আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১৩ সালের সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ ম্যাকাফির চোখে!!!

নতুন বছরে প্রযুক্তির কারণে যেমন খুলে গেছে সম্ভাবনার অনেকগুলো নতুন দ্বার, তেমনি উঁকি দিচ্ছে এই প্রযুক্তিগুলো অপব্যবহারের আশঙ্কা। আমেরিকান সফটওয়্যার নিরাপত্তা কোম্পানি ম্যাকাফি এই আশঙ্কা গুলো যাচাই করে তাদের গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ম্যাকাফির মতে, এ বছর মোবাইল ম্যালওয়ার, র্যা নসামওয়্যার কিট, বড়ধরনের রাজনৈতিক হ্যাকিংসহ, পেশাদার হ্যাকারদের বেশ রাজত্ব দেখা যাবে সাইবার দুনিয়ায়। তবে ২০১৩ সালে কি ধরনের হুমকির সম্মুখীন হবে পৃথিবী, তার ভবিষ্যৎদ্বাণী করতে গিয়ে ম্যাকাফি ল্যাব জানিয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সাইবার আক্রমণ, লাভজনক হ্যাকিংয়ের দুরাচার শুরু হলেও অ্যানোনিমাসের মতো হ্যাকটিভিসট গ্রুপগুলোর প্রভাব কমে যেতে পারে। সিকিউরিটি ফার্মটির গবেষণাপত্রে বলা হয়, এ বছর সাইবার ক্রিমিনাল এবং হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলো তাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং টুলগুলো সংশোধন করছে।

এ নতুন ক্ষতিকর প্রযুক্তিগুলো শুধু যে আমাদের ওয়ালেট থেকে টাকা চুরির উদ্দেশ্যে তা নয়, এতে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়বে। ম্যাকাফি আরও সতর্ক করছে রাজনৈতিক এবং এধরনের অন্যান্য চরম পর্যায়ের সাইবার আক্রমণ থেকে। এগুলো সর্বশেষ প্রযু্ক্তির উন্নত মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করবে। মোবাইল ফোনের ঝুঁকি মোবাইল ফোন জগতে এখন ট্যাবলেট আর স্মার্টফোনের জয়জয়কার। আর ম্যাকাফির বলছে, এগুলোই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে আছে ‘নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন’ বা ‘এনএফসি’ প্রযুক্তির কারণে।

২০১৩ সালে মোবাইল ওয়ার্ম-এর মতো ভাইরাসগুলো স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ডাউনলোডের সময় অনুপ্রবেশ করে একবার স্থায়ী হয়ে গেলে, এরা বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর অ্যাপ কিনতে শুরু করবে এবং এনএফসি প্রযুক্তির মাধ্যমে টাকা চুরি করবে। এনএফসি এবং অন্যান্য ‘ট্যাপ অ্যান্ড পে’ ম্যাকানিজমের কারণে ফোনে এসব ভাইরাসের অনুপ্রবেশ আরও সহজ হয়ে যেতে পারে। ম্যাকাফি ধারণা করছে, টাকা চুরি করার জন্য ‘বাম্প অ্যান্ড ইনফেক্ট’-এর মতো ঘটনা হরহামেশা ঘটতে দেখা যাবে, যেখান থেকে ভাইরাস অনুপ্রবেশ করতে পারে। বিভিন্ন শপিং মল, এয়ারপোর্ট প্রভৃতি জনবহুল জায়গাতে এসব ম্যালওয়্যার সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মোবাইলে ম্যালওয়্যারের আক্রমণ বেড়ে যাবে, যা স্মার্টফোনগুলোকে সিকিউরিটি সিস্টেম আপডেট করা থেকে বিরত রাখে।

নিজস্ব র্যা নসামওয়্যার তৈরি ম্যাকাফি আশঙ্কা করছে, মোবাইল প্রযুক্তি ঘিরে ডিজাইনকৃত র্যা নসামওয়্যার কিট-এর প্রচলন বেড়ে যাবে। এগুলোর সাহায্যে প্রোগ্রামিং স্কিল না থাকা ব্যক্তিরাও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা সরিয়ে নিতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্ম সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকবে। ২০১২ সালেই উইন্ডোজে ধারণার তুলনায় তিনগুন বেশি আক্রমণ দেখা গেছে। র্যা নসামওয়্যারগুলো ব্যাকডোর, কি-লগার বা ট্রোজান থেকে আলাদা।

এরা পুরো সিস্টেমকেই লক করে দিতে পারে। ফলে ব্যবহারকারীরা নিজেদের সিস্টেম বা ডেটায় প্রবেশ করতে পারে না। এখানেই ক্ষতিকর সফটওয়্যারগুলো আসে। টাকা পরিশোধ না করলে এগুলো ধীরে ধীরে ডেটা মুছে ফেলতে শুরু করে। ম্যাকাফির রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, এবছর অ্যানড্রয়েড আর অ্যাপলের ওএস এক্সকে টার্গেট করতে দেখা গেছে।

এই মুহূর্তে এই র্যাছনসামওয়্যার কিটগুলো কালোবাজারে ছাড়া হয়েছে। আপাতত এগুলো শুধু উইন্ডোজ সিস্টেমে কার্যকর হলেও, খুব বেশিদিন এই পরিস্থিতি থাকবে না। নতুন প্ল্যাটফর্ম লক্ষ্য করে আক্রমণ ম্যাকাফির রিপোর্টে বলা হয়, ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনে সাইবার অ্যাটাকের ক্ষেত্রে বেশ দ্রুত উন্নতি লক্ষ করা যাবে, যা কিনা মাইক্রোসফটের নতুন উইন্ডোজ-৮ প্ল্যাটফর্ম এবং এইচটিএমএল ফাইভ দুটোকেই টার্গেট করবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মাস্টার বুট রেকর্ড, বিআইওএস এবং ভলিউম বুট রেকর্ডকে টার্গেট করে তৈরিকৃত রুটকিট, বুটকিটের ব্যবহার এবং আক্রমণ বেড়ে যাবে। এসব ম্যালওয়্যারগুলোর মাধ্যমে উইন্ডোজ-৮ এর সঙ্গে ফিশিং টেকনিককে টার্গেট করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ম্যাকাফি আরও সতর্ক করছে, প্ল্যাটফর্ম আপগ্রেডও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা হয়তো দিতে পারবে না। যদিও মনে করা হয় যে, এতে আগের ভার্সনের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব। বড় ধরনের আক্রমণ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে পূর্ববর্তী স্ট্যাক্সনেট বা ফ্লেইম ভাইরাসের মতো বড়ধরনের আক্রমণ বেড়ে যাবে। যাদের উদ্দেশ্য শুধু টাকা আত্মসাতই নয়, বরং পুরো সিস্টেমকে ধ্বংস করা। ব্যবসায় ক্ষতি করার জন্য, মেধাস্বত্ত্ব চুরি করার জন্য অথবা যথাসম্ভব ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই হোক, এরকম বড় আকারের হ্যাকটিভিসম ব্যবসায়িক খাতকে বেশ ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

যেগুলো কিছু সাধারণ প্রযুক্তি যেমন ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস’ বা ‘ডিডিওএস’ আক্রমণ থেকেও নিরাপদ নয়। স্নোসু এবং স্প্যাম ধারণা করা হচ্ছে, অগণিত আইপি নাম্বারের মাধ্যমে তৈরি ‘বটনেট’ ভিত্তিক আক্রমণ বৃদ্ধিতে স্নোসু বা অনলাইনে বৈধ পণ্যের স্প্যামিং ২০১৩ সালের সাইবার অ্যাটাকের ধারায় পরিণত হবে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন খ্যাতনামা কোম্পানিগুলোও অসাধু বিপণন কোম্পানির শিকার হয়, যারা সম্ভাব্য ক্রেতাদের ইমেইল অ্যাড্রেসে স্প্যামিং করে। সার্ভিস হিসেবে হ্যাকিং পেশাদার হ্যাকারদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন পেশাদার হ্যাকার ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যারা হ্যাকারদের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও দেয়। বলা বাহুল্য এ বেনামী প্রতিষ্ঠানগুলো ছদ্মবেশেই এদের কাজ চালিয়ে যাবে।

বেনামী হ্যাকার কমবে, বাড়বে হ্যাক্টিভিজম ২০১৩ সালে বেনামী হ্যাকারের সংখ্যা কমলেও চরম আকারে হ্যাক্টিভিজমের প্রকোপ বৃদ্ধির আশংকা করছে ম্যাকাফি। সবচেয়ে বড় কথা, শুধু মজা করা বা ভুল তথ্যভিত্তিক হ্যাকিং পরবর্তীতে বড় বড় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে। বেনামী হ্যাকারদের প্রভাব কমে গেলেও প্রফেশনাল হ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলোর কার্যক্রম বেড়ে যাবে যা ধর্মসংক্রান্ত বিষয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, সামাজিকসহ বিভিন্ন জরুরি ক্ষেত্রে বেশ চাপের মধ্যে ফেলবে। সূএ: bdnews24  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.