আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘামার্ত কুকুর, ঘামার্ত দুপুর

বারবার শুধু ছিটকে পড়ি অশ্লীল কারাগারে বিভূতি বাবু হলে না হয় লিখতেন ’বোশেখের লগ্ন ঠিক জমিয়া উঠার প্রাক্কালে কাচা আমের গায়ে একটু সিঁদুরে রঙ ছড়াইয়া পড়ি পড়ি ভাব হইয়াছে’। আপাতত তরুণীটির গালের ব্যবচ্ছেদেই ঘণীভুত থাকে বিপুল। তবে এ ধরনের অনুভুতি এ যুগে বেমানান। অনুভুতি হতে হবে সরাসরি ইন্দ্রিয়ক, আরো সরাসরি বলতে গেলে জননেন্দ্রীয়র সাথে মস্তিষ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিউরণের সরাসরি যোগাযোগ থেকে উৎসারিত। এসব জ্ঞানগরিমাময় আলোচনা টক শো এর বিষয়ে, এখন হা করিয়া তরুণীটির বিশেষ স্থানগুলো গিলিতে হইবে, পাছে না আবার কম পড়ে।

চক্ষু, কর্ণ, জননেন্দ্রিয়ের বিবাদ ভঞ্জণ করে তরুণটিকে বাসের গেটের পৌছে যাওয়ায় তাকে জায়গা করে দিতে কামার্ত যাত্রীগণের মধ্যে সধৈর্য্য সংকোচন প্রসারণ পর্ব। তবে তাতে যা লাভ হল তা সামনের দিকে কিছু কামার্ত যাত্রীর। মধ্য বা পিছনের দিকের ঘামার্ত যাত্রীরা জানালা ভেদ করে নতুন কোন তরুণী, বালিকা অর্থাত স্ত্রীলিঙ্গের ব্যবচ্ছেদ করায় ব্যস্ত হয়ে গেল। বিপুলের অবস্থান চিরাচরিত নিয়মে স্রোতধারার বিপরীতে। ঘামার্ত অবস্থা থেকে কামার্ত অবস্থায় উত্তরণের ইচ্ছা থেকে তরুণীটিকে একটু আগ্রহ ভরে মাপার চেষ্টা বেহিসেবী ঘামে বাধা পড়তে লাগল।

দৃষ্টি আটকে গেল তরুণীর গলায় ঝোলানো আইডিতে। ’উচু জাতের কুকুর। নাকি কুত্তি হবে’ - না কুত্তি বললে অন্য গোত্রভুক্ত হয়ে যাবে। তার চেয়ে মেয়েটিকে স্বগোত্রীয় কুকুর ভাবাটাই যুতসই। তবে উচু জাতের।

ফোন কোম্পানী বা বিদেশী ব্যংকগুলো উচু জাতের কর্পোরেট কুকুর লালন করে। আলগোছে নিজের আইডির দিকে খেয়াল করে বিপুল। পকেটে লুকানো আছে। তার মতো নিচু জাতের কর্পোরেটিয় কুকুরদের আইডি শুধু অফিস রুমেই ঝোলানো চলে, বাইরে ঝুলিয়ে করুণার পাত্র হতে চায়না। ঘাম মুছতে গিয়ে থুতনির কাটা দাগে আঙুল পড়ায় নস্টালজিয়ায় আদ্র হয় বিপুল।

বাবার ফেলে দেয়া কোমড় বন্ধনি দিয়ে বিপুল বিক্রমে ঘোড়া হাকাতো । মহিনদা হঠাৎ করে ভাগ বসাতে চাইল বিপুলের সম্পদে। মহিনদা কে আউট ল ঘোষনা করে সতর্ক হয়ে উঠে । ঠিকই একদিন হামলা চালাল সে সুমনকে সঙ্গে করে। মরিয়া হয়ে বিপুল সম্পদ তার সম্পদ বাচাতে চেষ্টা চালালো।

দুজনের বেমক্কা ঘুষিতে ঘাটের ওপর পরে থুতনি ফাটালো বিপুল সাথে হাতছাড়া হয়ে গেল বেল্টটি। শোক সামলে উঠতে কয়েক ঘন্টা সময় চলে গেল । ততক্ষনে বেল্টের অবস্থান রড্রিকের গলায়। এই অনাহুতে অনারে রড্রিকের হাটাচলায় একটা ভারিক্কি ভাব এসে গেল। বিপুলকে খুব একটা তোয়াক্কা না করে মহিনদার সাথেই বেশ একটা ভাল বোঝাপড়া গড়ে উঠে সেসময়।

রড্রিকের গলার কোমড় বন্ধনীটির মতোই বিপুলের গলা চেপে ধরে আইডির রশি। হাসফাস করে বিপুল। মালিক পক্ষকে গালাগালি দিতে গিয়ে লাগাম টেনে ধরে। কি জানি কবে আবার গলায় আইডি না থাকলে সিটি কর্পোরেশন গাড়ি এসে পাছায় সুচ ফুটিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে যাবে জুরাইন গোরস্থানে। তার চেয়ে বরং আদর্শ কর্পোরেট কুকুর হওয়ার চেষ্টা করা যাক।

আদর্শের মানদন্ড মেলাতে পারেনা বিপুল। রড্রিকের জীবন তবুও ভাল ছিল। সকাল বিকাল এটো ঘেটো খেয়ে সারাদিন পাড়া দাবড়িয়ে রাতে টানা ঘুম। শুধু ভিখারী বা দুর্বল গোত্রের অপরিচিত কাউকে পেলেই চেকনাই জানান দেয়ার পরীক্ষা। আর মওসুম আসলে উত্তেজনার সামাল দিয়ে বাকী সময় একঘেয়েমি জীবন।

রড্রিকের জীবনটা ইর্ষা বাড়ায় বিপুলের। জাস্ট টাইমে অফিসে প্রবেশ, ব্যত্যয় ঘটলেই বড় কুকুরদের দাতাল চাহনিসহ বার্কিং। তবে বিলম্বিত প্রস্থানে বড় কুকুরগুলোর আশ্চর্য নির্লিপ্ততা। ম্যাচুওরড রাতে গৃহপ্রত্যাবর্তন কখনও পরিজনদের ক্লান্ততা কখনও নিজের ক্লান্ততা ব্যক্তিজীবন ছাপিয়ে কুকুর জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর কুকুরদের মতো মওসুমী ব্যবস্থা থাকলেও না হয় পরিপূর্ণ ঐন্দ্রেয়কি সুখটা উসুল করা যেত।

কর্পোরেট কুকুরদের দৈহিক মিমাংসাটা রুটিনময়, উত্তেজনাটা ছোট গল্পের মতো -’শেষ হইয়াও হইলনা শেষ’। ’মামা, উঠেন’। কুকুর বিষয়ক বিভ্রান্তিতে কখন যে বাস থেকে নেমেছে বিপুল মনে করতে পারেনা। রিক্সাওয়ালার হাকে সম্বিত ফিরে পায় বিপুল। ঠাডাইয়া একটা চড় দেওয়ার ইচ্ছের লাগাম ধরে বিপুল।

কতটা ছোটজাতের কর্পোরেট কুকুর হলে তাকে স্যার না ডেকে মামা ডাকার সাহস পায়। এইচএসবিসি’র দুই তরুণী আইডি ঝুলিয়ে গল্প করতে করতে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। তড়িৎ গলায় ঝোলানো আইডি পকেটে পুরে ফেলে বিপুল।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.