আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসপাতালেও মেয়ের যৌতুকের চিন্তা

মেয়ের বিয়ের যৌতুকের টাকা শোধ করতে দেড় বছর আগে রানা প্লাজায় কাজে গিয়েছিলেন জরিনা খাতুন (৩৫)। যৌতুকের পুরো টাকা শোধ না হওয়ায় এখনো মেয়েকে মারধর করেন তাঁর স্বামী। আর রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জরিনার ভাবনায় শুধু যৌতুকের টাকা পরিশোধের চিন্তা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে গত শনিবার গিয়ে দেখা যায়, জরিনার পায়ে এলিজারোভ (লোহা ঢুকিয়ে টানা দেওয়া) করে খাটের সঙ্গে টানা দিয়ে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় ডান হাতের দুটি আঙুলও কাটা পড়েছে তাঁর।

ঘা শুকায়নি এখনো।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বি কে দাম বলেন, ধ্বংসস্তূপের চাপায় পড়ে জরিনার হাড় গুঁড়া হয়ে যায়। তাঁর কোমরের নিচের অংশে স্নায়ু অকেজো হয়ে গেছে। এখন তাঁর দুই পায়ের ভাঙা হাড় ঠিক করতে এলিজারোভ করা হয়েছে। এতে হাড় ঠিকমতো প্রতিস্থাপিত হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্নায়ু সচল করার চেষ্টা করা হবে।

জরিনার বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাটকুণ্ড গ্রামে। অল্প বয়সে বিয়ের পর সন্তান পেটে থাকতেই স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সেই মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়েতে ৪০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল। টাকা জোগাড় করতে দেড় বছর আগে রানা প্লাজায় কাজে যান।


জরিনা জানান, টাকা জমানোর জন্য অন্যের বেঁচে যাওয়া খাবার খেয়ে দিন কেটেছে তাঁর। এভাবে মাত্র ৩০০ টাকায় মাস পার করেছেন। এভাবে যৌতুকের ৩০ হাজার টাকা শোধ করেছেন। রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার দিন তিনি আটতলায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর কোমরের ওপরে একটা বিম ভেঙে পড়ে।

তাঁর হাতের ওপর একটি পিলার ধসে পড়ে আঙুল দুটো কাটা পড়ে। ওই দিনই রাত একটায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
জরিনা আরও জানান, ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার সময় সরকারি সাহায্য হিসেবে মাত্র ১০ হাজার টাকা আর একখানা কাপড় পেয়েছেন। ছয় মাস ওই হাসপাতালে তাঁকে দেখার মতো কেউ ছিল না। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই তিনি বাড়িতে আসেন।

চিকিৎসকেরা এক মাস পর আবার ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে যেতে পারেননি। অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন।
হাসপাতালে তাঁর বড় বোন জাহেদা বেগম বলেন, তাঁরও সংসার রয়েছে। হাসপাতালে বেশি দিন থাকার উপায় নেই। জরিনা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জামাই মেয়েকে মারধর করে বলেছে, “তুর মায়ের কাছ থ্যাকা ট্যাকা নিলি না ক্যান।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।