আমি যা শুনি এবং যা বুঝি তাই নিশ্বঙ্ক চিত্তে বলতে চাই।
ছোট বেলায় তিনটা জিনিষ খুব ভয় পাইতাম
১) স্কুলের স্যারের বেত
২) ভুত
আর
৩)পুলিশ
বেত জিনিষটা ছিল একটা টনিক বা ওষুধের মত। প্রতিদিন কোন না কোন কারনে এইটার প্রয়োগ চলত আমার উপর। তবে পরা না পারার জন্য না চিমটি দেয়ার কারনে। ক্লাশে এমন কোন ছাত্র বা ছাত্রি বাকি ছিল না যে আমার হাতে একখান রামচিমটি খায় নাইক্কা।
একবার যদি কাওরে ধরতাম, চিক্কুর পাইরা পুরা ক্লাস মাথায় না তুলা পর্যন্ত ছারতাম না। ফলাফল............. বেত্রাঘাত।
ভুত!!!!
ভুতের ভয় একটা মারাত্মক সমস্যা ছিল আমার মইধ্যে। অন্ধকারে খাম্বারে বিভিন্ন সাইজের ভুত বানাইতে খুব ওস্তাদ ছিলাম। একটা মজার ঘটনা বলি।
আমাদের গ্রামের বড়ির বাথরুমটা ছিল মুল বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে। বুঝতেই পারতেছেন গাওগেরামের বাড়িঘর। তো দিনের বেলা কোন সমস্যা হইত না। সমস্যা হইত রাইতের বেলা যাইতে। কারেন্ট তো ছিল না।
কুপি নিয়া বাথরুমে যাওয়াটা আমার জন্য ছিল আজাবের মত। ফলে কাউরে না কাউরে আমার সাথে যাইতে হইত। সে বাইরে দারাইয়া থাকত আর আমি ভিতরে ত্যাগকর্ম সাধন করতাম।
একদিন ঘরে আমি আর আমার বদমাইস কাজিন পরতাছিলাম। রাইতের বাজে ৯ টা।
হঠাৎ কইরা নিম্নচাপ বোধ করাতে আম্মারে কইলাম। আম্মা আমার কাজিনরে কইল আমার লগে যাইতে। আমার এই কাজিনটা একটা মহা হারামজাদা .............যেই পোলা কোনদিন আমার লগে যাইতে রাজি হইত না সে আজকে একলাফে কবুল!!
দুই জনে মজা করতে করতে পুকুর থেকে বদনা ভইরা গেলাম শৌচাগারের দিকে। আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনাই হারামিটার মতলব। যাক আমি বদনা হাতে অন্দর মহলে গেলাম।
হঠাৎ সে বাইরে থেকে কইল কুপি টা দে। কোন উচ্চবাচ্চ না কইরা কুপিটা আস্তে কইরা দরজার চিপা দিয়া হস্তান্তর করলাম।
ওমা .........হারামজাদা কুপিডা নিভাইয়া দিল। একে তো আমাবস্যার রাইত তার উপর টিপ টিপ বৃস্টি পরতাছিল। আমি তারাতারি অন্ধকারে বদন খুজতে যাইয়া দেখি তিনি তার মালসামানা সহ কাইত।
হঠাৎ কইরা আজব সব শব্দ শুরু হইলো বাইরে। শিয়ালের কুউউউ ..... কুত্তর ঘেও..লাগে বিলাইর ম্যাও ..... এই কঠিন মুহুর্তে মনে পরল কেডা জানি কইছিল গান গাইলে ডড় কমব। আস্তে আস্তে আল্লাহ রসুলের গান শুরু করলাম বাথরুমে বইয়া।
আমাদরে বাথরুমের দেয়াল ছিল টিনের। কিছুক্ষন পর তার পর দেখি বাথরুমের টিনে ছরছর শব্দ হইতাছে আর খাউমচাইতাছে।
আমি তো পারলে বাথরুমের কমোডে হান্দাইয়া যাই।
শেষ মেষ দিলাম চিক্কুর। ওমাগো................. ও বাবাগো.......................................। খাইয়া লাইলো...............................................। মোরে ধরো.......................................
এবং যা হবার তাই হইল।
আমি অজ্ঞান।
পরে শুনছি অজ্ঞান হবার পর আমার একটা হাত নাকি টয়লেটের মইধ্যে ঢুইকা গেছিল। তবে কোনটা ঢুকছিল এইটা কেও বলে নাই??? আর আমার হারামজাদা কাজিনরে আর এক সপ্তাহে আমাদের বাড়ির আশে পাশে খুইজা পাওয়া যায় নাই।
পুলিশ ডরাইতাম বড়দের কারনে। তারা পুলিশ নিয়া বেশি ভয় দেখাইতেন।
দাদি কইতেন ওই পুলিশ আইলো রে। ব্যাস দিতাম দৌর।
একদিন হইলো কি আমি স্কুল থেইকা হাইটা আইতাছি। হঠাৎ কইরা দেখি রাস্তার পাশের বাড়িতে মুরগির খোপের ঢাকনা খোলা। ব্যাস ৪ টা ডিম গায়েব কইরা হাটা ধরলাম।
মনে শুখে হাটতাছি আর গান গাইতাছি। কি মনে কইরা পিছনে তাকাইয়া দেখি পুলিশ। আমার দিকে হাত নারাইতেছে।
দিলাম ঝারা দৌর। আমিও দৌরাই, পুলিশও দৌরায়................আমিও দৌরাই, পুলিশও দৌরায়.....................................আমিও দৌরাই, পুলিশও দৌরায়.................................বেশকিছুক্ষন পর আমারে তারা ধরল।
দুই পক্ষই হাপাইতে হাপাইতে মাটিতে বইসা পরলাম। একটু দম নিয়া পুলিশ আমারে জিগায় দৌরাইতেছিলি কেন?? আমি জিগাই আপনেরা দৌরাইতেছিলেন কেন?? দুঃখের ব্যাপার হইলো শালায় আমারে ঠাডাইয়া একটা চড় মারল। তার পর কইলো তারা আমার কাছে আমাদের গ্রামের ঠিকানা জিজ্ঞাস করার জন্য ডাকতেছিল। আমি যখন দৌর দিছি তখন তারা ভাবছে আমি মনে হয় আসামি। পরে অবশ্য আমাদের বাড়িতে আইসা ইলিশ দিয়া ভাত খাইয়া আমারে ছরি কইয়া তার পর আমার চাচার কাছ থিকা ঘুষ বাবদ কিছু টেকাটুকা, দুইটা রাজ হাঁস, এক কাদি পাকা কলা, দুইটা দেশি মোরগ( একটা আমার খুব প্রিয় ছিল), কাচা আম এবং আমাদের পুকুর থেকে সদ্য তোলা বিশাল এক রুই মাছ নিয়া গ্রাম ছারছে।
পর্ব-১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।