সাগরের জল স্পর্শ করেই আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস বুঝতে পারেন অভিজ্ঞ জেলেরা। অবশ্য এসব সেকেলে পদ্ধতি। আধুনিক ডিজিটাল যুগে আগেভাগেই রাডারে ধরা পড়ে দুর্যোগের পূর্বাভাস। গতকাল সাগরিকায় এত বড় সুনামি হয়ে গেল যে, এর কোনো সংকেতই পায়নি নিউজিল্যান্ড! আভাস হয়তো পেয়েছিল। কিন্তু কোনো তোয়াক্কা করেনি।
তাই অনুমিত পরিণতিই হলো। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের সাজানো সংসার! ৪৬৯ রান করার পর কিউইরা ভেবেছিল হয়তো কিছু একটা ঘটবে। কিন্তু উল্টো ৩২ রানের লিড নিল বাংলাদেশ। সাগরপাড়ের সৌরভ ও বরিশালের সোহাগ গাজী হারাম করে দিল কিউইদের ঘুম। যদিও দিন শেষ করেছে সফরকারীরা ৮৫ রানে এগিয়ে থেকে।
তারপরও চতুর্থ দিনটি ছিল সোহাগের।
আগের দিন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন মমিনুল হক সৌরভ। গতকাল আট নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করে সোহাগ এভারেস্টের চূড়ায় পেঁৗছে দিল বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে দুই সেঞ্চুরিতেই টেস্টে নিজেদের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর গড়ল বাংলাদেশ। ৪৬৯-এর জবাবে ৫০১ রান।
পরিতৃপ্তির এক স্কোর। টেস্টে এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮ রান, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গলেতে। দ্বিতীয়টি ৫৫৬ রান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঢাকায়। তবে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ স্কোর এটিই। এর আগে ২০০৪ সালে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হাবিবুল বাশারের দল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে করেছিল ৪৮৮ রান।
৩২ রানে পিছিয়ে থেকেও জয়ের চিন্তা মাথায় রেখেই দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিল কিউইরা। শুরুও ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য হতে পারেনি দিনের শেষ ১৫ ওভার। এতে ম্যাককালামদের স্বপ্ন যেন ভেস্তেই গেল! রাখঢাক না করে সংবাদ সম্মেলনে তা বলেই ফেললেন কিউই বোলার ট্রেন্ট বোল্ট, 'বৃষ্টি না হলে আমরা আরও এগিয়ে থাকতাম।
এর পরেও আমরা জয়ের জন্যই খেলব কাল (আজ)। এখনো আশা ছেড়ে দিইনি। ' দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ এক উইকেটে ১১৭। হাতে উইকেট ৯টি। বাকি মাত্র তিন সেশন।
চতুর্থ দিন শেষ হওয়ায় টেস্টের ফল আগাম অনেকটাই জানা ক্রিকেটামোদীদের। এর পরেও টেস্ট ক্রিকেট বলেই শেষ বলের আগে কিছু বলার উপায় নেই। আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি বাগড়া দিলে তো কোনো কথাই নেই।
সাকিব ও তামিমের ব্যর্থতার পরও সব মিলিয়ে কালকের দিনটি ছিল বাংলাদেশের। আগের দিনের ৭ উইকেটে ৩৮০ থেকে কাল শুরু করেছিল টাইগাররা।
৭ রান যোগ হতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আবদুর রাজ্জাক। এরপর রবিউলের সঙ্গে সোহাগ গাজীর ১০৫ রানের জুটি। ওয়াটলিং ও বোল্টের দশম উইকেটে ১২৭ রানের জুটি দেখেই নাকি তারা বড় ইনিংস খেলতে উৎসাহিত হয়েছেন। 'ওরা যদি পারে আমরা কেন পারব না। ওয়াটলিং-বোল্টের জুটি দেখে আমরা বড় জুটি গড়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি'_ সংবাদ সম্মেলনে বলেন সোহাগ গাজী।
রবিউল আউট হওয়ার আগেই টেস্টে 'মেইডেন' হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন সোহাগ। শেষ ব্যাটসম্যান রুবেলকে নিয়ে সেঞ্চুরিতে পেঁৗছান এই অলরাউন্ডার। ব্রেসওয়েলকে গালি ও পয়েন্টের মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সোহাগের সে কী উচ্ছ্বাস! অলরাউন্ডার হিসেবে দলে জায়গা পেলেও মূল পরিচয় বোলার। অথচ সপ্তম টেস্টেই দেখা পেলেন পরম আরাধ্য সেঞ্চুরির। যেখানে ক্রিকেট কিংবদন্তি লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৬ টেস্ট।
এর পরও সোহাগের ছিল অনুভূতি খুবই সাদামাটা, 'এই উইকেটে বোলারদের করার তেমন কিছু নেই। তাই রান করতে পারায় ভালোই লেগেছে। '
সোহাগের ব্যাটিং দেখে ভালো লেগেছে সাগরিকার দর্শকদেরও। কাল তার একেকটি বাউন্ডারিতে গর্জে উঠছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। তাই এ ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ড্র হলেও আর কিছু যায় আসে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।