আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রঙিন হাতি, রাগী বিড়াল

হাতির রং কেমন—এ প্রশ্ন করার কোনো মানে হয় না। বাচ্চারাও তা জানে। তবে শ্বেতহস্তী বললে বিষয়টি অন্য রকম দাঁড়ায়। কিন্তু শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী যে হাতি এঁকেছেন বিশাল ক্যানভাসে তেল রঙে; সেগুলো কালোও নয়, সাদাও নয়। কোনোটি আগুনে পোড়া লোহার মতো লাল বা লালচে, কোনোটির গায়ে শরতের আকাশের নীল, কোনোটি আবার পান্নার মতো সবুজ।

বড় মজার সেই হাতিগুলো। তাদের অতিকায় দেহটি অবশ্য পুরো দেখা যাচ্ছে না। তাতে অসুবিধাও নেই। পেঁচিয়ে রাখা বা উঁচিয়ে তোলা শুঁড়, মুলার মতো দাঁত, কুলার মতো কানের আদল আর থামের মতো পায়ের আকারই জানান দিচ্ছে ঐরাবতকুলের পরিচিতি। হাতির সঙ্গে আছে বিড়াল।

তাদের কারও তুলতুলে আদুরে চেহারা। শরীর গোল করে পায়ের ওপর মাথা রেখে আলসেমি করে সময় কাটাচ্ছে। লম্বা লেজ ছড়িয়ে সতর্ক ভঙ্গিতে আছে কেউ। কোনো কোনোটি আবার থাবা বাগিয়ে, দাঁত খিঁচিয়ে রেগে টং হয়ে আছে। আবার ঝাঁপিয়েও পড়েছে কোনো কোনো ক্রুদ্ধ মার্জার।

‘এই রাগী বিড়ালের কাজগুলো নতুন করা। ’ জানালেন গৌতম। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর এসব কাজ নিয়ে পঞ্চম একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু হয়েছে উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়ির গ্যালারি কায়ায়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তাঁর এই একক প্রদর্শনী ‘আমি’। বিশিষ্ট শিল্পী মুর্তজা বশীর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী ও শিল্প সমালোচক শামসুল ওয়ারেস। তেলরং, জলরং, চারকোল ও সেরিগ্রাফের ৬৭টি কাজ রয়েছে প্রদর্শনীতে। এটি চলবে আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত।

গৌতম চক্রবর্তী উজ্জ্বল রঙের কাজ করতে পছন্দ করেন। তাঁর রঙের প্রয়োগ একটি স্তর থেকে ক্রমপরম্পরায় একাধিক স্তরে পৌঁছে গিয়ে মনোরম বর্ণ সমন্বয়ের সৃষ্টি করে।

যেমন টকটকে লাল ফিকে হতে হতে শেষে একটি না লাল, না গোলাপি এমন এক রকমের আভায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, যেখানে দৃষ্টি আটকে যায়। পটের প্রধান অংশে যে অবয়বটি থাকে, তাকে ঘিরে মোটা ব্রাশের ছোট ছোট টান দিয়ে দিয়ে তিনি এক রকমের ঘন বুনোট সৃষ্টি করেন। কোথাও কোথাও বাঁশের বাখারির মতো চৌখুপি নকশা। এতে মূল অবয়বটি যেমন অধিকতর তীব্রতায় পরস্ফুিটিত হয়, তেমনি এই দৃঢ় বুনোট ও কোমল তুলির টানে আঁকা অবয়বটির বৈপরীত্য ও তার সঙ্গে নানা রকমের রঙের বিন্যাস চমৎকার ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে।

এবার তিনি হাতি ও বিড়াল ছাড়াও কয়েকটি কাজ করেছেন মাদার তেরেসাকে নিয়ে।

নারীর অবয়ব আছে। লতিয়ে আছে তাদের খোলা চুল। সেই চুলগুলোও আবার রংধনুর মতো নানা রঙের। অবয়বের বাস্তবসম্মত গড়ন না এঁকে তিনি প্রাধান্য দেন আদল ও ভঙ্গিমার ওপর। তাতে তাঁর বক্তব্য প্রকাশ সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে।

বাস্তবের সঙ্গে মিলতেই হবে এমন কোনো শর্তও নেই। শিল্পী তাঁর কল্পনার জগৎকে প্রসারিত করে তুলে ধরেন পটে, চান দর্শকদেরও এর আস্বাদ দিতে। ভাবনাকে উসকে দিতে। এই কাজগুলোতে সেই চেষ্টা আছে। তাঁর আঁকা পেলব, পুষ্ট অবয়বগুলোতে কোথায় যেন একটু আদুরে ভাব, একটু বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকেরও আভাস মিশে থাকে।

সবটা মিলিয়ে দেখতে ভালো লাগে।

জলরঙের কাজগুলো মিনিয়েচার রীতির। এখানে সূক্ষ্ম অঙ্কন। তার ওপর রং চাপানো। তিনি স্বচ্ছ ধারার জলরঙের কাজ করেননি।

উল্লম্ব বিন্যাসে সমুদ্রসৈকত। বালুকাবেলার শেষ প্রান্তে ঊর্মিমুখর জলরাশি। বালুর ওপর পড়ে আছে নানাজনের পায়ের ছাপ, শামুক-ঝিনুক, শৈবাল, এটা-ওটা, দূর দিগন্তে যেন মুক্তির হাতছানি।

রাগী বিড়ালের কাজগুলো অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। চারকোলে বেশ বড় আকারের আঁকা।

এই রাগী বিড়াল কি আমাদের বর্তমান অসহিষ্ণু, ক্রুদ্ধ সময়ের প্রতীকী উপস্থাপনা, নাকি আমাদেরই অন্তর্গত প্রবৃত্তি, যা ঘাপটি মেরে আছে সত্তার গভীরে?

ছোট ছোট কিছু রোখা চিত্র আছে কালি-কলমে, সেগুলোই সেরিগ্রাফে ছাপাই ছবি হিসেবে তুলে এনেছেন নানা রঙে। এই ছাপাই ছবিগুলো নিয়ে একটি ফোল্ডারও প্রকাশ করা হয়েছে প্রদর্শনী উপলক্ষে। অনেক দিন পর অনেক মাধ্যমের, অনেক রকমের কাজ নিয়ে এলেন গৌতম চক্রবর্তী। এক ভিন্ন আনন্দে সময় কাটবে দর্শকদের গ্যালারির দেয়ালে ঝোলানো এই কাজগুলোর সামনে দাঁড়ালে।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।