আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়াইলড মিডল ইষ্ট

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

ঘোড়াটা খেজুর গাছের সাথে বেঁধে পানিতে চুমুক দিলো সাদাত বিন ওয়াকিল, গত তিন দিন ঘোড়ার পিঠেই কেটেছে বেশীর ভাগ সময়, এই মরুভূমিতে দিনের বেলা চলা কষ্টকর, মাঝে মাঝে তাপমাত্রা বেড়ে 40 ডিগ্রি হয়ে যায়। বয়েস ত্রিশের কোঠায়, পোড় খাওয়া চেহারা, চোখের কোনে ধূর্ততা আর নিষ্ঠুরতা, দেখলেই বোঝা যায় অনেক রক্তপাত দেখেছে এই চোখ। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে, হাফিজ আল আসাদের এখানেই দেখা করার কথা। সীমান্তে উত্তেজনা, প্রহরী সারাক্ষণ টহল দেয় তবু বিস্তৃর্ন সীমান্তে সামান্য প্রহরী দিয়ে সামাল দেওয়া শক্ত। দক্ষ ট্রাকার না হলে এখানে চলা ফেরা বুদ্ধিমানের কাজ না, দিনে দুপুরে মরীচিকার ধন্দ লাগে, সব কটা মরুদ্যানের খবর না জানলে বেঘোরে তৃষ্ণায় মৃতু্যবরণ করতে হবে।

সাদাত বিন ওয়াকিলের গায়ে এখনও লেগে আছে তিন রাত আগের বুড়ো আসমত শেখের মেয়ের স্তনের ছোঁয়া। আহা মেয়েটা বড়ই মোলায়েম ছিলো, অবশ্য বুড়ো আসমত শেখের ওখানে মেয়ের কমতি নেই, কিন্তু হট লোলা সেক্সি মেয়ের মতো অন্য কোনো মেয়ে নেই বুড়োর ওখানে, ভেবেছিলো সেখানেই রাত কাটিয়ে পরদিন রওনা দিকে ইরাকে। কিন্তু তার আগেই রুস্তম পাহলবির লোকেরা হাজির হলো। ওর সাথে এমনিতে রুস্তম পাহলিবীর কোনো শত্রুতা নেই, কিন্তু অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে এই ওয়াইলড মিডল ইষ্টে, আইন শৃংখলা ভেঙে পড়েছে, শেখেরা মোটামুটি নিজেদের মতো এলাকা ভাগ করে নিয়েছে, কেউ কাউকে ঘাটায় না, সবারই পোষা বাহিনী আছে, নিজস্ব সীমান্ত তারা নিজেরাই পাহাড়া দেয়। কোলের উপর একে 47টা নামিয়ে রেখে আবার বাইনোকুলারে চোখ রাখে সাদাত বিন ওয়াকিল, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না দিগন্তে, কোথাও কোনো ধুলো উড়ছে না, এই মরুভূমিতে টিকে থাকতে হলে শুধু পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের উপর ভরসা করে থাকলে চলে না আরও কিছু বাড়তি গুন লাগে, ঠিক তেমনই একটা অমঙ্গল আশংকা থেকেই সাদাত বিন ওয়াকিলের মনে হলো একটু সাবধান হওয়া প্রয়োজন, তার মনে হচ্ছে হাফিজ আল আসাদ আর বেঁচে নেই, তার পেট থেকে খবর বের করা শক্ত হবে কিন্তু পাহলবীর নৃশংসটার তুলনা পাহলবী নিজেই, একবার এক ছেলে তার অবাধ্য হয়েছিলো রুস্তম পাহলবী তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো বিছা ভর্তি খাঁচায়, অবশেষে যখন তার পরিবার তাকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়, ছেলেটার গোটা গায়ে অন্তত 500 বিছার কামড় ছিলো, বেশী দিন বাঁচে নি এরপর ছেলেটা।

তার নিজের ছেলে একবার তার কথা না মেনে বুড়ো আসমত শেখের এক মেয়ের ওখানে কাটিয়েছিলো একটা সন্ধ্যা রুস্তম নিজ হাতে চাবকে তাকে হত্যা করেছে। তার নিষ্ঠুরতার জন্য তাকে ভয় করে চলে তার শত্রুরাও। অবশ্য অনেকেই সুযোগ পেলেই তার পিছনে খঞ্জর গেঁথে দিতে পিছ পা হবে না। কিন্তু রুস্তম শেখের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে কথাটা বোধ হয় মিথ্যা না, যতবার কেউ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে ততবারই খবরটা কিভাবে কিভাবে যেনো জেনে গেছে রুস্তম পাহলবী আর সেই সব লোকেদের ঠাঁই হয়েছে মরুভূমি। সেখানেই পড়ে আছে, একবার একজনের পেটের চামড়া কেটে বেঁধে রেখেছিলো সালাওয়ানা মরুদ্যানে, শকুন এসে খুবলে খেয়েছে সেই অভাগাকে।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সাদাত বিন ওয়াকিলকে বললো সামান্য সামনে ঝুঁকতে, ঠিক তার পেছনে ঝোপে গিয়ে একটা গুলি বিঁধলো, সামনে বিস্তৃর্ন মরূভিমিতে কোথাও কোনো প্রাণচাঞ্চল্য নেই, অবশ্য সামনে যেই ছোটো ঢিবিটা দেখা যাচ্ছে ওটার পিছনে কেউ থাকতে পারে, একজন মানুষকে আড়াল দেওয়ার মতো যথেষ্ঠ চওড়া ওটা। সাদাত বিন ওয়াকিল চোখের কোন থেকে ঘামের রেখা মুছে সামনে তাকিয়ে থাকে, এখন যে খালাটা হচ্ছে সেটা অপেক্ষার খেলা। যে ধৈর্য্য হারাবে সেই মৃতু্য বরণ করবে, সাদাত বিন ওয়াকিল একে 47টা ধরে খেজুর গাছের আড়ালে শুয়ে পড়লো। ওখানে কেউ যদি তাকে টার্গেট করতে চায় অবশ্যই তাকে তার আড়াল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তার অগোচরে কিছুই হওয়া সম্ভব না।

কিন্তু যদি কেউ পেছন দিয়ে আসে, সে আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, ঘোড়া আর খেজুর গাছের আড়ালে সে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে শুয়ে পড়লো। মনে মনে হিসাব কষছে, সূর্য এখনও ঠিক পশ্চিমে হেলে যায় নি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হলো আরও অন্তত 2 ঘন্টা আছে, এর পর সূর্য ডুববে, ততক্ষণে ঐ ঢিবির আড়ালে সিদ্ধ হয়ে যাবে সে আততায়ী। আরও এক চুমুক পানি গলায় ঢাললো, ঘড়ির দিকে তাকালো মাত্রট40 মিনিট পার হয়েছে, অবশ্য শেষ বিকালে মরূভূমি থেকে তাপ বের হয় দ্্রুত, ঘামে জবজব করছে তার আলখাল্লা, কাজটা হাতে নেওয়া একদম উচিত হয় নি, আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত জানানো উচিত ছিলো। কিন্তু পয়সার লোভ, এই সামান্য কাজের জন্য ওরা 10 হাজার রিয়াল দিবে বলেছে, সামান্য একটা ব্রিফকেস পৌছে দেওয়ার জন্য এত টাকা কেউ ভুলেও দিবে না, অবশ্য শর্ত ছিলো ব্রিফ কেস খুলে দেখতে পারবে না, কে দেখতে যাবে, 10হাজার রিয়াল পেলে সে নিজের বৌকে পৌছে দিতে রাজি। সেই ব্রিফ কেস নিয়ে এখানে আসার কথা হাফিজ আল আসাদের, সে আসলো না, আর 1ঝাজার রিয়েলের লোভে সে এখন এইখানে বালিতে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।

অন্য পাশে কোনো নড়াচড়া নেই, বোধ হয় সময় স্থির হয়ে গেছে, আবারও ঘড়ি দেখলো, হায় আল্লাহ সময় এত আস্তে যায় কেনো, মাত্র 10 মিনিট। মনে হচ্ছে অনন্তকাল এভাবে মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছে সে। ঘোড়াটা নাক কুঁচকে কিসের যেনো গন্ধ শুকলো, তার পর নড়ে উঠতে চাইলো। দ্্রুত ঘুরেই ফায়ার করলো সে, মরুভূমির নিস্তব্ধতা ছিন্ন করে গর্জে উঠলো, এ কে 47, রি কয়েলে হাত সামন্য কেঁপেছিলো তাই গুলিটা ঠিক হৃৎপিন্ডে না লেগেছে ফুসফুসে। সেই গর্ত দিয়ে বুদবুদ আর রক্ত বের হচ্ছে, মৃতু্য নিশ্চিত, যদি এখানে ফেলে রেখে যায় তাহলে শকুনের ভোজ হবে এখানে আর সেই শকুনের উড়া দেখে অনন্ত 10 মাইল দুর থেকেও বুঝতে পারবে যে কেউ এখানে একটা মৃত দেহ পড়ে আছে।

সে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। আরও মিনিট 40 আছে সূর্য ডোবার, এখন পর্যন্ত সামনের ঢিবির আড়ালে কোনো নাড়াচাড়া চোখে পড়ে নি, ওর চোখের সামনে দিয়ে মিলিয়ে যেতে পারে না, কোথাও যাওয়ারও নেই এখান থেকে, চারপাশেই মরূভুমি, মাঝে সামান্য একটা ঝর্না, সবাই এই ঝর্ণার খোঁজও জানে না, জানে শুধু বেদুইনরা, ওদের বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোনায় ঘুরতে হয়, তাদের কাছেই এর খোঁজ পেয়েছিলো সে, মনে পড়ছে তার বাবার কথা, বলেছিলো বাবা, এই অসত্র সব সময় ব্যাবহারের প্রয়োজন নেই, অসত্র মানুষকে সাহায্যের তুলনায় ঝামেলায় ফেলে বেশি, তবে বুঝে শুনে ব্যাবহার করতে জানলে এর মতো বিশ্বস্ত বন্ধু অন্য কেউ না। সেই বাবার শরবতের দোকানে হামলা করলো রুস্তম পাহলবীর ছোটো ছেলে, সে তখন দামাস্কাসে, খবর পেয়ে আসতে আসতে বাবা মারা গেলো। রক্তের বদলে রক্ত, চোখের বদলে চোখ, সে গিয়েছিলো রুস্তম পাহলবির কাছে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায়। অথচ রুস্তম পাহলবী মাছি তাড়ানোর মতো তার দাবি অগ্রাহ্য করেছে, সে ফেরার পথে ওর 2 ছেলেকে মেরে ফেরারী হলো, রুস্তম পাহলবী তখন থেকেই তাকে খুঁজছে, জানে যদি ধরতে পারে তাহলে তার চামড়া ছিলে ফেলে রাখবে গনগনে মরূভূমিতে, যদি দয়া হয় তাহলে হয়তো একটা বুলেট গেঁথে দিতে পারে কপালে, নাতো শকুনের খাবার হওয়ার জন্য ফেলে রাখবে।

সেই কতদিন ধরেই সে আর কোথাও স্থির হতে পারে নি, বেশ বদল করে ঘুরছে, কোথাও থিতু হতে গেলেই অতীত মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য হাজির হয়েছে রুস্তম পাহলবির লোকেরা। এটা রুস্তম পাহলবীর সাথে তার একক লড়াই, নেহায়েত ভাগ্যগুনে এখনও বেঁচে আছে, রুস্তম পাহলবীর অন্তত 10 জন লোককে হত্যা করেছে সে। এই আসমত শেখের ওখানে আসাটা জরুরি ছিলো, নাতো রুস্তম পাহলবীর এলাকায় পা রাখতে সে সাহস পেতো না। তবে সে নিশ্চিত ঐ ঢিবির আড়ালে যে অপেক্ষা করছে সে নিশ্চিত রুস্তম পাহলবীর লোক না, ওদের ধৈর্য্য কম, সন্ধ্যা হওয়ার আগে সামান্য ঝিলিক চোখে লাগলো, বাঞ্চোত আয়না দিয়ে খেয়াল রাখছে, আরও একটু আঁধার ঘনালে কাছে গিয়ে দেখে আসবে আবার কার কোন ক্ষতি করলো সে। ঢিবির ওখানে ক্রল করে গিয়েও কাউকেই দেখতে পায় নি, কারো ছায়াও নেই সেখানে, বেকার এই 3 ঘন্টা সিদ্ধ হলাম এখানে, শ্রাগ করে ঘোড়া খুলে রওনা দিলো, গন্তব্য নিফফুর।

ফজল মিয়ার দোকানটা ভালোই, লোক বেশ হাসিখুশি, সাদাত বিন ওয়াকিলের চোখে চোখ পড়া মাত্রই দরাজ হেসে বললো যাযাকুল্লাহ খায়রুন, সেও হেসে বললো যাযাকুল্লাহ খায়ের। সামনে হেঁটে যাচ্ছে অপূর্ব এক মেয়ে, সে ইশারায় ফজলকে ডেকে বললো মেয়েটা কে? ফজল সন্ত্রস্ত হয়ে বললো, ওর দিকে চোখ দিবেন না ওটা আবদুল্লাহের নতুন বিবি, গেলো বার বৈরুতে যাওয়ার পর এই মেয়েকে তার মনে ধরেছে, সেখান থেকেই নিকাহ করে এনেছে তাকে, আলাদা বাসা করে দিয়েছে, আলাদা চাকর রেখেছে, অবশ্য সেই মেয়ের চাহিদা অনেক, আবদুল্লাহ বুড়ো হয়েছে, অবশ্য সবটাই চাকর বাকরের কাছে শোনা। প্রায়ই নাকি নতুন কোনো যুবককে ডেকে নিয়ে যায় চা পানের আমন্ত্রন জানিয়ে। ঘোড়াটা বেঁধে রেখেছে ফজল মিয়ার দোকানের রেলিংএ, সেখান থেকে ঘোড়াটা খুলে নিয়ে শিষ দিতে দিতে সে নেমে গেলো প্রধান সড়কে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।