আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আর তার ভবিষ্যৎ

প্রথমেই বলে রাখি আমি ডাক্তার নই । কিন্তু এই বিষয়ে কিছু কথা অবশ্যই বলতে হচ্ছে । এবার থেকেই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার সমাপ্তি হবার কথা ছিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরে তা বাতিল হয় । বাতিল না বললে বলা যায় স্থগিত করা হয় ।

হয়তোবা সামনের কিছু বছরের মধ্যেই জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে । এই বিষয়টি নিয়ে মুটামুটি একটা ঝড় হয়ে গেছে জানি । কিন্তু বিষয়টা নিয়ে কথা না বলে পারছি না । কারন আমার ভাইয়েরও যে ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ার ... মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করার মুল উদ্দেশ্যটা কিন্তু মন্দ না । বরং যুগান্তকারী আমি বলব ।

মেডিক্যাল অ্যাডমিশন নিয়ে প্রাইমেট রেটিনা ভালই আয় করছে । ভর্তিকে কেন্দ্র করে ব্যাবসা চলসে ভালই । এই কোচিংগুলোর শিক্ষাব্যাবসা বন্ধ করার জন্যেই জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তির উদ্যোগটি নেয়া । নিঃসন্দেহে একটি ভাল পদক্ষেপ আমি বলব । ছাত্র ছাত্রি এসএসসি আর এইচএসসিতে যা ফল করবে তার ওপরেই তাদের ভাগ্য থাকবে ।

মন্দ না আইডিয়াটা । কিন্তু আমাদের এই কথা জানতে হবে যে মাপকাঠি হিসেবে বর্তমান সময়ে জিপিএ কতটা গ্রহণযোগ্য ?? একটা পরিসংখ্যান দেখি... গতবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ৮২ হাজার ২১২ জন । এর আগেরবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭৬ হাজার ৭৪৯ জন । ২০১২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ প্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রির সংখ্যা ৬১,১৬২ । প্রতি বছরে জিপিএর হার বাড়ছে ।

তার আগের বছরের রেকর্ড ভাঙছে । কারন কি ?? ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি মনোযোগ আগের বছরগুলোর থেকে বাড়ছে ?? নাকি অন্য কিছু ?? জিপিএ চালু হয় ২০০৩ সালে । সেবার এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র ২০ জন !!! সাড়া বাংলাদেশে । এই পরিসংখ্যানগুলো আসলে কি বুঝায় ??? পড়াশুনার হার বেড়েছে কি বাড়ে নাই তা বলব না কিন্তু জিপিএর সহজলভ্যটা ভালই বেড়েছে । কয়েক বছর আগেও ৪.৬৩ এর মত পাওয়া একটা ভাল রেজাল্ট ছিল ।

এখন যা দেখছি জিপিএ ৫ পেলেও আশা নিয়ে বসে থাকে গোল্ডেনের জন্যে । আমি কাওকে আঘাত দিয়ে কথাগুলো বলছি না । আমি শুধু সমসাময়িক ঘটনার ফলাফল তুলে ধরছি । সো আশা করি কেও কিছু মনে করবেন না । তো যা বলছিলাম ।

এসকল বিষয় আসলে আমাদের এই জিনিসটা ভালভাবে বুঝিয়ে দেয় যে জিপিএ দিয়ে কোনও হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার মান যাচাই করা যায় না । যেখানে সারাদেশে মেডিকেলের মোট সিটসংখ্যা মাত্র হাজার তিনেক সেখানে জিপিএ অর্ধ-লক্ষেরও বেশি । সেদিক থেকে বিবেচনা করলে অ্যাডমিশন টেস্টের কোনও বিকল্পই থাকে না । বাইরের কোনও দেশে এইরকম কঠিন লড়াইয়ে পড়তে হয় না জানি । কিন্তু তাদের কিন্তু সিটসংখ্যা আমাদের মত অপ্রতুল নয় ।

তাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা পদ্ধতিও বেটার । শেষ পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা ব্যাতিত আমাদের আসল মেধা যাচাই করার মত অন্য কোনও উপায় নেই । অন্তত আমি জানি না । ভর্তি পরীক্ষা তখনই বাতিল করার কথা উঠতে পারে যখন এর যথার্থ কোনও বিকল্প পাওয়া যায় । কোচিং ব্যাবসা বন্ধ করতে আমি তো আর আমার সন্তান বা ভাইকে একটা অসম মাপকাঠিতে ফেলতে পারি না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।