অরূপ, বস্নগে লেখা হয় না, কিন্তু মাঝে মাঝে পড়া হয়। আপনার লেবানন- মাই এ্যাস লেখাটি পড়ছিলাম এবং মনে পড়ছিলো কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। পরে আপনার লেখার নীচে আসা মনত্দব্যগুলি পড়ে মনে হচ্ছিলো, আপনি মনে হয় মৌচাকে নয়, হায়নার গুহায় গিয়ে প্রবেশ করেছেন, এবার আপনাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবে সবাই এবং উলঙ্গ-উলস্নাসে মেতে উঠবে। এবং হয়েছেও তাই।
পরে আজ এসে দেখলাম আপনি আপনার বক্তব্যের কিংবা মেজাজের ভুল স্বীকার করেছেন।
আপনার এই ভালত্বটুকু হয়তো সুশীল বিবেকের কাছে গ্রহণীয় কিনত্দু যাদের উদ্দেশ্যে আপনার মেজাজের এই ভাঙন তাদের মনকে দ্রবীভ্থত করতে পারবে কি? তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন _ ধরনের কথা যদি ধরেন তাহলে বলবো, আজকে বাংলাদেশে এ কারণেই সুশীল ও সেকু্যলার শক্তির পরাজয় ঘটেছে। সশস্ত্র ধর্ম-সন্ত্রাসের সামনে আপনি যদি "এই গরম্ন সরে দাঁড়া" জাতীয় বাক্য বলেন তাহলে আপনাকে শানত্দিনিকেতনী ঢংগা হিসেবে বিদ্রম্নপ শুনতে হবে নইলে আপনি কিংবা ধর্মের ছুরি বা বোমায় নিহত হতে হবে। আপনার এই ভুল স্বীকারকে তাই নিতে পারিনি সহজে, মনে হয়েছে বিবেকের দংশন কিংবা বিবেকবান সহৃদয়তা তাকেই দেখানো উচিত, যারা এর মর্মটা বুঝবে। মুক্তিযুদ্ধ যাদের গাত্রদাহের কারণ, বাঙালির বিজয় যাদের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য নয়, যারা এখনও তিন লাখ আর ত্রিশ লাখ নিয়ে কুতর্কে নেমে গোটা মুক্তিযুদ্ধকেই হাস্যকর করে তোলে তাদের উদ্দেশ্যে আপনার মেজাজের যে বিস্ফারণ ঘটেছিল, সেটাই সঠিক ছিল, আপনার বিবেকের এই দংশিত রূপ তাই কষ্টই দিল। কিন্তু সবটাই আপনার ব্যক্তিগত, তারপরও কথা থেকে যায়, আপনার সঙ্গে যারা সহমত পোষণ করে কিংবা ধর্ম-সন্ত্রাসের সামনে পিছু হঠে হঠে যাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল, তারাও যদি আপনার মতো প্রথমে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার বিবেকের কারণে মাথা নুইয়ে ফেলে, তখন ব্যাপারটা কেমন হবে, বলুনতো?
যাকগে, লেবানন বিষয়ে আপনার বক্তব্য পাঠে ব্যক্তিগত যে অভিজ্ঞতার কথা মনে এসেছিল সেটা বলে শেষ করছি।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছি সেখানে বহু দেশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে ফিলিসত্দিন, লেবানন, জর্দান, মিশর ও সিরিয়ার ছেলেরা সংখ্যায় অনেক ছিল। মাঝে মাঝে ফিলিসত্দিনিদের কোনও জাতীয় দিবস অথবা প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়ারও সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে গেলাম যে, কি ফিলিসত্দিন, কি লেবানন, কি জর্দান-সিরিয়া-মিশর, কোনও দেশের ছাত্ররাই আমাদের মানে বাঙালিদের ঠিক ভাবে গ্রহণ করে না। প্রশ্ন করলাম অনেকের কাছেই, ওদের একটাই জবাব, তোমরা ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিসত্দান ভেঙেছো, তোমরা প্রকৃত মুসলমান নও। ভেবে দেখুন বিষয়টা, ওদের অসত্দিত্বের লড়াইয়ে সেই প্রথম থেকেই বাঙালির অংশগ্রহণ সক্রিয় এবং মনসত্দাত্তি্বক উভয়ই এতোটা প্রকট ছিল যে, আনত্দর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও বাঙালি গেরিলা যোদ্ধার ছবি দেখানো হতো ফিলিসত্দিন বিষয়ক কোনও সংবাদে, কিন্তু ওরা আমাদেরকে দোষারোপ করে পাকিসত্দানের অবকাঠামো থেকে বেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য! বললে হয়তো কেউই বিশ্বাস করবেন না যে, ফিলিসত্দিনি কিংবা লেবানিজ বা আরবীয় কোনও অনুষ্ঠানে বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হতো না।
তার মানে এটা নয় যে, লেবাননে ইসরায়েলী বর্বরতা বৈধতা পেয়ে যায়, কিন্তু কষ্ট হয় খুব, তোমার জন্য আমি ডুব দিতে পারি কিন্তু তুমি আমার জন্য পা ভেজাতেও পারো না??
আমি জানি এবং আমার মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ওদের এই অবহেলায় বাঙালির কিছুই এসে যায় না, কিন্তু যে জাতি কিংবা দেশ আমার বাংলাদেশ, বাঙালীত্ব ও স্বাধীনতাকে কটাৰের চোখে দেখবে তাকে আমরা ভালোবাসবো, কিংবা তাদের জন্য সহমর্মিতা উজাড় করে দেবো সেটা আশা করাটাইতো অন্যায়। এটাতো আমাদের সৌজন্যবোধ যে, আমরা মধ্যপ্রাচ্যের এই অগণতান্ত্রিক ও অশানত্দির জন্য মানবিক ভাবে কাতর হই, কষ্ট পাই। কিন্তু তাই বলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর আত্ম অংহবোধকে বিকিয়ে দিয়ে শুধু মুসলমান বলেই ওদের জন্য জীবনপাত করাটাকে কি আখ্যা দেওয়া যায়? মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হলে তাকে যেনো কী বলে?
আপনার জন্য অমিয় শুভেচ্ছা অরূপ। ছবিটি গণহত্যায় নিহত বাঙালির, অথবা পৃথিবীর অন্য যে কোনও মুক্তিকামী জাতির, কি আসে যায় তাতে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।