আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিসিটিভি ক্যামেরা প্রকল্প চালু হয়নি ১৫ বছরেও

অপরাধ দমনে ঢাকাসহ মেট্রোপলিটন সিটিগুলোকে রহস্যজনক কারণে আনা হচ্ছে না সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। বারবার উদ্যোগ নিয়েও এ বিষয়ে পিছু হটছে পুলিশ বিভাগ। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের নামে ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফাইবার অপটিকস স্থাপনের নামে কেবল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) দেওয়া হয়েছে চার কোটি ৯৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৩ টাকা।

অপরাধ-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে' এই ভয়ে খোদ পুলিশই হয়তো চাইছে না সিসিটিভি ক্যামেরা প্রকল্প চালু হোক।

১৯৯৮ সালে গৃহীত ছয় হাজার কোটিরও বেশি টাকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে পুলিশের আধুনিকায়ন প্রকল্পে সিসিটিভির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে অপরাধ ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টির উল্লেখ ছিল। তারা বলছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে কেবল রাজধানীতেই পাঁচ শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা উচিত, সেখানে ১৫ বছরে কাজ শেষ হয়নি ১৫৫টির। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট। মেট্রোপলিটন সিটিগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এলে নাগরিকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ব্যাপকভাবে কমে যাবে। বিশেষ করে মোড়ে মোড়ে ক্যামেরা থাকলে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে অপরাধীকে।

ভিডিও ফুটেজ থাকবে এ ভয়ে নাগরিকদের মধ্যে কমে আসবে আইন ভাঙার প্রবণতাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অপরাধ-বিশেষজ্ঞ শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এমন অনেক খাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বিনিয়োগের নজির রয়েছে সরকারের। তাই অন্তত অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমলে এনে সরকারের উচিত রাজধানীসহ বিভিন্ন মেট্রোপলিটন সিটিগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো। একই সঙ্গে সিসিটিভি নিয়ে যারা কাজ করবেন, তারা কতটুকু সৎ ও দায়িত্বশীল, সে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারতসহ উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাস্তাঘাটে সার্বক্ষণিকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রাখা হয়।

পান থেকে চুন খসলে মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সাম্প্রতিক সময়ে মিল্কী হত্যাকাণ্ডেও একটি শপিং মলের সিসিটিভির ফুটেজ থাকায় মামলার তদন্ত কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পুলিশ বিভাগকে আধুনিকীকরণের জন্য ৬ হাজার ১৪১.২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ১৯৯৮ সালে। প্রথমে স্থান নির্ধারণ, টাওয়ার নির্মাণ ও বেজ স্টেশন ঠিক করার জন্যই চলে যায় আট বছর। পরে ২০০৬ সালে বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য দরপত্র আহ্বান করলে পাঁচটি কোম্পানি এতে অংশ নেয়।

তৎকালীন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ৬১ কোটি টাকার সিসিটিভি ক্যামেরার কাজ পায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক 'ফলেক' কমিউনিকেশনসের দেশীয় এজেন্ট রাফা ট্রেডিং লিমিটেড। তবে ১৫৫টি ক্যামেরা স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে ৫০টিরও বেশি। ছবি আসতে থাকে ঘোলাটে। অনেক সময় কিসের ছবি তা বুঝতেও হিমশিম খেতে হতো সংশ্লিষ্টদের। ওই ক্যামেরা থেকে পেনড্রাইভ ছাড়া ছবিগুলো সরাসরি আর্কাইভে নেওয়ারও ছিল না কোনো ব্যবস্থা।

সিসিটিভি ক্যামেরা, ট্রাফিক ডিসপ্লে বোর্ড, এভিএলএস সিস্টেম, ভয়েস কমিউনিকেশনস ও টেলিফোন সিস্টেমের যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ২০১০ সালে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত একটি টেকনিক্যাল সাব-কমিটি সিসিটিভি ক্যামেরার এ ধরনের সমস্যা খুঁজে পায়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২২ জুলাই পুলিশ সদর দফতরে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আমীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ সভায় ফলেক কমিউনিকেশনস ও এর দেশীয় এজেন্ট রাফা ট্রেডিং লিমিটেডকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ঊধর্্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও ফলেকের মার্ক ফেয়ারওয়েল ও রাফার এমডি কাজী জাকারিয়া উপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ পুলিশেরই এক ঊধর্্বতন কর্মকর্তা জানান, অপরাধ ও অপরাধীদের প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছে করেই কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো অকেজো করে রাখে। এ জন্য অনেক থানার বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ করে রাখা হয়।

পুলিশের টেলিকম বিভাগের উপমহাপরিদর্শক নাজিবুর রহমান বলেন, 'মাত্র কিছুদিন হলো আমি এ বিভাগে যোগ দিয়েছি। যতদূর শুনেছি, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করে বুঝিয়ে দেবে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারব না। ' সিসিটিভি বাজেটের ৬১ কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে পুলিশের টেলিকম বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ৬১ কোটি টাকার মধ্যে ১০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, জানতে চাইলে বিটিসিএলের পরিচালক রফিকুল মতিনের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে ক্যামেরা স্থাপনের দীর্ঘসূত্রতা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাফা ট্রেডিংয়ের এমডি কাজী জাকারিয়া বলেন, 'অপটিক্যাল ফাইবার না থাকার কারণেই যত ঝামেলা হয়েছে। এবার অপটিক্যাল ফাইবার নিশ্চিত করেছে পুলিশ বিভাগ। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুলিশ বিভাগকে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারব। ' ক্যামেরার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্যামেরাগুলো প্রতিটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে মুভ করে।

এর মাধ্যমে ২০০ মিটার দূরের জিনিস জুম করা যাবে। তবে এগুলো নাইটভিশন নয় বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় রাজধানীর ১৮টি থানায় এবং হাজতখানাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। বসানোর কিছুদিনের মধ্যেই কোটি টাকার সেই প্রকল্প ভেস্তে যায় প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।