদানোর হাত থেকে। জয় মুড়ি, জয় রোকনকুমার। বিশেষ দ্রষ্টব্য: মুড়িওয়ালা মামু, মুড়ি সাবধানে বেইচো। ইউরিয়া দেখলে কিন্তু ... সেইরকম!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।