[এটাকে গল্প বলবো না স্মৃতি কথা বলবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। যেটাই হোক, পড়ে যদি কেউ বুঝতে পারে সেখানেই সার্থকতা]
বয়সটা ঠিক কত ছিল তা এখন মনে নেই। শুধু গল্পটাই মনে আছে। আব্বু প্রায় প্রত্যেক দিন রাতে টোস্ট বা বিস্কুট নিয়ে আসতো,পরের দিন সকালের নাস্তা হিসাবে। সকালে যখন জানতে চাইতাম কে বিস্কুট নিয়ে আসছে তখন আম্মু আমাদেরকে একটু মজা করেই বলতো ইঁদুরে তোমাদেরকে টোস্ট আর বিস্কুট দিয়ে যায়।
আমরা অবশ্য ঠিক বলেই তা মেনে নিতাম।
প্রত্যেক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খাটের নিচে রাখা টোস্ট আর বিস্কুটের কৌটার জন্য ঢুঁ মারতাম। কৌটা খুললেই পেয়ে যেতাম ইঁদুরের দেয়া উপহার। তবে একদিন তার ব্যতিক্রম ঘটল। খোঁজ দ্যা সার্চ করে দেখি বিস্কুট বা টোস্ট কিছুই নেই।
মনে মনে খুব রাগ হচ্ছিলো। ইঁদুর ব্যাটা এমন ভুল কিভাবে করলো।
অবশেষে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম। আজ দোকান থেকে বিস্কুট কিনে খাবো। ইঁদুর বিস্কুট দেয়নি তাই বলে কি আজ না খেয়ে থাকবো!
আসল গল্পটা শুরু করার আগে কিছু বলে নেয়া দরকার।
আগেই বলেছি বয়সটা কত ছিল তা ঠিক মনে নেই। তবে ঐ বয়সে এটুকু জানতাম যে দোকানে গেলে আমাকে কিছু ফ্রি দিবে না। টাকা নিয়ে যেতে হবে সাথে। কিন্তু একটা জিনিস আমার কাছে তখন অজানা ছিল। সমস্যাটি হল টাকার মান জানতাম না।
আমার কাছে এক টাকা,পঞ্চাশ টাকা আর একশো টাকার নোটের কোন পার্থক্যই ছিল না।
আব্বু ঘুমিয়ে আর আম্মু রান্না ঘরে। আলনার উপর থেকে টেনে-টুনে আব্বুর প্যান্ট নামালাম। প্যান্ট নামিয়ে পকেটে হাত ঢুকাতেই হাতে উঠে আসলো এক খানা নোট। এইবার আর আমার বিস্কুট খাওয়া ঠেকায় কে।
পকেটওয়ালা একটা টি-শার্ট ছিল আমার। টাকাটা হাতের ভিতর মুরিয়ে টি-শার্টের পকেটে হাতটা ঢুকিয়ে রাখলাম। পাছে কেউ দেখে না ফেলে। পা টিপে টিপে এগিয়ে চললাম বাড়ির গেট পেরিয়ে। বাসার সামনের দোকানটা তখন খোলা।
তাহলে আজ বিস্কুট কিনতে পারবো!! ঠোঁটের কিনারায় নিজের অজান্তেই একটা পাওয়ার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ,হাসি এসে জমালো।
যে দোকানটাতে বিস্কুট কিনতে গিয়েছি সেই দোকানদার আমাকে আগে থেকেই চিনেন। আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে জানতে চাইলেন আমার কি চাই। আমি আঙুল উঁচিয়ে একটি বিস্কুটের বোয়েম নির্দেশ করলাম। বললাম, “আমি ঐ একটা বিস্কুট নিবো”।
লোকটা বোয়েম খুলে আমার দিকে একটা বিস্কুট এগিয়ে দিলেন। বিস্কুটটা হাতে নিয়ে আমি তখন খুব আনন্দে আছি। একা একা বিস্কুট কেনা শিখে ফেলেছি!!!! আর ইঁদুরের অপেক্ষায় থাকতে হবে না!! দোকনদার আমার কাছ থেকে টাকা আশা করছিলেন না। আমি হাতের মুষ্টিতে মোড়ানো টাকাটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম। যাহোক টাকাটা নিতে সম্মত হলেন।
হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। টাকাটা হাতে নিয়ে পুরোপুরি ছড়ানোর দোকানদার বুঝতে পারলেন সেটি পাঁচশত টাকার নোট। আমি ফিরে আসার সময় দোকানদার আমাকে পেছন থেকে ডাক দিলেন। টাকাটা হাতে নিয়ে দোকানদার আমার দিকে বিস্মিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে। সাথে অন্য কাস্টমার যারা দোকানে বসে ছিলেন তাঁরাও ছানাবড়া চোখ করে আমার দিকে আছেন।
আমি তখনও বুঝতে পারিনি কারণটা কি।
দোকানদার এবার দোকানে থেকেই আব্বুর নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়েই আছি তার দিকে। কিছুক্ষণ এর মধ্যেই আব্বু ঘুম ঘুম চোখে দোকানে এসে হাজির হল। পুরো ঘটনাটা দোকানদারের কাছ থেকে শুনে আব্বু আমার দিকে একটু কঠিন দৃষ্টিতে তাকানোর চেষ্টা করলো।
কি মনে করে কিছুক্ষণ পরে হেসে ফেললো।
পরে জানতে পেরেছিলাম বিস্কুটটার দাম ছিল এক টাকা। এক টাকা দামের সেই বিস্কুটটা তখনও আমার হাতে। বাড়িতে যাওয়ার সময় আব্বু আমাকে একটা কথা বুঝিয়ে বললো,প্রত্যেকটা টাকার আলাদা আলাদা মূল্য আছে। তোমাকে জানতে হবে কোন টাকার মূল্য কত।
তারপর দোকানে এসে বিস্কুট কিনবে।
আব্বুর বলা সেই কথাটা আমি এখনো ভুলতে পারিনি। আসলে,শুধু টাকা নয় প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা আলাদা মূল্য আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।