গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না
য়ারা যাবার তারা যায়। কিন্তু সকলেই যায় না। কেউ কেউ রয়ে যায়। ভীষণভাবে। আমরা তাদের অস্তিত্ব টের পাই আমাদের মনে-মননে-মগজে।
আমাদের ভাবনার পত্রপল্লবে তাদের উপস্থিতি থাকে যায়। আমাদের অনুভূতির গভীর তলদেশে তারা রয়ে যান নিষুপ্ত হাহাকার হয়ে।
লেখক মুজাফ্ফর আলী তালুকদার আমাদের ছেড়ে অনন্তলোকে চলে গেছেন ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। চলে যাবার আগে, এই চরাচরে আটষট্টি বছর বিচরণ করেছেন (১৯৪৬-২০১৩)। কখনো প্রগাঢ় মমতায় আবার কখনো ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো ন্যুব্জ শরীরে আমাদের ছায়া দিয়েছেন।
ঘাটাইলের সাহিত্য আন্দোলনের পতাকা, যদিও বিবর্ণ বিশীর্ণ, তার স্পর্শেই ছিল উজ্জ্বল-জ্যোতির্ময়।
প্রথমত লেখক তার চেয়ে বেশি সাহিত্য সংগঠক হয়ে ওঠেছিলেন মুজাফ্ফর আলী তালুকদার। নিঝুম পাড়াগ্রামের অন্ধগলিতে মণীষার আলো জালতে চেয়েছিলেন। কবিতা, গল্প, ছড়া আর উপন্যাসের উপজীব্য করে তুলেছিলেন সমাজের নানা মাত্রিক সমস্যা আর সম্ভাবনাকে। জীবনের উভয় প্রান্তের স্বপ্ন,স্বাদ ও আকাক্সক্ষাকে ছুঁয়ে যাওয়া শব্দগুচ্ছে ভরপুর তার সাহিত্যকর্ম আমাদের জাড্য থেকে জঙ্গমায় চালিত করে।
তার ধ্র“পদি ভাবনার স্পর্শে আমরাও হয়ে ওঠি অনিবার্য উত্তরাধিকার। তার হাতে গড়া একাধিক পাঠাগার ও সাহিত্য সংসদ এবং তার সম্পাদনায় প্রকাশিত একাধিক লিটল ম্যাগাজিন আমাদের জানান দেয়, কর্মই জীবন। হেমন্তের আকাশে হারিয়ে গেলে সবই শেষ হয়ে যায় না। বরং এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা সুকৃতিগুলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে অনন্ত সময়। মুজাফ্ফর আলীও বেঁচে থাকবেন অনেক দিন-মাস-বছর।
তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা আঠার। অপ্রকাশিত আছে আরো বেশ কিছু। প্রাতিস্বিক উপলব্দি, যা বিগত জীবনের নিরন্তর সংগ্রাম এবং তার মধ্য দিয়ে অর্জিত, আমাদের মনোলোকে ভিন্নতর আলোক সম্পাত করে। বিম্বিত সেই আলোকচ্ছটায় আমরা নিজেদের আবিস্কার করি। তার ডানা ভাঙ্গা পাখি, এ পথে অনেক রোদ, অনন্তে হারিয়ে যায় আশা প্রভৃতি গ্রন্থ পড়ে আমরা এমনই উপলব্দির মুখোমুখি হই।
দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন মুজাফ্ফর আলী তালুকদার। শিক্ষার্থীদের অন্তর্গত সম্ভাবনাকে বিকশিত করে কীভাবে তাদের স্বপ্নের বন্দরে পৌছে দেয়া যায় তা নিয়ে তিনি দীর্ঘ জীবন কাজ করেছেন। তার সাধনা ব্যার্থ হয়নি। তার ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই সমাজের নানা স্তরে সুখ্যাত হয়েছেন। শিক্ষকতাকে পেশাগত দায় বোধের বাইরে এনে বিবেকের দায় মিটিয়েছেন তিনি।
শেষ জীবনে তার খ্যাতির ডালপালা বিস্তৃত হয়েছিল দুই বাংলাতেই। সাইটশৈলা থেকে ধর্মতলা অবধি। পশ্চিম বাংলা থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন। একটি বইও বেড়িয়েছিল সেখান থেকে। সেখানকার সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে তার প্রচুর লেখাও ছাপা হয়েছে।
স্বীকৃতির সুখানুভূতি তার সাহিত্য সাধনাকে আরো বেগবান করেছিল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লেখার খাতা নিয়ে তাকে ঘুরতে দেখা গেছে যমুনার পলি বিধৌত বিস্তৃত উপত্যকায়।
[ লেখক মুজাফ্ফর আলী তালুকদার ১৯৪৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঘাটাইল উপজেলার সাইটশৈলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন টাঙ্গাইলের সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা আঠার ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।