আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ক্যাডেটজীবন ঃঃ পেয়ারা চুরি

আমার সাথে যোগাযোগ করতে http://bn.jinnatulhasan.com/blog এ ভিজিট করুন।

ক্যাডেট লাইফের ফার্স্ট অ্যাডভেঞ্চার ছিল পেয়ারা চুরি। আমাদের কলেজে ক্লাসরুমগুলোর পাশেই একটা বেশ বড় পেয়ারা বাগান ছিল। কিন্তু সেখানে প্রবেশ নিষেধ। যদিও প্রতিদিন বিকেলের খাবারের সাথে দুটো করে পেয়ারা দিত তবুর চুরি করার পেয়ারার মজা তাতে থাকতো না, বেশ পানসে পানসে মনে হতো।

ক্লাস সেভেনে যেসময়ে পোলাপাইন কলেজের নিয়মকানুনই বুঝতে পারে না, সেই সময়েই আমি পেয়ারা চুরি করে শ্রেষ্ট চোরদের খাতায় নাম লিখেছিলাম। প্রতিদিন বিকেলে দেখতাম বড় ভাইরা গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে পেয়ারা চুরি করে এনে পা দুলিয়ে দুলিয়ে খাচ্ছে। অথচ আমাদের কেউ সাহস করতে পারছে না। তাই আমাকেই অ্যাকসনে নামতে হল। যতদূর মনে পড়ে ওইদিন আমি আর মাসুদ একটা চল্লিশ লিটারের বালতি আর একটা বালিশের কভার নিয়ে গিয়েছিলাম পেয়ারা পাড়তে।

টুপটার পেয়ারা পাড়ি আর নিচু হয়ে দেখি গার্ড টের পেয়েছে কিনা। প্রায় শেষ দিকে একটা বেশ তরতাজা পেয়ারা দেখে মাসুদ দিল হেইয়া করে টান আর সারাটা গাছ কেঁপে উঠল। চারিদিকে ঝপঝপ করে পাকা পেয়ারা পড়ছে। আমরা ওগুলো কুড়াতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমাদের দশ-বার হাত সামনে ইয়া বড় ভুড়িওয়ালা গার্ড দাঁিড়য়ে আছে।

আমাদের তো রক্ত পানি হয়ে গেছে। ওই ব্যাটা ক্রমশঃ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ঝটপট ফন্দি আঁটলাম দু'জন দু'দিক দিয়ে দৌড় লাগাবো, ভুড়িঁয়াল ব্যাটা পেরে উঠবে না। সাথে সাথে ঝেড়ে দৌড়। ওই ব্যাটা আমাদের ধরতে না পেরে বারবার হুইসেল দিচ্ছে।

যতক্ষনে অন্য গার্ডরা বাঁশি শুনেছে ততক্ষনে আমরা রুমে পৌছে গেছি। সে যাত্রা বেঁচে গেলাম, কারন গর্াডদের ক্যাডেটদের রুমে ঢুঁকার অনুমতি নাই। এইবার ভক্ষনের পালা। প্রায় দেড় বালতি পেয়ারা হয়েছে(বালিশের ওয়ার + বালতি)। একটা, দুইটা, পাচঁটা খাওয়া যায়, তাই বলে দেড় বালতি পেয়ারা।

অন্যদিকে এক রাত পার হওয়ার পরেই সবগুলো পেয়ারা একসাথে পেঁকে গেছে। পাকা পেয়ারা গন্ধে রুমের অবস্থা খারাপ। কি করি কি করি ... কারন পোলাপাইন যদি জানে পেয়ারা পেড়েছি তাই সিনিয়রদের কানে যেতে বেশি সময় লাগবে না আর একবার সিনিয়ররা শুনলে যেই ডলা (punishment) খেতে হবে ভাবতে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছিল। কি আর করা সবগুলো নিস্বার্থের মতো বিলিয়ে দিলাম। কিন্তু পেয়ারা গন্ধ তখন থেকে গেছে।

অনেক বডি স্প্রে খরচ করলাম লাভ হচ্ছে না। অবশেষে ডেটল দিয়ে সারা রুম আচ্ছামতো ধোঁয়ার পর গন্ধ গেল। তারপর ছয় বছরে অনেকবারই পেয়ারা পেড়েছি, কিন্তু প্রথম দিনের স্মৃতি এখনও মনে আছে। 1999 এ কলেজ থেকে বের হবার পর দুই বার কলেজে গিয়েছি। শেষবার যখন গেলাম দেখি পেয়ারা বাগানটা আর নেই, খাঁ খাঁ করছে সেই জায়গাটা।

হঠাৎ বুকের মাঝে কেমন জানি একটা শূণ্যতা বোধ করছিলাম। মোবাইলে তোলা কয়েকটা ছবি আপনাদের জন্য। 1ম ছবিঃ কলেজের সম্মুখভাগ 2য় ছবিঃ হাউজের করিডোর 3য় ছবিঃ হাউজের সম্মুখভাগ, 3য় তলায় আমি থাকতাম 4র্থ ছবিঃ আমাদের ক্লাসরুম 5ম ছবিঃ পেয়ারা বাগান, তখন ফাঁকা ছিল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।