আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছুডু বেলা-১

আমি যা শুনি এবং যা বুঝি তাই নিশ্বঙ্ক চিত্তে বলতে চাই।

আমি যখন প্রথম প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে যাই তখনকার ঘটনা। প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা হেটে স্কুলে যাইতাম। আগেই বলে রাখি আমাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের তালতলির একবোরে প্রত্যেন্ত অঞ্চলে। স্কুলের শিক্ষক ছাত্র নির্বিশেষে সবার প্রধান পরিধানের বস্ত্র ছিল লুঙ্গি এবং জামা।

আমাদের হিন্দু একজন ইংরেজির স্যার ছিলেন মনিন্দ্র চন্দ্র যিনি একাই প্যান্ট নামক বস্ত্র পরতেন যাকে ছোটদের ভাষায় বলা হত ঠোঙ্গা। সার্ট গেন্জিতে কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু লুঙ্গি ছিল একটা কমন পোষাক। তো আমি ছোট থেকেই লুঙ্গি পরিধান শাস্ত্রে খুব দুর্বল ছিলাম। কোন ভাবেই বজ্জাতের লুঙ্গিটা আমার পরনে ৪ মিনিটের বেশি থাকত না।

যার কারনে প্রতি ৪ মিনিটে এই বিদঘুটে বস্ত্র আমাকে খুলে আবার সযোরে বাধতে হত। দেখা যাইত স্যার বলল সাবাইরে পরিক্ষার খাতা বিলি কর। আমি খাতা দেয়ার মাঝখানে লুঙ্গিখানা এক হাত দিয়ে ধরে আর একহাত দিয়ে অতি কস্টে খাতা বিলি করতেছি। একদিন ক্লাসে স্যার দারা করাইলেন পরা জিজ্ঞেস করার জন্য। আমি পরা বলতে শুরু করছি ওমনি দেখি লুঙ্গি খানা পিছনের হারামজাদা ঠেঙ দিয়া টান দিছে।

তারাতারি ইজ্জত বাচাইতে লুঙ্গি খানা টাইনা ধরলাম। হঠাৎ স্যার এর চোখ পরল। স্যার কয় কিরে তোরে জিগাইলাম পরা তুই লুঙ্গি টাইনা ধরসস কেন?? কি কমু। তার পর যা ঘটল তার বলার কথা না। এত গুলা পোলামাইয়ার সামনে স্যার আমারে লুঙ্গি বান্ধার প্রাকটিস করাইলেন।

সবচেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা ঘটছিল একবার ধানের দিনে। উঠানে নতুন কাটা ধানের উচু পাজার উপর থেকে লাফের প্রাকটিস করছিলাম আমরা বারির সব সমবয়সি কাজিন রা। সবাই লুঙ্গি মাল কাচা মাইরা নিছিলাম যাতে কোন দুর্ঘটনা না হয়। তো ঠিক উঠানের সামনের দিকে বারির সব মেয়েরা বসছিল সাথে ছিল গ্রামের কিছু উঠতি সুন্দরি। আমি খুব হাক ডাক করে সবার দৃস্টি আকর্ষন করলাম "দেখ এই আমি লাফ দিতাছি''।

বড্ড শরমের কথা। খেয়াল করি নাই লাফ দেয়ার আগে আমার কাচা যে খুলে গেছে। ফলাফল যা হবার তাই হইল। মাটিতে ল্যন্ড করার পর আমি ''এক পোষাকে"। উপরে তাকাইয়া দেখি আমার বজ্জাত লুঙ্গিখানা হাওয়ায় ভাসিতেছে।

একবার স্কুলের সামনের মাঠে ক্লাস শেষে ফুটবল খেলতাছিলাম। লুঙ্গি মাল কাচা মাইরা জোরছে সবাই মিল্লা বলে পিছে দৌরাইতাছিলাম। হঠাৎ কইরা এক হারামজাদা লুঙ্গি ধইরা টান দিল। অর্ধেক শালার হাতে রইয়া গেল আর বাকি অর্ধেক আমার পায়ে বাইজা মাটিতে রইয়া গেল। আর আমি ?? আমি আর বল গোল বারের ভিতর ইজ্জত রক্ষার জন্য জালের মধ্যে হান্দাইয়া গেলাম।

হালার পুতে তার পর ৪ দিন টানা স্কুলে আয় নাই। আর যেই দিন আইছে সেই দিন আমার ছিরা লুঙ্গিডা এন্টিক হিসাবে নিয়া আইছে সবাইরে দেখানোর লাইগা। স্যার তো আরো এক কাঠি সরেস। তিনি সেইটা এখনো সযত্নে রাইখা দিছেন। গত বছর যখন স্কুলে গেলাম একটা প্রোগ্রামে স্যার আমারে চুপি চুপি বলতেছেন বাসার তোমার সেই লুঙ্গিটা এখনো আমার কাছে আছে।

স্যার এখন রিটায়ার্ট। বৃদ্ধ মানুষ একা একা থাকেন। মনে হয় মাঝে মধ্যে আমাদের এই জিনিষ গুলা দেখেন। আরো অনেক মজার স্বৃতি আছে ছোটবেলার। আস্তে আস্তে লিখব।

আমার শৈশব আর কৈশর কেটেছে গ্রামে। এমন একটা গ্রামে যেখানে বিদ্যুৎ ছিলনা। টিভি, ক্যাসেট আর সিনেমা ছিল না। ছিলনা আধুনিক অনেক কিছুই। অথচ এখন সেই গ্রামে কাটানো দিন গুলোকেই জীবনের স্বর্নালি সময় মনে হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.