আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি হতবাক, আপনিও কি?? মনে হয় না.....

"আমার একজন প্রিয় ব্লগার এর একখানা স্ট্যাটাস এ একজনের মহান বানী। আমার সে প্রিয় ব্লগারটিও কমেন্ট টির অনেক লাইকার এর মধ্যে একজনঃ " ওহে মহান ডাক্তার সম্প্রদায় । তোমাদের কিসের এত অসংকার । কিসের এত অভিমান । ৮০ টা বই আগা গোরা মুখুস্ত করেছ এইটার ।

আমার ২ জিবি মেমরী কার্ডে এর চেয়ে বেশি বই রাখা যায় । মুল্য ২০০ টাকা । তোমরা টেস্ট কর যন্ত্র দিয়ে । রিপোর্ট দেখে চিকিত্সা কর । খুব বেশি দিন দুরে নাই এদেশের ফেল্টুরাই এমন যন্ত্র বানাবে ।

যেটা একসাথে পুরা বডির ট্রিটমেন্ট করে প্রেসক্রিপসন দিয়ে দিবে । সেইদিন এই মহান ডাক্তার সম্প্রদায় কি করে খুব দেখার ইচ্ছা । এদের অহংকার কোথায় যায় দেখার খুব ইচ্ছা । " ঐখানে মন্তব্য করার একটুও ইচ্ছে হলো না। এ আর নতুন কি।

ফেসবুকে তো অনেক প্যাচাল পাড়ি , আজ একান্তই নিজের কথা বলি। ১২ বছর ধরে একটা মেয়েকে আমি পছন্দ করি। যার সাথে আমার প্রেম বা ভালোবাসা। মা বড় না বৌ বড় নামক প্রশ্নের ব্লাকমেইলিং এ এক বছরের ও বেশী সময়কাল ধরে বন্দী আমি , কারন বাবার জোড়ালো দাবী সরকারী চাকুরী না হতে আবার বিয়ার কথা তোলো কেন? আমি জানি একদিন সরকারী চাকুরী হবে। হওয়ার পর কি হবে সেইদিন শুনলাম।

এক ভাইয়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ তার পোষ্টিং দিয়ে রাখছে দিনাজপুর। থাকার কোন ব্যাবস্থা নাই , তাই হাসপাতালে ই থাকেন। মাসিক বেতন ১৭০০০ টাকা ছাড়া আর কোন ইনকাম নাই। আরেকজন শুনলাম চাকুরী হওয়ার কিছুদিন আগে বিয়ে করেছেন। কোন সাব সেন্টারেই পরিবার নিয়ে থাকার মত অবস্থা নেই।

অতএব একাই থাকেন। এক বৃহস্পতিবার বাসায় বেড়াতে এসে দুই দিন লেট করেছেন কর্মস্থলে যেতে, ব্যাস শোকজ নগদে। শাহাবাগে বি এস এম এম ইউর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে অনেককে দেখি দুপুর বেলা ভাত খায় না । রুটি আর কলা খায়। আর হাসি দিয়ে বলে দোস্ত মোটা হয়ে যাইতেছি।

মনে মনে হাসি, বন্ধু আমি তো জানি, এই মাসে খেপে যাইতে পারো নাই পকেট ফাকা। এই বুড়া বয়সে বাসায় টাকা চাইতেও তো লজ্জা লাগে। আমাদের ই এক বড় ভাই, এফ সি পি এস ফাইনাল পার্ট এ খালি ফেল করায় স্যাররা। সেইদিন দুঃখ করলেন, শুভ এই ঈদ এ বাড়ি যাইনাই , ক্লিনিক এ ছিলাম, কোরবানীর ঈদ এ বাসায় একটু contribute না করলে সবার মনঃক্ষুণ্ণ হয়। সেইদিন আমার এক আঙ্কেলের সাথে বিশাল ঝগড়া হলো।

তিনি বললেন ডাক্তার গুলা গ্রামে যেতে চায় না। আমি বললাম এটা তো আগের চিত্র । এখন ডাক্তাররা গ্রামে থাকে। বলে, মিছা কথা। যে যার দায়িত্ব পালন করবে না? সরকার টাকা দিয়া পড়ায়? কি বলবো? বললাম , আঙ্কেল ২৮/৩০ বছরের একটা মানুষ বিয়ে করবে না? তার সংসার হবেনা? তার বাচ্চা কে কি সে চাইতে পারে না একটা ভালো স্কুলে পড়াতে? সে কি চাইতে পারেনা এত্তোগুলা দিন কষ্ট করার পর এই সময়ে বাসায় এসে কারো হাতের ( বুয়া বাদে) একটু রান্না খেতে, কিংবা হোটেলের ঐ তেলে ভাসা তরকারী থেকে মুক্তি চাইতে বা পরিপাটি করে সাজানো একটা বিছানায় রাতে ঘুমাতে? ডাক্তার দের প্রতি অনেক অভিযোগ আপনাদের , কিন্তু First class gazetted officer হিসেবে একটা ডাক্তার কে কি দিয়েছেন আপনারা।

বেশী কিছু চাইনা , নুন্যতম মানবাধিকার টুকু দেন? কিছুদিন আগে গ্রামে গেলাম । থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক ডাক্তার ভাইকে বললাম ভাই আপনাদের তো বিসিএস হয়ে গেছে শান্তিতে আছেন। আমাদেরতো কেউ ডাক্তার ই ভাবেনা। আমাদের চেয়ে ম্যাটস থেকে পাশ করা সরকারী উপ সহকারী মেডিক্যাল অফিসার এর অনেক দাম। বললো, ভাই প্রত্যেকদিন যেই পরিমান পাতি নেতা আর সাংবাদিক এর ঝামেলা সামলাতে হয় ইচ্ছা করেনা আর চাকুরী করি।

মারামারি করে আইসা তাদের মন মত সার্টিফিকেট দিতে বলবে , না দিলে গায় হাত দিতেও কার্পণ্য করেনা। ৮ পাশ পোলাপাইন আইসা যখন তখন আইসা যা তা কয়। আর ভালো লাগে না। সব শুনি আর অবাক হই । কেন আসছিলাম এই প্রোফেশনে? বিন্দুমাত্র শান্তি নাই এখানে? সারা দিন রাত খেটেও নাই মানুষের একটু সহানুভুতি।

কেউ ই বুঝেনা কত কষ্ট করে কাটাতে হয় প্রত্যেক্টা দিন , প্রত্যেক্টা রাত। এমন কি মাঝে মাঝে নিজের খুব আপন জনও বুঝে না। এখনো বিসিএস নামক সোনার হরিন ধরা দেয়নি। বিসিএস হলেও পোস্টিং কই দেয় কে জানে। মানসিক , শারীরিক আর আর্থিক শান্তি যখন আসবে হয়তো তখন হয়তো বোনাস হিসেবে থাকবে ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন সহ নানান রোগ।

ইদানীং খুব তরুন , অল্প বয়েসী ডাক্তার মারা যাচ্ছে গত একবছরেই অনেকগুলো সুইসাইড আর কার্ডিয়াক কারনে মারা যেতে শুনলাম অনেককে। সারা দিন শেষে যখন বাসায় ফিরি , তখন সত্যি মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় না বেঁচে থাকি। এই অর্থহীন বেঁচে থাকার কোন মানে নেই। সবার জন্যে জান দিয়ে খাটলেও কেউ বুঝেনা । থ্রি ইডিয়ট এর একটা লাইন ( পুরোটা মনে নাই) খুব ভালো লাগে, এই ইঞ্জিনিয়ার লোক গুলো খুব চালাক, সবকিছু মাপার যন্ত্র বের করেছে কিন্তু মাথার প্রেশার মাপার যন্ত্র বের করেনি।

করলে হয়তো আমাদের মাথার ভেতরে বাড়তে থাকা চাপটা বোঝা যেতো। মাঝে মাঝে মনে হয়, I Quit বলে এই অকৃতজ্ঞ আর স্বার্থপর দুনিয়া থেকে সরে পড়ি। ( *** লেখাটি একান্তই ব্যাক্তিগত , আর এও জানি কথাগুলোর তাৎপর্য একমাত্র ডাক্তাররা ছাড়া আর কেউ ই বুঝবেন না, হয়তো পড়েও দেখবেন না। ডাক্তারদের অসহনীয় জীবনের বন্ধু ডাক্তাররাই। উল্লেখ্য সব ডাক্তার এর আগে বাংলাদেশী ডাক্তার হবে।

কারন ...থাক নাই বললাম ) (সংগৃহীত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।