স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেছেন, যে রোগী একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে ৫০০ টাকা দিতে চান না, তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে উকিলের কাছে যান। আইনজীবীকে ফি দিতে গিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেন না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেছেন। আ ফ ম রুহুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিল, ব্যক্তিগত রোগী দেখার ক্ষেত্রে চিকিত্সকদের জন্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে কি না? উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক হিসেবে একটা কথা বলতে চাই। বড় বড় আইনজীবীদের সামনে তো ৫০ হাজারের আগে দাঁড়াতে পারবেন না।
আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে ৫০০ টাকা দিতে সমস্যা হয়। যে রোগী এই টাকা ফি দিতে চান না, তিনিই আবার উকিলের কাছে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেন। ’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, দরিদ্রদের জন্য সরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানে বিনা মূল্যে চিকিত্সার ব্যবস্থা আছে। যাঁর খরচ করতে অসুবিধা, তিনি সরকারি হাসপাতালে যেতে পারেন।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আ ফ ম রুহুল হক গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের বিবরণ দেন। তিনি বলেন, সফলভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালাতে পারা তাঁর সবচেয়ে বড় সফলতা। কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর আগে উন্নয়ন সহযোগী এমনকি বিশ্বব্যাংকও সরকারকে বুঝিয়েছিল, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালগুলো চলছে এবং প্রায় ১৮ কোটি রোগী সেবা পেয়েছে। ব্যর্থতার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, হতদরিদ্রদের জন্য তিনি স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে চেয়েছিলেন।
ভারতের কয়েকটি রাজ্য ও বিশ্বের বেশ কিছু দেশে স্বাস্থ্যবিমা চালু আছে। এ ব্যবস্থায় হতদরিদ্র রোগীদের একটি ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হয় এবং সেই কার্ড দেখিয়ে রোগীরা যেকোনো হাসপাতাল থেকে সেবা পেতে পারেন।
আরও চিকিত্সককে পদোন্নতি দেওয়া হবে
চিকিত্সকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিত্সকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদের (স্বাচিপ) প্রভাব ছিল কি না, এমন প্রশ্ন করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। সাংবাদিকেরা আরও জানতে চান, শর্ত শিথিল করে কোনো কোনো চিকিত্সককে যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সেটা কতটা যৌক্তিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রমার্জনা’য় পদোন্নতি দেওয়া ঠিক ছিল।
চিকিত্সকদের পদোন্নতি আটকে ছিল বহু দিন, সে কারণেই প্রমার্জনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় পদোন্নতি পেলেন চিকিত্সক নেতারা’ শিরোনামে গত ২ এপ্রিল ‘প্রথম আলো’য় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাচিপের প্রভাবশালী ডজন খানেক নেতা শর্ত পূরণ না করেও রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় পদোন্নতি পেয়েছেন। এ তালিকায় এমন ব্যক্তিও ছিলেন, যিনি এক দিনও ছাত্র না পড়িয়ে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন। আজ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আরও চিকিত্সককে পদোন্নতি দেওয়া হবে দু-একদিনের ভেতরে।
অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটা থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলিতে সৈয়দ মোতাজজেরুল ইসলাম মিঠু নামের একজন ঠিকাদারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে এবং ঠিকাদারের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিবারের একজন সদস্যের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে—এ অভিযোগের সত্যতা কতটুকু। উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গে ওই ঠিকাদারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। ওই ঠিকাদার ব্যবসায়ী। তিনি শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও ব্যবসা করেন। তিনি যদি কেনাকাটা ও বদলির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তবে সে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্যসচিব জানেন।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েতউল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।