চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।
কৃষ্ণনগরের মতো একটা মফঃস্বলে কেউ হয়তো কখনো একটি লেডিজ ক্লাবের কথা আমার আগে ভাবেইনি। শুধু এখানে কেন, এখান থেকে পনেরো- বিশ কিলোমিটারের দূরত্বে আমাদের যে বিভাগীয় শহর যশোর তার আশেপাশের এলাকা কাজীপারা,ঘোপ, চৌরাস্তা, পুরাতন কসবা, ওখানকার কেউই মনে হয় কখনো ভাবেনি আমাদের জন্যও একটা ক্লাবের দরকার আছে। ওখানে তো শিল্প-সাহিত্যের চর্চা আর কম হয় না, খেলাধূলা, শিক্ষাদীক্ষায়ও সেখানকার মানুষ পিছিয়ে নেই। তাহলে আমাদের মেয়েদের নিয়ে সুস্থ আলোচনা, খেলাধূলার বিকাশ, কুটিরশিল্প, রান্না ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে কেউ যে কেন ভাবেনি কে জানে ! না হলে স্থানীয় যারা প্রভাবশালী আছেন কিংবা নিজেদের উদারমনা বলে পরিচয় দেন, তারাইবা কেন ভাবলন না আমাদের কথা।
এমনিতে নিজেদের স্বার্থে তারা বক্তৃতা দেয়ার সময় তো আর খাটো বক্তৃতা দেন না। আমার এমনিতে সমস্যা নেই কসবা যুবসংঘে গিয়ে আড্ডা দিতে কিন্তু কোনও মেয়ের উপস্থিতি সেই ক্লাবের সদস্যরা হজম করতে পারবে কিনা সেটাও কথা। আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই ভাবছি, আমাদের জন্যও একটা আড্ডা দেয়ার জায়গা দরকার, একেবারে স্থায়ী জায়গা, যেখানে সময় কাটিয়ে মন ভালো করা যাবে, দেশের সাম্প্রতিক ব্যাপারে আমাদের যে একটা মতামত আছে, ভাবনা আছে, তা প্রকাশের জন্য একটা খোলা জায়গা চাই। না, ওরকম কোনও চিন্তাই আমার নেই যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে আমার জায়গা নিতে হবে, নির্বাচনে অংশ নিতে হবে বা মহীয়সী কোনও নারীতেও পরিণত হবো। বলা যায় এটা স্রেফ একটা নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা হতে পারে একঘেয়েমি কাটাবার জন্য।
এই পরিকল্পনাকে গত তিন বছর আগেও যেমন আমার বাস্তবে রূপ দেবার ইচ্ছে ছিল, এখনো আছে। কিন্তু তখন কলেজের প্রথম বর্ষে পড়াশুনা নিয়ে খাবি খাবার কারণে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে পারিনি। না হলে এতদিনে আমাদের ক্লাবের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপিত হতো এবং সভাপতি, উদ্যোক্তা, কর্মী যাই বলি না কেন, নিশ্চিত আমার নামটা থাকতো প্রথম সারিতে। কিন্তু দিনরাত মায়ের এক ঘ্যানঘ্যানানি -
" মানুষের জীবনে পড়ালেখার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ম্যাট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েট। আল্লাহ আল্লাহ করে ম্যাট্রিক পার করেছ, এখন বাকীটাও শেষ করে , কোন চুলায় যাবে যাও।
"
কেন যে মায়েরা সারাক্ষণ এতো বিরক্ত হয়ে সন্তানের সাথে কথা বলে কে জানে! একটা কথাও যদি মা আমার সাথে ভালো করে বলতো! এই কারণেই তো লেডিজ ক্লাবের চিন্তা মাথায় এসেছিলো। না হলে ঘর ছেড়ে কে চায় এতো আড্ডা দিতে, বাইরে টো টো করে ঘুরতে। মানুষ যদিও স্কুল-কলেজে যায়, বিভিন্ন পরীক্ষা পাশের সনদও অর্জন করে, কিন্তু মানসিক ভাবে সত্যিকারই উদার হতে পারে কয়জন! আমাদের কলেজের একেক জন স্যার ম্যাডামদের কথাই বলি না কেন, তারা সবাই কতো ডিগ্রিধারী, অমুক তমুক কিন্তু যখন তখনই শাকিলা ম্যাডাম বলেন -
" আচ্ছা কলেজ ছুটির পর তোমরা এতো হাসাহাসি করতে করতে গেট দিয়ে বের হও কেন? বাড়ি যাবার পথে এতো গল্প গুজব কিসের তোমাদের শুনি। আজেবাজে ছেলেরা কলেজের বাইরে আড্ডা দেয়, দেখো না? মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলবে এবং মাথা নিচু করে হাঁটবে। সারাক্ষণ তোমাদের এতো কীসের আড্ডা? "
তাজ্জব হয়ে যাই তার কথা শুনলে।
যেখানে ম্যাডামই এভাবে চিন্তা করেন সে তুলনায় আমার মায়ের প্যানপ্যানানি খুব একটা অপরাধের পর্যায়ে মনে হয় পড়ে না। তবে ম্যাডামকে তো আর মায়ের মতো ঝারি মারা যায় না। মাথায় ঘোমটা দেবার কথা নিয়ে অনায়াসেই অনেক তর্ক আমি জুড়ে দিতে পারতাম কিন্তু সব জায়গায় তো আর মুখ খুলে আলোচনা করা যায় না। জন্মেছি তো বঙ্গদেশে, তাও আবার মফঃস্বলে। হাহ্ ।
তবে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে এখনডিগ্রীতে পড়ছি, এবার তো নিশ্চয়ই হাবিজাবি, উরাধুরা ব্যাপারে ভাবা যাবে নাকি, মা ?
আমার কথার উত্তর দিতে মা আগ্রহী না হলেও আমি আমার পুরনো ডায়েরিটা নিয়ে বসি যেখানে ক্লাব গঠনের কিছু নিয়মকানুন লিখে রেখেছিলাম। ইদানীং সেসব চিন্তাভাবনার বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিতে চাই লেডিজ ক্লাব নিয়ে। যে ক্লাবটা দুনিয়াতেই এলো না এখনো, তাকে আলোর মুখ দেখানো আমার জন্য বলা যায় রীতিমত ফরজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
" ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলাম -
১। সভাপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং বিনা বাক্য ব্যয়ে সেটা মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে সকল সদস্যকে
২।
বিভাগ অনুযায়ী যাকে যা দায়িত্ব দেয়া হবে সেটা সুচারুভাবে সম্পন্ন করার মানসিকতা থাকতে হবে এবং কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আগেই নোটিশ লিখে বোর্ডে টানিয়ে দিতে হবে
৩। প্রতি তিন মাস পর পর সদস্যদের দায়িত্ব সাইকেলিং হবে একে অন্যের সাথে বদলে নেয়ার মাধ্যমে। এতে সবাই সব দায়িত্ব পালনে সমানভাবে দক্ষ হবার সুযোগ পাবে
কিছু জিনিস কেনাও জরুরী। যেমন- হোয়াইট বোর্ড, মার্কার, ডাস্টার, একটা নোটিশ বোর্ড, পিন, হাজিরা খাতা, চেয়ার টেবিল। আর কি কি জানি ধুর ছাই মনে পড়ছে না এখন।
পরে মনে হলে লিখে রাখবো নে। "
বিগত ক'বছরে ডায়েরিতে আমার আর হাতই পরেনি। হয়তো এ কারণেই আমাদের ক্লাবটা এতদিনেও দাঁড়াতে পারেনি। প্ল্যান করে না আগালে কী কোনও কিছু হয়? আমার ছোট ভাইটা অনীক সবসময় বলে - আপা তুমি বেশি বেশি প্ল্যান করবে না তো। একেবারে ধর তক্তা মার পেরেক হয়ে যাও।
- হুম আমার তো আর খেয়ে কাজ নেই। প্ল্যান ছাড়া কাজে নামি আর সব ভণ্ডুল হয়ে যাক আর কি। তুই চুপ থাক তো ভাই !
ক্লাব করতে গেলে কোনও প্রশাসনিক নিয়ম আছে কিনা কে জানে। পরে কেউ যদি এসে বলে -এহ ভারী তো এসেছে ক্লাব বানাতে। যাও ভাগো এখান থেকে।
কিন্তু ভাগতে বললেই কী আর ভাগা যায়! আর ক্লাব বানানো কী এতোই সোজা? আমাদের এই কলোনিতে তে তো একটাও পারিবারিক মিলনায়তন নেই। কোনও বাড়ির নিচ তলার পুরোটা যদি পেয়ে যেতাম কতো ভালোই না হতো কিংবা নিদেন পক্ষে একটা রুম। আমার বান্ধবী সাদিয়ার বাবা জেলা প্রশাসক। কোনও কলোনিতে কিংবা কলোনির বাইরে এভাবে ক্লাব বানাতে গেলে কোনও নিয়মনীতির প্রয়োজন আছে কিনা নিশ্চয়ই উনি এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্যকরতে পারবেন। মা'কে যদি বলি মা একটা ঘর আমাদের জন্য ছেড়ে দাও, উনি তেড়ে আসবেন নির্ঘাত।
কলোনির তরু আপাকে বলেছিলাম কয়েকদিন আগে-
- আপা, আসেন আমরা মেয়েরা মেয়েরা মিলে একটা ক্লাব বানাই।
উনি তো আমার কথা শুনে চোখ কপালে তুলে ফেললেন। কী যে বলো না নীতু! তোমার ভাই আমাকে ধরে আছাড় মারবে।
- এখন কী মারুফ ভাই আপনাকে আছাড় মারছে না?এই যে সারাদিন বাসায় একা একা থাকেন, বের হন না বাইরে, আপনার কি দম বন্ধ লাগে না? সময় কাটান কী করে আপনি?
- সময় কাটে কিন্তু সবসময় ভালো ভাবে কাটে না। এই যেমন ধরো, ঘরের কাজকর্ম শেষ হলে সেলাই নিয়ে বসি।
তখন সময়টা তো কেটে যায়।
- আচ্ছা খুব ভালো কথা। মনে করেন আপনার এই সূচি কর্মটা দিয়েই যদি আপনি কিছু টাকা আয় করতে পারেন সেটা ভালো হয় না?মনে করেন আমরা কোনও কুটিরশিল্প মেলার আয়োজন করলাম, সেখানে আপনার এই সেলাই ফোঁড়াইও থাকলো, আরও নতুন অর্ডার পেলেন এই এমন আর কি।
- আসলে কী করতে চাও তুমি ?
- তরু আপা, ভুল বললেন। আমি কি করতে চাই এটা ঠিক না।
বলেন " আমরা কি করতে চাই"। এই মনে করেন আমি, আপনি, এই কলোনির আরও অনেকেই আছেন আমার, আপনার বয়সী বা তার চেয়েও বয়সে বড় কেউ আছেন। এই ক্লাবে শুধু যে কলোনি কেন্দ্রিকই সদস্য হবে সেটা নয়, কলেজে আমাদের বন্ধু-বান্ধবী আছে না? ওরাও আসবে। এজন্য আমাদের একটা স্থায়ী ঠিকানা বানাতে হবে। তাই ভাবছিলাম আমরা কয়েকজন মিলে যদি একটা ক্লাব বানাতে পারতাম, ভালো হতো।
কাজও হতো, বিশ্রাম আর আড্ডা সবই হতো।
আমার কথা শুনে তরু আপা আশান্বিত হতে হতেও কেমন দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যান। বলেন - আচ্ছা দেখি তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করে। সারাদিন ঘরে থাকতে কিন্তু আমারও ভালো লাগে না, নীতু।
আমি বললাম - ভাবেন।
তরু আপা ভাবতে থাকুক, স্বপ্ন দেখতে থাকুক। আর আমার কাজ হচ্ছে স্বপ্নের বীজ একটু একটু করে বুনে দেয়া, তার যত্নআত্তি করা। একটা ক্লাব বানাতে কী বড় কারো সাহায্য নেবো, বুদ্ধি পরামর্শ? ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু আমিও কী বড় হইনি? বয়স আমার ইতিমধ্যে আঠারো পেরিয়ে উনিশে। আর কতো বড় হবো !
আমি আমার ভাবনা একে একে আমাদের কলোনির বীথি, সেলিনা,মনি, ছন্দা আপা, পারুল আপা, কাকলী, পূজা আপা, সুপ্তি, মিমি সবার সাথেই শেয়ার করি।
এর মাঝে পারুল আপা মেজাজ খারাপ করা কথা শোনালেন।
- নীতু, তুমি এইসব বলতে আইসো না। ঐদিন তুমি যা যা বলছো, আমার শাশুড়ি পাশের ঘর থেকে সব শুইনা ফালাইছে।
- তো সমস্যা কী। খালাম্মাও আমাদের ক্লাবে যাবেন।
উনি তো বিকেলে এমনিতেও বাসার সামনে হাঁটাহাঁটি করেন মানিক ভাইয়ের আম্মার সাথে।
- তুমি বিয়া শাদী করো নাই। সংসারের ঝুট ঝামেলা বুঝনের বয়স তোমার হয় নাই। শাশুড়ি লইয়া যখন খাইতে হইবো তখন বুঝবা। আমারে কইছে এইসব কেলাবে কুলাবে গেলে ফরিদপুরে বাপের বাড়ি পাঠাইয়া দিবো।
- এজন্যই তো বলি ঘর থেকে একটু বের হতে শিখেন, আলো বাতাসে হাঁটেন। ভয় পান কেন?আপনি আপনার শাশুড়িকে বুঝিয়ে বলেন, উনাকেও নিয়ে আসেন। উনি এসে দেখুক, আমরা তো কোনও খারাপ উদ্দেশ্যে ক্লাব খুলতে চাইনি।
- থাউক ভাই, আমারে তোমরা বাদ দেও।
- উফফ পারুল আপা ! আপনি না ! কাঁদবেন না তো ! আপনি না এসএসসি পাশ করেছেন, নিরক্ষর তো না।
উনি নাক টেনে ফোত ফোত শব্দ করে কাঁদেন। আমার বাপ মায় আমার জীবনডা জ্বালাইয়া দিলো এইখানে বিয়া দিয়া। তোমার ভাইও কি কম নাকি? এই দোষ হেই দোষ! আল্লাহ আমারে উঠাইয়া নেও তুমি। আমি বিরক্ত হয়ে চলে আসি পারুল আপাদের বাসা থেকে। সংসার আর মরণ - এর বাইরে কি মেয়েরা বিয়ে হবার পর ভাবতে পারে না? তবে হাল ছেড়ে দেই না এতো সহজেই।
জানি পারুল আপাও একদিন আমাদের সাথে ক্লাবে যোগ দেবেন। আমার ভাই অনীকটারও পেট পাতলা। ওর বন্ধু রবিনকে বলে দিয়েছে আমার পরিকল্পনার কথা। বিকেলগুলোতে নিচে ক্রিকেট খেলতে নামে ওদের বয়সী ছেলেগুলো। রবিনটা বেশি ফিচেল, গতকাল দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলো –
নীতু আপা, ক্লাবের মেম্বার যোগাড় করতে পারলেন ? না পারলে বলবেন কিন্তু আমরাই মেম্বার হয়ে যাবো।
পাশ থেকে জনি উত্তর দেয় -
আরে নাহ্। ক্লাবের নাম লেডিজ ক্লাব, জেন্টস আর নট এলাউড! তাই না নীতু আপা?
আমি কটমটিয়ে অনীকের দিকে তাকাই। বুঝিয়ে দেই বাসায় আয় তারপর তোকে বানাবো। আমি জানি গত কিছুদিনে পুরো কলোনিতে আমার এই ক্লাব বানাবার পরিকল্পনা কোনও না কোনও ভাবে চাউর হয়েছে। সেটা সমস্যা না, লুকিয়ে চুরিয়ে তো আর কিছু করার ইচ্ছে ছিলোও না আমার।
মেজাজটা খারাপ লাগে তখনই যখন কেউ টিটকারি মেরে কথা বলে, ভাবে ছেলেখেলা খেলতে নেমেছি। সবাই যে একেবারে হতাশাজনক কথা বলে তাও না। কাকলী যেমন খুব এক্সাইটেড হয়েছিলো শুনে, বলেছিলো দোস্তো, আমি তোর সাথে আছি। কেউ আসলে আসুক না আসলে নাই। মা'কে বললে মা একটা রুম দিতে রাজি হবে।
ঐ যে বৈঠকখানা যেটা, ওইটা।
- তোর ভাই পারমিশন না দিলে তখন?আমি চিন্তিত হয়েই বলি অনেকটা।
- আরে মানিক ভাই কোনও সমস্যা না। ভাইয়াকে আমি বলেছি।
- তোর ভাই তো এখন ক্লাব করার পারমিশন দিবেই।
খালু মারা যাবার পর তো তুই খালাম্মার সাথেই এক রুমে থাকিস। ড্রয়িং রুমটা তোদের খালিই পড়ে থাকে। মানিক ভাই কয়দিন পর বিয়েশাদী করলে তো আমাদের এখান থেকে ভাগিয়ে দিবে। তখন ?
আমার মুখে মানিক ভাইয়ের বিয়ের কথা শুনে কাকলী মিটমিটিয়ে হাসলো শুধু। আচ্ছা তুই শুধু শুধু এতো টেনশন করিসনা তো।
কে কে সদস্য হতে রাজি আছে, লিস্ট করে ফেল। ভাইয়া বলেছে অফিস থেকে কম্পিউটারে ফর্ম আকারে কাগজ প্রিন্ট করে দিবে। কিন্তু মনিকে আমার পছন্দ না।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, সে কী, কেন ?
- আর বলিস না। হিংসুটি মেয়ে একটা।
আইডিয়া দিলি তুই আর কলেজে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে এই ক্লাবের সভাপতি সে হবে। এসব শুনে ইচ্ছে করছিলো ওকে একটা চড় লাগাই। ওর বাপ বড় পোস্টে চাকরী করে বলে ওকে কি মাথায় উঠিয়ে রাখতে হবে নাকি। ফাজিল একটা
আমারও শুনে রাগ হয়ে যায় মনির উপরে, কারণ এই লেডিজ ক্লাবের আইডিয়া নাকি ওর! বলে কী ! কিন্তু তাই বলে তো আর ওকে সদস্য করা থেকে বিরত রাখতে পারি না। তবে আমাদের পাশের বিল্ডিং এর ছন্দা আপা খুব স্পোর্টিভ , সাথে উনার বর মাহিন ভাইও।
রাতে খেতে বসে ভেবেছিলাম আমার আব্বার কাছেও কয়টা কথা শুনতে হবে ক্লাব নিয়ে কারণ মা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে আব্বার কান ভারী করেছে এসব বলে বলে! মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে। ওর বিয়ের ব্যবস্থা করো। আরও কতো কি ! প্রায়ই এসব বলে। এখন শুনে শুনে আমারও মুখস্থ হয়ে গেছে।
আব্বার প্লেটে ভাত তুলে দিতে গিয়ে মা জানায় - শুনেছ, তোমার মেয়ে তো কৃষ্ণনগরের নারীদের নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।
কি জানি ক্লাব খুলবে। সময় থাকতে মেয়েকে বোঝাও।
- সমস্যা কী?খুলুক না। তুমিও গিয়ে যোগ দাও। আমার সংসারের ঘানি টানতে টানতে না তুমি বুড়ি হয়ে যাচ্ছ? তুমিও একটা লুডু কিনে ক্লাবে গিফট করো।
তারপর মানিকের মা, তরুর শাশুড়ি উনাদের সাথে গিয়ে দু একদান লুডু খেলে এসো। সময় ভালো কাটবে। হাহহাহা। আব্বার কাছে মা পাত্তা না পেয়ে অকারণেই অনীককে ধমকে বলে -
- সবজির বাটিটা দূরে সরালি কেন?তিন বেলা খালি রোজ রোজ মাংস খেতেই ভালো লাগে না? বলতে বলতে মা দুই চামচ সবজি ভাজি অনীকের প্লেটে তুলে দেয়। মায়ের অবস্থা দেখে আমি মুখ টিপে টিপে হাসি বলে রেগে গজগজ করতে করতে মা বলে- বেশি বাড়িস না।
কপালে তো শান্তি নাই তোর বুঝাই যায়
-আহ নীতুর মা, খেতে বসে এসব কী শুরু করলা। খাও তো। তোমার ভালো না লাগলে তুমি যেও না ওদের ক্লাবে। লুডু যাও তোমার গিফট করা লাগবে না। আব্বার খোঁচায় মা আরও জ্বলে ওঠে, বলে –হুম আমার কথা ভালো লাগে না কারোই।
যার যেভাবে খুশী সে মতো চলো গে যাও।
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ ক্লাব নিয়ে অনেক কিছু ভাবতে ভালোই লাগে আমার । রান্না, বুটিক, খেলাধুলা, ফ্যাশন ইত্যাদি নানান বিভাগ করে অল্প পরিসরে আমরা চাইলে আগাতে পারি। বিভিন্ন উপলক্ষ্য ধরে মেলার আয়োজন করতে পারি। ভাবছি কাকলীকে সহ-সভাপতি বানাবো ক্লাবের।
কিন্তু নিজে তো রান্নার কিছুই জানি না। মা তো এই কারণেই উঠতে বসতে বলে - শ্বশুর বাড়ি গেলে কপালে আমার দুঃখ আছে। আহা রান্নাবান্না শেখা আর পারার মাঝেই বুঝি খুব সুখ গচ্ছিত আছে! মায়ের যত অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা। আমি রান্না না হয় নাই ই পারলাম কিন্তু রান্নার একজিবিশন হলে শুধু যে পিঠা পুলির আয়োজনই আমরা করবো সেরকম ভাবার কোনও কারণ নেই। দেশীয় খাবার বিশেষ করে আমাদের এখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ থাকে, তারা যদি তাদের এলাকার স্পেশাল খাবার গুলো রান্না করে কতো ভালোই না হবে।
আসলে আমাদের অন্তঃপুরে থাকা মা, বোন, খালা, চাচীদের অনেক গুনই আছে কিন্তু সুযোগ, ভাবতে শেখা, সাহস আর সংঘবদ্ধতার অভাবে তাদের ইচ্ছেটাই মরে যায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে। চর্চার অভাবে অনেক গুনই হারিয়ে যায়। তাদেরকে একত্র করতে পারলেই আমাদের এ মিশনে আমরা একধাপ এগিয়ে যাবো। জানি শুরুটা করা কষ্ট হবে, তাদের ভেতরের আড় এতো সহজেই ভাঙবে না, অনেকেই টিপ্পনী কাটবে। আর কাটলেই কি, পরে তারাও ঠিক আসবে, জানি আমি।
ক্লাব নিয়ে নানান রঙিন ভাবনায় বুঁদ হয়ে থাকার কারণে বিছানায় শোবার অনেক সময় পরেও আমার চোখে ঘুম আসে না। নারীবাদ বলে যে কথাটা প্রায়শই শোনা যায় সেরকম ব্যাপার মোটেও আমার মাঝে কাজ করে না। আর যদি কাজই করতো তাহলে নিশ্চয়ই কাকলীর মানিক ভাইয়ের সহযোগিতা নিতে রাজি হতাম না। মানিক ভাই মানুষটা একটু গম্ভীর। উনার সামনে কথা বলতে গেলে কেমন যেন একটু নার্ভাস হয়ে যাই।
উনি যখন জিজ্ঞেস করলেন –
তোমাদের ক্লাবের জন্য একটা রেজিস্ট্রেশন ফর্ম বানানো দরকার, যেখান থেকে পরে আরও অনেক কপি প্রিন্ট হবে। ক্লাবের নাম ঠিক করেছ?
আমি উত্তর দেয়ার আগেই কাকলী বলেছিলো - ভাইয়া এটা আবার তোর জিজ্ঞেস করতে হবে? কেন তোকে আগে বলেছিলাম না আমাদের ক্লাবের নাম " লেডিজ ক্লাব"? মানিক ভাই কাকলীর চেয়ে বয়সে আট বছরের বড় হলেও কাকলী তুই তুই করেই উনাকে সম্বোধন করে। ছোটবেলায় নাকি খালুর কাছে পিটুনি খেয়েও কাকলীর এই স্বভাব যায়নি।
- হুম বলেছিলি কিন্তু পরে তো তোদের সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। যা বলার তাড়াতাড়ি বল, সকালে অফিসে গিয়ে তোদের কাজটা করে ফেলবো।
কাল একটু কাজের চাপ কম আছে।
মানিক ভাই তার বাবার সুবাদেই চাকরীটা পেয়ে গেছেন খালু মারা যাবার পর। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর পরই বিআইডিসিতে উনার চাকরীটা হয়ে যায়, যে কারণে উনার বয়স কম হলেও মুখে একটা গাম্ভীর্য লেগে থাকে সবসময় নাকি ইচ্ছে করে গম্ভীর হবার ভাব নেয় কে জানে।
কই নীতু, বলো ক্লাবের নাম এটাই রাখবে শেষ পর্যন্ত?
- কেন ভাইয়া এই নামে সমস্যা ?
- ঠিক সমস্যা না। বয়েজ ক্লাব হতে পারলে লেডিজ ক্লাব কেন হতে পারবে না? কিন্তু নামটা শুনলে কেমন লুতুপুতু ধরণের একটা ভাব আসে।
তোমার ক্লাবের নামটা কেন " স্বপ্ন" দিচ্ছো না ?
- ভাইয়া স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে তো ক্লাবই দিচ্ছি। আর নারীদের নিয়ে এমনিতেই মানুষ দুর্বল ধরণের ভাবনা ভাবে। কিন্তু নারীরা সব দিক দিয়ে দুর্বল না এটা মাঝে মাঝে প্রকাশের প্রয়োজন আছে। যে যা খুশী ভাবুক, আমাদের ক্লাবের নাম আমরা এটাই দিবো।
আমার কথা শুনে মানিক ভাই মিটিমিটি হেসে মাথা নাড়ান।
বলেন - আচ্ছা, তাই হবে। আমি একটা খসড়া করে কাকলীকে দিয়ে দিবো। তোমরা বসে ঠিক করে নিও কী করবে কিংবা আরও কোনও কিছু যোগ করবে কিনা রেজিস্ট্রেশন ফর্মে দেখে জানিও।
ক্লাব নিয়ে আরও অনেক কথাই এলোমেলো ভাবে ভাবি। ভাবতে ভাবতে কোনও এক সময় ঘুমিয়ে পড়ি।
মনের মাঝে একটা ভালো লাগার আবেশ কাজ করতে থাকে। এর মাঝেই একদিন কাকলী এসে হাতে এক গাদাপ্রিন্ট করা কাগজ ধরিয়ে দেয়। কী এগুলো?
- পড়েই দেখ। কাকলীর হাসি হাসি মুখ দেখে আমিও হাতে নিয়ে কাগজে চোখ বুলাই। আমার হাসিতে, চোখে মুখে একরাশ আলোর আভা কাজ করে যায়।
- আমাদের ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ! আমি খুশীতে কাকলীকে জড়িয়ে ধরি।
এর পরের কাজগুলো খুব যে দ্রুতগতিতে হয়েছিলো সে রকম নয় যদিও। তবুও কলেজ আর কলোনি মিলিয়ে ক্লাবের জন্য মোট সাতাশ জন সদস্য আমাদের হয়ে যায়। অবশেষে তরু আপাও সদস্য হন কিন্তু উনার শর্ত ছিলো এটাই যে উনি ক্লাবে আসবেন না, বাসায় থেকেই যতটা একাত্ম হওয়া যায় তাই থাকবেন। তবে আমার সংসারী মা ফাঁকে ফাঁকে আমাকে মনে করিয়ে দিতে ভুলতো না সামনে আমার কলেজের ইয়ার ফাইনাল, রেজাল্ট খারাপ হলে বিয়ে দিয়ে দিবে।
মায়ের কথাকে বেশি পাত্তা দেবার কিছু নেই ভেবে আমি আর কাকলী আমাদের ক্লাব রুমের সাজ সজ্জার দিকে মনোযোগী হই।
সামনের মাসের এক তারিখে আমাদের ক্লাবের উদ্বোধন, হাতে আছে আর মাত্র দুই সপ্তাহ। জানালা আর দরজায় ঝোলাবার জন্য পর্দার কাপড় কিনতে হবে। সদস্যদের বসার জন্য গোটা কয়েক চেয়ার, একটা টেবিল, ফুলদানী আর হালকা নাস্তার আয়োজন সব মিলিয়ে কতো টাকা খরচ হবে এ বিষয় নিয়ে দুজনে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ভাবি। তবে উদ্বোধনিতে খাবারের ব্যাপার নিয়ে ছন্দা আপা জানালেন দুশ্চিন্তার কিছু নেই, খাবারের দায়িত্ব উনি নেবেন।
সেলিনার বাবা চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেবেন আর আমার বাবা বলেছে টেবিল আমাদের ক্লাবের জন্য উনি উপহারস্বরূপ দিবেন। আমাদের কলোনির পূজা আপা হাতের কাজ খুব সুন্দর জানেন, উনি বলেছেন টেবিল ক্লথে নকশা তুলে দিবেন। আমার আর কাকলীর জমানো টাকা দিয়ে একদিন বিকেলে শহরে গিয়ে আমরা পর্দা, দরজা আর টেবিল ক্লথের কাপড় কিনে আনলাম। আমার রাগী রাগী,সংসার নিয়ে বিচক্ষণ ভাবনার মা’ও একদিন সেই পর্দা, টেবিল ক্লথ সেলাই করে হাসি হাসি মুখে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো - এই নাও। দেখবো তো ক্লাবে তোমরা কোন মহৎ কাজটা করো।
মায়ের এই আদর করে করে রাগের ভঙ্গীতে কথা বলাটা আমার ভীষণ প্রিয়। ছোট ভাই পাশ থেকে বলে - এই আপু, তোমাদের ক্লাবের উদ্বোধনের দিনে কি আমাদের ছোট ছোট ছেলেদের দাওয়াত দিবানা ? আমরা তো তোমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী?
- হুম কচু। যখন আমাদের ক্লাব নিয়ে ভেঙাস তখন তো এসব মনে থাকে না, না ?যা এখান থেকে। ভাগ
কিছুটা হাসি-আনন্দ-কিছুটা শংকা আসন্ন উদ্বোধন নিয়ে -- এভাবেই সময় গুলো পার হচ্ছিলো। হাতে আর মাত্র দুদিন আছে।
আমি আর কাকলী ভীষণ মাত্রায় উত্তেজিত এসব নিয়ে। কলোনির পুকুর পাড় ঘেঁষে কিছু ইট সুরকি রাখা, সেখানেই বিকেলে আমরা দুজন বসে ছিলাম। জেলা অফিস থেকে নাকি নির্দেশ এসেছে পুকুরের চারপাশে ইটের বাউন্ডারি দেয়া হবে যাতে আসছে বর্ষাকালে মাছেরা পুকুরের পানি উপচে ভেসে না যায়। সেই কতদিন ধরে ইট, সুরকী-বালি এভাবে পড়ে আছে। কবে কাজ ধরবে কে জানে!আরে বাদ দে এসব, শেষ পর্যন্ত আমাদের ক্লাবটা শুরুই হয়ে গেলো, কী বলিস কাকলী?
- হুম।
হয়েই গেলো। দেখ তো নীতু, ঐছেলে গুলোকে চিনিস নাকি?ঐ যে দেখ কেমন বিশ্রী করে তাকাতে তাকাতে যাচ্ছে। কাকলীর কথা শুনে আমি ওর চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে আমাদের বাঁ পাশ ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া ছেলেগুলোর দিকে তাকাই। এ কলোনিতে নতুন আসা রুমি আর রুবেলদের বাসার দিকে এগিয়ে যেতে দেখি। রুমি আর রুবেলদের বাসার পাশ ঘেঁষে আরেকটা বিকল্প রাস্তা আছে কলোনি থেকে বের হবার।
আমাদের কলোনির শেষ মাথার দিকে ছোট একটা রাস্তা আছে, যার ওপাশে আরও গ্রাম আর কয়েকঘর ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। ছেলেগুলোকে দেখে মোটেও ভালো ঘরের সন্তান মনে হয় না ওদের পোশাকআশাক আর সিগারেট ফোঁকার ধরণ দেখে।
- আরে বাদ দে। ইদানীং এসব ফালতু ছেলেদের আনাগোনা কলোনিতে বেড়ে গেছে। পেছন দিকের রাস্তাটা বন্ধ করলে এদের যাতায়াত এখান দিয়ে বন্ধ হয়ে যেতো।
আমাদের কলোনিতে তো বড় ভাই গোছের কতজনেই আছে, উনাদের চোখে কী এসব পড়ে না? আশ্চর্য! বাইরের আজেবাজে ছেলেরা এসে কলোনির পরিবেশ কেমন নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যাই হোক কাকলী আজকে সন্ধ্যায় পূজা আপাদের বাসায় যেতে হবে বুঝলি? টেবিল ক্লথটা রেডি হলো কিনা খোঁজ নেয়া দরকার। আর পরশুদিন সকালেই গিয়ে " অর্কিড" থেকে ফুল কিনে আনতে হবে কিন্তু মনে রাখিস। পরশুদিন কলেজে যাবো ঠিকই কিন্তু ক্লাস করবো না – কাকলীকে বলি আমি । নানা গল্পে বিভোর হয়ে ছিলাম আমি আর ও।
হঠাৎ সম্মিলিত হাসির শব্দে আমাদের আলোচনায় সাময়িক ছন্দপতন ঘটে। কানে আসে –
ঐ যে লিডাররা বইসা আছে দেখ। লেডিজ কেলাবের লিডার। মাইয়া মানুষ হইয়া কেলাব চালাইবো !
তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেগুলো যারা একটু আগে এ পথ দিয়েই হেঁটে গিয়েছিলো। ওদের কথা শুনে গায়ে কেন যেন আগুন ধরে গেলো।
পাশের ইট-সুরকীর স্তূপ থেকে আধা ভাঙা একটা ইট তুলে ওদের দিকে ছুড়ে মারি। কাকলীও মুহূর্তে আমার কাজে হতভম্ব হয়ে যায়। আরে আরে করিস কী! বলে কাকলী আমাকে নিবৃত্ত করতে চায়। ছেলেগুলোও ভীষণ অবাক হয়ে গেছে যেন। আহ্ নীতু থাম না।
দেখ তো কতো বাজে ছেলে এরা, যদি কিছু করে।
- ওদের কিছু করার সাহস আছে নাকি, মেরে হাড় ভেঙে দিবো। ক্লাব নিয়ে খারাপ কথা বলে, কত্ত বড় সাহস !
- তাই বলে ওদের তুই মারবি?
- না মারলে শিক্ষা হবে নাকি?মেয়েদের নিয়ে টিজ করে ! আমার রাগে শরীর কাঁপছে এক সময় খেয়াল করি। ঐ বাজে ছেলে গুলো তো একটা উদাহরণ মাত্র। ওদের মতো মানুষেরাই আমাদের স্বপ্নের মাঝে এক তাল কালি ছড়াতেই আশেপাশে ঘুরঘুর করে আর যারা এরকম অদৃশ্য কালি অহরহ ছিটিয়ে বেড়াচ্ছে, আমাদেরই পরিচিত কোনও আত্মীয়- ভাই বা বন্ধু প্রয়োজনে তাদেরও আমি এভাবেই মারবো প্রয়োজন হলে।
বেলা পড়ে আসছে। আমার কিছুক্ষণআগের সেই বুনো রাগটাও চলে গেছে। একটা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। পরম যত্নে আমি আমাদের স্বপ্নের ক্লাবের উপর ঢালা কালিগুলো মুছে দিতে থাকি যা একদল হায়েনা কলুষিত করতে চেয়েছিলো।
সমাপ্ত
উৎসর্গ - স্বপ্ন দেখা মানুষদের জন্য
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।