তখন আবেগ তাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত তুঙ্গে, চ্যাতনা তাদের টুইটুম্বর, চটিয়তার গবেষণালদ্ধ ফল তাদের ফেসবুকের দেয়ালে, তারা তখন বারুদের ধোয়া ঊড়ার মত ঊড়ছে, তারা স্বপ্নের হাইওয়ে নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য ভঙ্গুর ইটমালা গাথায় ব্যস্ত, তারা জবাইয়ের রক্ত পানের নেশায় উন্মত্ত, তারা গন্ডারের মত চোখের সামনে শিং সহ দৃশ্য অংকনে ব্যস্ত, তখন তাদের মুখে খিস্তিখৈঊরকেও হার মানানো কথামালা, তারা তখন চিন্তার বন্ধ্যাত্বতার শিখরে পৌছেছে,তখন তাদের প্রতিটা উপস্থিতিই তীর্যক বাক্যবানে অন্যকে ঊড়িয়ে দেয়া। ঠিক তাদের সেইদিনগুলির মাঝে একটা দিন ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৩।
তথাকথিত স্বপ্নের হাইওয়ে নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য শাহবাগী জমায়েতের কারনে যানজট তাই সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য অন্যদিনের চেয়ে একটু আগেই বের হতে হবে। কিন্তু এর আগেই কলিগের কল পেলাম। ধানমন্ডি ব্রাঞ্চের সার্ভারে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ট্রানজেকশন শুরু হওয়ার আগেই সমাধান করতে হবে। ট্রানজেকশন শুরু হওয়ার আগেই ব্রাঞ্চে গেলাম। গিয়ে দেখি সব ঠিক। কিন্তু ট্রানজেকশন শুরু হওয়ার পরই দেখা গেল আবার সার্ভারে সমস্যা। ঠিক এর একদিন আগেই এই ব্যাংক বর্জনের ডাক।
এর মধ্যে এই ব্রাঞ্চের সার্ভারে সমস্যার কারনে ট্রানজেকশন ঠিকভাবে হচ্ছিল না। গ্রাহকের চাপ মারাত্নক আকার ধারন করেছে। ব্রাঞ্চের এমপ্লয়ী,ম্যানেজারের তীর্যক বানী। এমপ্লয়ীদের উপর দিয়ে তখন যে ঝড় ঝাপটা যাচ্ছে তা তারা কিছুটা হলেও আমার উপর দিয়ে চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকক্ষন অবজার্ভ করে বুঝলাম কয়েকটা পিসি এফেক্টড হয়েছে সো এইগুলাকে নেটওয়ার্ক এর বাইরে রাখতে হবে।
ইতিমধ্যে চেচামেচি বেশ বেড়ে গেছে। গ্রাহকের লাইন ২য়তলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত পৌছে গেছে। সুশীল-কুশীল সবাই মিলে গালাগালি কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে এই নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। তখন লাইন ভেংগে একাউন্ট ক্লোজ করতে আসা কয়েকজন চ্যাতনাধারী এসে ব্যাংকের এক এমপ্লয়ীকে বিড়বিড় করে কিছু বলার পর মূহুর্তে আর কতক্ষন লাগবে জিজ্ঞেস করে।
বেচারা এমপ্লয়ী নিজে আর কত শুনবে এই ভেবে আমার দিকে আংগুল তাক করে বলেই ফেলল- অই যে আইটি থেকে লোক এসেছে।
ওনি দেখতেছে । ওনাকে বলেন। তখন আমি ক্যাশ কাঊন্টারের ভিতর ছিলাম একটা এফেক্টেড পিসি কে নেটওয়ার্ক থেকে খুলে রাখার জন্য । চ্যাতনাধারীরা বেহুশ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করতে পারতেছে না টি-শার্ট , জিন্স, সেন্ডেল পড়া, টেনশনে চুল কিছুটা উশকু-খুশকু এই ছেংড়া আইটির লোক হয় কেমনে।
তবে তাদের হাত গুটানো তখনও চলতেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যদি শুরু করে মাইর একটাও মাটিতে পড়বে না সব পিঠে পড়বে। তাদের দিকে বিনয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বললাম। কিছুক্ষন পরই ট্রানজেকশন শুরু হল। ট্রানজেকশন স্মোথলি হয় কিনা কিছুক্ষন অবজার্ভ করার জন্য ব্রাঞ্চে কিছুক্ষন অপেক্ষা করাটা দ্বায়িত্ব মনে করলাম।
একটা রং চা নিয়ে একাঊন্ট ক্লোজিং এর টেবিলের পাশে চেয়ার নিয়ে বসলাম। চ্যাতনায় উদ্ধুদ্ধ্ব হয়ে অনেকই একাঊন্ট ক্লোজ করে যাচ্ছে। এক যুবা এসে ব্যাংকের এই সমস্যা সেই সমস্যা বলে ত্যানা প্যাচাইতেছে। বুঝলাম উনি ক্লোজ করবেন। উনাকে যতই সমস্যার সমাধান দেয়া হোক উনি বন্ধ করবেন।
তখন নিজ চোখে দেখলাম কিভাবে চ্যাতনান্ধ হওয়া যায়। আরেকজন ক্যাশ থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় শাহবাগীরা সার্ভার ডাঊন করে দিল কিনা জিজ্ঞেস করল। কয়েকজন বলে ঊঠল শাহবাগ থেকে ব্যাংক বর্জনের ডাক দিছেতো তাই এখন সার্ভার প্রবলেম বলে টাকা না দেয়ার ফন্দি করতেছে। টাকা না দিয়া যাইবা কই দরকার হইলে ভল্ট ভাংগমু। আর চা এর কথা কিইবা বলমু ।
গ্রাহকদের টিপ্পনী এইটা আইটির লোক কেমনে হয়। সে আমাদের টাকা না দেয়ার ফন্দী করতে আসছে। নাইলে এতদিন সার্ভারে সমস্যা হয়নাই হটাত আজকে হয়তে গেল কেন। একজন চিল্লাইয়া কয় এই ছেংড়ারে সবাই নজরে রাখবেন সে যেন পালাতে না পারে। এই কথা শুনার পরই গরম রঙ চায়ের ধোয়া সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল।
বুঝলাম আমার জায়গা আপাতত সার্ভার রুমে। এই ক্লোজিং এর টেবিলে বেশিক্ষন বসাটা উচিত হবে না। বিকাল ৫.৩০টায় ধানমন্ডি শাখা থেকে বের হয়ে বন্ধুকে কল দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে নাস্তা করতে আসতে বললাম এবং কলিগের সাথে লেকের ভিতর দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে আসতে আসতে কলিগ বলল আমরা অন্তত এই আবেগীয় চ্যাতনার ধারে কাছেও নাই। আসলে আমরা এই আবেগীয় চ্যাতনার ধারে কাছে নাই। তা না হলে কেমনে তারা বাংলাদেশকে বিশ্বের মাঝে প্রেজেন্ট করে এবং এত বড় আর্থিক প্রতিষ্টান বর্জনের কথা বলে।
বছরে শেষ প্রান্তে গিয়ে এই ব্যাংক আবারও দেশের সেরা ব্যাংক হিসেবে চ্যাতনার ধারীরা স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ঊঠেপড়ে লাগবে। তারা খুব ভাল করে জানে ড. দের মত জানেওয়ালা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ দেয়ার পরও জনতা,সোনালী ব্যাংক মুদির দোকানে পরিনত হয়। কিন্তু ড. সাহেবদের বিরোধীতা সত্ত্বেও দেশ সেরা হয়ে আবার সেই ড. দের থেকে পুরস্কার নেয় এবং ব্যাংক হিসেবে বিশ্বের বুকে বাংলার পতাকাকে একমাত্র আমার ব্যাংকই ফুটিয়ে তুলে।
সেদিন ও তার আগে পরে আরও কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা নিদারুন কষ্টের এবং ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা । সেইদিন গুলা্র অভিজ্ঞতা আমার জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে যে ইতিহাস চ্যাতনাধারীদের মত নিয়ন্ত্রন করা যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।