ঘোষণার সাড়ে আট মাস পরও আমলাতান্ত্রিক ও পদ্ধতিগত জটিলতায় রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ বা সরকারীকরণ চূড়ান্ত করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষকেরা বলছেন, এই জাতীয়করণের জন্য তাঁদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের শেষ সময়ে এসে বিষয়টি আটকে যাবে কি না, তা নিয়েও তাঁদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। শিক্ষকেরা চান দ্রুত সরকারীকরণের কাজটি শেষ হোক।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, বিদ্যালয়গুলোকে অধিগ্রহণ করার পর এখন শিক্ষকদের জাতীয়করণের কাজ চলছে। পুরো কাজ শেষ করতে অক্টোবর মাস লেগে যাবে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয়করণের কাজ চূড়ান্ত করা হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।
এ নিয়ে কোনো সমস্যাও নেই। ’
গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শিক্ষকদের মহাসমাবেশে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত এক লাখ তিন হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণের পথ তৈরি হয়।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন স্তরে এই জাতীয়করণের কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রথম দফার ২২ হাজার ৯২৫টি এমপিওভুক্ত রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ৯১ হাজার শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণের কাজটি শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে তাঁরা সরকারি শিক্ষকদের মতো আর্থিক সুবিধাও পাচ্ছেন না।
ঢাকা, রাজশাহী, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক শিক্ষক প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ঘোষণা হওয়ার পরও জাতীয়করণ না হওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার একটি স্কুলের একজন শিক্ষক প্রথম আলো ডটকমের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে কোনো কারণে জাতীয়করণের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে না তো? আবার সরকার যদি পরিবর্তন হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যাবে না তো?
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়গুলো অধিগ্রহণের পর শিক্ষকদের তথ্যও তাঁদের কাছে চলে এসেছে। কিন্তু যেহেতু বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়ার বিষয় এখানে জড়িত, সে জন্য পদ্ধতিগত কারণে অধিগ্রহণ হওয়া বিদ্যালয়ে নতুন করে শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি করতে হচ্ছে।
তাই এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় উঠবে। তারপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আশা করি ঈদের আগেই জাতীয়করণের কাজ শুরু হবে এবং অক্টোবরের মধ্যে সেটি শেষ হবে। তবে সরকারীকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে গত ১ জানুয়ারি থেকেই।
শিক্ষকেরা বকেয়া হিসেবে এই টাকা পাবেন। ’
তবে সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার চাইছে তাদের মেয়াদের ঠিক শেষ মুহূর্তে জাতীয়করণের কাজটি শেষ করতে; যাতে নির্বাচনে এর রেশ থাকে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুুযায়ী প্রথম দফায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণ হবে। এই স্তরের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগে চার হাজার ৮২৫টি, রাজশাহীতে তিন হাজার ৩৭৫টি, চট্টগ্রামে তিন হাজার ১৮৯টি, খুলনায় তিন হাজার ৪৫২টি, বরিশালে দুই হাজার ৪২০টি, সিলেটে এক হাজার ৩৬২টি ও রংপুর বিভাগে চার হাজার ৩০২টি। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণের পর দ্বিতীয় ধাপে দুই হাজার ২৫২টি এমপিওবহির্ভূত বিদ্যালয় সরকারীকরণ করা হবে এবং তৃতীয় ধাপে নিবন্ধনের অপেক্ষাধীন ৯৬০টি বিদ্যালয় সরকারি করা হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।