আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনে কি পড়ে না... কোন শ্রদ্ধার বাণী?

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

"মনে কি পড়ে না তব মা'র মুখ খানি খুঁজে কি পাও না কোন শ্রদ্ধার বাণী?" কেউ তার স্রষ্টাকে মানলো কি মানলো না এ প্রশ্ন না হয় ঊহ্যই থাকলো, কিন্তু পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীকেই পিতা-মাতার মাধ্যমেই আসতে হয়; একথা অস্বীকার করা কারো পক্ষেই কখনো সম্ভব নয়। আর তাই পিতা-মাতার প্রতি একটা প্রাকৃতিক ভালবাসাবোধ এবং স্বাভাবিক একটা সম্মানবোধ আমাদের প্রতিটি অন্তরে স্বভাবতঃ বিরাজ করে। তেমনিভাবে পিতা-মাতার সাথেই সম্পর্কিত আরো কিছু সম্পর্ককেও আমরা আমাদের আত্মারই এক একটা অংশ মনে করি; ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং এমনি আরো অনেক জাগতিক আত্মীয়তার মূল সূত্র কিন্তু পিতা-মাতাই। পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীকুলের চেয়ে বিবেকে-জ্ঞানে শ্রেষ্ঠ বলে আমরা মানুষরাই এসবের সবচেয়ে বেশী মূল্যায়ণ করতে পারি এবং করিও। তথাপি র'য়ে যায় এমন কিছু, যা উন্নত শির মানবকেও বানিয়ে দেয় পায়ের ধুলি, নিকৃষ্ট কীট।

এ জন্যই পৃথিবীর প্রাণীকুলের মধ্যে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ আবার মানুষই সর্বনিকৃষ্ট। মূলতঃ পৃথিবী দেখার মাধ্যম; পিতা-মাতার মত এই শ্রেষ্ঠ সম্মানিতদেরকে যারা কথায় কথায়, হাস্যোল্লাসে লাঞ্ছিত করে, করে অপমানিত, তারা যে চিরকালই সর্বনিকৃষ্টদের দলে তা আর বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। একজন বাবা, একজন মা তাদের সন্তানের কাছ থেকে কতটা সম্মান আর শ্রদ্ধা আশা করে, তা একমাত্র কেউ বাবা কিংবা মা হওয়ার পরই উপলব্ধি করতে পারে; এর পূর্বে শিক্ষা ও জ্ঞান দ্বারা অনুভব করে থাকে মাত্র। একজন বোনের লাঞ্ছিতা হওয়াটা কতটা কষ্টের তা শুধুমাত্র বিদগ্ধ কোন ভাই-ই বুঝতে পারে। যে কোন অপরাধ কর্মের মত এখানেও অবশ্যই থাকে দু'টি পক্ষ- অপরাধী আর ভুক্তভোগী।

দোষে-গুণে হয়তো হতে পারে দু'পক্ষই কখনো সমান, কখনো কমবেশী কিংবা নিতান্তই যুলুম-নির্যাতন পর্যায়ের। কিন্তু মানবতাবোধ থেকে একজন মানুষ কখনোই বিচু্যত হতে পারে না, প্রতিশোধ নিতে হলেও একমাত্র সত্যিকারের মানুষই পারে নীতিবোধকে অক্ষুণ্ন রেখে, দারুন ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে প্রতিশোধ নিতে; অন্যথায় শুধুই ধৈর্য ধরতে। কারণ, মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেললে তার মধ্যে আর কোন বন্য হিংস্র জন্তুর মধ্যে পার্থক্য থাকে শুধুই চেহারা-সূরত আর পোশাকের; এর বেশী নয়। কিন্তু কষ্টের কথা যে, আমাদের সমাজের স্বাভাবিক প্রাণীকুলের মাঝে মনুষ্য শ্রেণীও একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে; যে পর্যায়ে সত্যিকারের প্রাণীরাও পেঁৗছুতে পারেনি এখনো। আমরা কি চাই না সত্যিকারের মানুষ হতে? অবশ্যই চাই, কোন মানুষই নিজেকে পশু বলে স্বীকার করবে না, এটাই বাস্তব।

আবার এও বাস্তব যে, পশু যত উত্তম চরিত্রের, বিশ্বাসী ও প্রভু-ভক্তই হোক না কেন (যদিও সব পশুই তার স্রষ্টার বিধান মেনে চলার কারণে সেসব গুণে গুণান্বিত) কখনোই মানুষের মর্যাদার পর্যায়ে পেঁৗছুতে পারবে না। শুধু মাত্র এই মানুষ জাতিই পারে সর্বনিম্ন স্তর থেকেও আবার উপরে উঠতে, এমন উপরে যার উপরে সৃষ্টিজগতের আর কেউই উঠতে পারে না। পৃথিবীর মানুষকে সেই মহাসম্মানের উচ্চস্থানে দেখতে চান আমাদের সবার স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ তা'আলাও, আর তাই তিনি যুগে যুগে মানব জাতির প্রতিটি অংশের কাছেই তাঁর পক্ষ থেকে পাঠিয়েছেন শিক্ষক নবী-রাসূলগণকে, যারা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে সস্মান করতে হবে পিতা-মাতাসহ আত্মার আত্মীয়দেরকে। আল্লাহ্ তাঁর বাণীর মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছেন পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের মর্যাদা আমাদের নিকট কি এবং কতটুকু। আল্লাহ্ রাব্বুল 'আলামীন বলেন ঃ [গাঢ়]"স্মরণ কর, যখন ইস্রাঈল-সন্তানদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবে না, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও দরিদ্রের সাথে সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সদ্যবহার করবে, সালাত প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত দিবে, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী।

"[/গাঢ়] [সূরা আল-বাকারাহ্ ঃ 83] প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাণীতে বলেন ঃ [গাঢ়]'কোন ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়া কবীরা গোনাহ্র অন্তভর্ুক্ত। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো ঃ হে আল্লাহ্র রাসূল, কোন লোক কি তার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে? তিনি বললেন ঃ হাঁ (দিয়ে থাকে)। যেমন- একজন অপরজনের বাপকে গালি দেয়, তখন সেও পাল্টা এ লোকের বাপকে গালি দেয়। আবার ঐ ব্যক্তি একজনের মা'কে গালি দেয়, ফলে সেও ঐ ব্যক্তির মা'কে গালি দেয় (সুতরাং, ব্যক্তি নিজেই এভাবে তার পিতা-মাতাকে গালি শুনায়)। [/গাঢ়] [হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ্ ইবনে 'আমর ইবনুল 'আস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু।

সহীহ্ মুসলিম, প্রথম খণ্ড, হাদীস ঃ 170] অথচ কত সহজেই না আমরা এসব অপকর্ম করে যাচ্ছি, ধ্বংস করে যাচ্ছি নিজেদের প্রকৃত বোধ- মনুষ্যত্ববোধকে। ক'দিন বাঁচবো প্রতিটি প্রজন্ম? আমাদের জন্য কি এখনো সময় আসেনি আপনাপন পিতা-মাতা, ভাই-বোনকে সম্মান দেখানোর, ইজ্জতের হেফাজত করার? কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী তো আমরা আমাদের স্রষ্টার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আর হাদীসের শিক্ষা থেকে আমরা পাচ্ছি যে, আমি-আপনি যদি কারো পিতা-মাতাকে, ভাই-বোনকে অপমানিত করি বা করতে চাই, তাহলে প্রকারান্তরে যে নিজ নিজ পিতা-মাতা আর ভাই-বোনকেই লাঞ্চিত_অপমানিত করে যাচ্ছি, অন্ততঃ মানুষ হিসাবে এ চিন্তাটুকু করার মত বিবেক-বোধ কি আমাদের নেই? সকলের শুভবুদ্ধির উদয়ের প্রার্থনা আর কল্যাণ কামনা করছি; সবার কাছেও তাই সবার জন্য সেই অনুরোধ। ছবির জন্য কৃতজ্ঞ [লিংক=যঃঃঢ়://িি.িশধযষরষ.ড়ৎম/এরনৎধহগঁংবঁস29.লঢ়ম]যেখানে[/লিংক]।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।