আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!
-হারামজাদা থাপড়িয়ে তোর দাঁত খুলে ফেলবো ?
-আরে কি আশ্চার্য ? এখানে থাপড়ানোর কি হল ? টিকেট নাই এটা বললেই হয় । থাপড়া থাপড়ি করার কি দরকার !
-চুপ । একদম চুপ ।
-দেখুন এতো রাগারাগির কিছু নাই । আমি জানি আপনারা কিছু টিকিট নিজেদের কাছে রেখে দেন বেশি দামে বিক্রির জন্য ।
আমি বেশি দামেই কিনবো । নতুন বিয়ে করেছি । প্রথমরারের মত ঈদ করতে শ্বশুর বাড়ি ..
হৈমর আব্বা আমার কথা শেষ করতে দিলো না । তার আগেই চিত্কার চেঁচামিচি শুরু করে দিল । আমি আস্তে করে ফোন রেখে দিলাম ।
দোকানদার ছেলেটার বয়স কম । স্কুলে পড়ার বয়স । তা না করে এখানে মোবাইলের দোকানে বসে আছে । আমি মোবাইল ফোনটা এগিয়ে দিতেই বলল
-কারে ফোন দিলেন ?
-কেন ?
-এমনেই !
এই বলে মোবাইল টিপতে লাগলো । এই নিয়ে ছয়বার আমি এই পিচ্চির দোকান থাকে ফোন করছি হৈমদের বাসার ল্যান্ড ফোনে ।
প্রতি দশমিনিট পরপর । পিচ্চিকে বলেছি মিনিটের হিসাব রাখতে । সব টাকা একবারে দিবো । ফোন করার ফাঁকে ফাঁকে পিচ্চির সাথে টুকটাক গল্প করে সময় কাটাচ্ছি ।
-কি নাম ?
মোবাইলটা ড্রয়ারের ভিতর রাখতে রাখতে পিচ্চি বলল
-আমার নাম জাবেদ ।
-পড়া লিখা করিস ?
-হ । করি । কিলাস সেভেন ।
-আজকা স্কুল নাই ?
-যাই নাই । বড় ভাই শ্বশুর বাড়ি গেছে বউ নিয়া ।
তাই আজকা আমি আইছি ।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু মিসকি হেসে বলল
-আপনেও কি বউ নিয়া শ্বশুর বাড়ি যাইবেন ?
বুঝলাম আমার ফোনে বলা কথা গুলো সে মন দিয়ে শুনেছে । প্রত্যেক ফোনের দোকানদারের এমন একটা সহজাত্ প্রবৃত্তি থাকে । কাস্টমার কার সাথে কি কথা বলছে কান খাড়া করে শুনতে পছন্দ করে । জাবেদের ভাইও হয়তো তাই করে ।
তারপর রাতের বেলা বউয়ের কাছে গিয়ে সেই সব কথা আরও ডাল পালা ছড়িয়ে বলবে ।
আমি সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে কেবল একটা রহস্যময় হাসি দিলাম । তারপর বললাম
-দেখি ফোনটা আরেকবার দে ।
জাবেদ ড্রায়ার থেকে ফোন বের করে আবারও আমার ফোন দিলাম হৈমদের বাসায় । ভাবতেছি এবার কি বলা যায় ' রেলস্টেশন বাস টার্মিলাম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সব কিছু হয়ে গেছে ।
এখন ?
ওপাশ থেকে রিং হচ্ছে । আমি ভাবছি এবার কি বলা যায় । রিং বেজেই চলেছে । যখন মনে যে ফোনটা আর কেউ রিসিভ করবে না ঠিক তখনই রিসিভ করলো কেউ । আমি বললাম
-হ্যালো কাটাবন থানা ? বাটা সিগনালের এখানে খুন হয়েছে ।
জলদি চলে আসুন । হ্যালো ?
ও পাশে খানিক নিরবতা । আমার মনে হল হৈমর বাবার একটা হুংকার শুনতে পাবো । কিন্তু তার বদলে হৈমর মিষ্টি গলা শুলা শুনতে পেলাম ।
-কাটা বনে থানা আছে ?
-নেই ? ও আচ্ছা ।
শাহবাগ আর কাটাবন তো একই তাই না ? ভাল আছো বাবু ?
আবার খানিকক্ষন নিরবতা ।
-দ্বিতীয় বার আব্বার চিত্কার শুনেই বুঝেছিলাম তুমি এরকমটা করছো ? এরকম ফাজলামো কেন করছো ?
-আরে হিমুর গল্প পড় নাই ? হিমু ঠিক এই ভাবে রূপার বাবাকে জ্বালাতন করে ।
-শুনো তুমি হিমু না আর আমি রূপা না । খবরদার আর ফোন দিবা না এই খানে ।
-আরে তাহলে কেমন করে হবে ? তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে ? তুমি তো ফোন বন্ধ করে রেখছো ?
-কেন রাখবো না শুনি ? কাল তুমি কি বলেছিলে মনে আছে ?
-আরে বাবা একটা বিড়ালই তো ! আর তো কিছু না ।
-এই খবরদার আমার বাবুকে নিয়ে আর একটা কথা বলবা না !
বাবু ! এই হল মাইয়া মানুষের কারবার ! একটা বিলাইয়ের জন্য আমার মত ভালা পুলারে ...
-শুনো তুমি ...
-কোন শুনাশুনি নাই । আগে তুমি টিংকুর কাছে সরি বলবা তারপর তোমার সাথে কথা !
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হৈম ফোন রেখে দিল । আমার মেজাজটা একটু খারাপই হল ।
হওয়ারই কথা ! গার্লফ্রেন্ড যখন বয়ফ্রেন্ড থেকে একটা বিলাইকে বেশি আদরকে একটু রাগ হওয়ারই কথা ।
কাল বিকেল বেলা ঠিক ছিল সব কিছু ।
হৈমর সাথে কথা বলছিলাম । কথা বলতে বলতেই হৈম একটু আও বলে চিত্কার করে উঠল । ফোনের এপাশ থেকেই আমি ওর আওয়াজটা শুনতে পেলাম । কোন কিছুতে ব্যাথা পেয়েছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম
-কি হয়েছে ?
-কিছু হয় নি ।
-কিছু তো একটা হয়েছেই । কি হয়েছে ?
-আরে এমন কিছু না । টিংকু একটু আচড় মেরেছে ।
-কি ? রক্ত বের হয়েছে ?
-আরে কিছু না । একটু ।
আমার মেজাজটা টিংকুর উপর খারাপ হল খুব । আমার এমনিতেই বিড়াল পছন্দ না । ছোট বেলায় একবার বিড়ালের কামড় খেয়ে ইনজেশন নিতে হয়েছে । তার উপর হৈম এই বিড়াল কে এতো আদর করে আমার একদম সহ্যই হয় না ।
-শালার টিংকু ।
একটা আছাড় মার !
-এই তুমি কি বললা ?
-বলবো না ? ফাজিলের ফাজিলের ফাজিল ।
-এই খবরদার টিংকুকে কিছু বলবা না ।
-আরে তোমার টিংকুকে খালি একবার কাছে পেয়ে নিই ।
হৈম হঠাত্ করে আমার উপর রেগে গেল । বলল আমার বকা শুনে নাকি টিংকু চলে গেছে ।
আমি তো অবাক ?
-আমি বকলাম কোথায় ?
হৈম বলল
-তুমি টিংকুকে সরি বলবা তারপর তোমার সাথে কথা ?
কিসের ভিতর কি ? এই মেয়েরা এমুন আজিব লজিক পায় কোথায় ? আমি ভেবেছিলাম হয়তো এমনি বলছে । কিন্তু রাতের বেলা সত্যি সত্যিই আমার সাথে কথা না বলে ফোন বন্ধ করে রাখলো ।
সকাল বেলাও একই অবস্থা । শেষে না পেরে ওদের বাসার ফোনে ফোন দিলাম ।
প্রেমে পড়লে আর প্রেম করতে গেলে কত কিছু করতে হয় ।
আজকে কোথাকার কোন বিলাইকে সরি বলতে হবে । বিদেশী বিলাই হলেও হয় এ হল খাটি দেশি বিলাই ।
আচ্ছা কুকুরের যেমন নেড়ি কুকুর আছে বিলাইয়ের ভিতর নেড়ি বিলাই নাই ? দেখি খোজ নিতে হবে ।
ক্ষমা অনুষ্ঠান হৈমদের ছাদের উপর অনুষ্ঠিত হবে । এমনই আমাকে জানানো হয়েছে ।
হৈমদের বাড়ির দারোয়ানের সাথে আমার ভাব আছে । প্রায়ই হৈমর সাথে দেখা সাক্ষাত্ করতে আসি তাই হাত করে রেখেছি । প্রায় বিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করার পর হৈম হাজির এল গম্ভীর মুখে । তার চেয়েও বেশি গম্ভীর হয়ে আছে হৈমর কোলের বিলাই টা । আমার সামনে আসতেই বিলাইটা বলল
-মিয়াও ।
আমিও বললাম
-মিয়াও ।
-মিয়াও মিয়াও ।
সঙ্গে সঙ্গে আমিও বললাম
-মিয়াও মিয়াও ।
-এই তুমি আমার টিংকুকে ভেঙ্গাচ্ছ কেন ?
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম
-কি বলছো এসব ? তোমার টিংকু আমাকে দেখে বলল মিয়াও । মানে ভাল ? আমিও বললাম ভাল ।
টিংকু বলল মিয়াও মিয়াও । মানে দিন কাল কেমন যাচ্ছে । আমি বললাম ভাল খুব ভাল । বিলাইকে সরি বলতে এসেছি । ভাল হবে না ?
হৈম আমার কথায় হাসলো না ।
বলল
-তাই না ? এখন সরি বল ।
-বলতেই হবে ?
-হুম ।
আমি টিংকুর কাছে মুখ নিয়ে বললাম
-মিয়াও ।
আমার মিয়াও শুনে টিংকুও আবার বলল
-মিয়াও ।
হৈম বলল
-এই মিয়াও কি কথা ! সরি বল ।
-আরে তুমি কি ? বিলাই কি ইংরেজি বোঝে নাকি ?
-আমার টিংকু সব বোঝে ।
-আচ্ছা তোমার মত তোমার টিংকুও গ্রাজুয়েট নাকি ?
-কি বললা তুমি ? কি বললা ?
-আরে বাবা কথা কথায় এতো চেতো কেন ? তোমার টিংকুকে গ্রাজুয়েট বলেছি কি খারাপ বলেছি । বল টিংকু তোর কি খারাপ লেগেছে ।
টিংকু বলল
-মিয়াও ।
-দেখেছ টিংকুও খুশি ।
কিন্তু হৈম খুশি হল না । আমি এর আগেও দেখেছি হৈমকে গ্রাজুয়েট বললেই ও কোন কারন ছাড়াই রেগে যায় । কেন রেগে যায় কে জানে ।
যাহ শ্লা ! এসেছিলাম এক রাগ ভাঙ্গাতে । এখানে এসে আবার নতুন ভাবে রাগিয়ে দিলাম ।
এর রেশ কদিন থাকে কে জানে । আমার আর কোন কথা না শুনেই হৈম টিংকুকে নিয়ে হন হন করে হেটে চলে গেল ।
প
পরিশিষ্টঃ
আমি আর কি করবো ? উদাস হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম । এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । বিকেল বেলা এদিকার ছাদের বড় চমত্কার জিনিস দেখা যায় ।
ঠিক তখনই চোখ চলে গেল পাশের ছাদে ।
পাশের ছাদে কি ?
সেটা না হয় অন্য কোন গল্প বলব ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।