হঠাৎ খবর পেলাম এককালের পিজি হাসপাতালে আনসার সদস্যরা নির্বিচারে রোগীদের পিটাচ্ছে। আমি ছুটলাম। ওখানে আমার কোন রোগী নেই। পেশাগত কারনেই ছুটে যাওয়া। তাছাড়া একটি হাসপাতালে কি কারনে কেবিনের ভেতরে গিয়ে রোগীদের মারধর করা হবে? তাও আবার হাসপাতালের শৃংখলার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা? এতদিন জেনেছি শৃংখলা বাহীনির মধ্যে আনসাররা সবচেয়ে বেশি নিরীহ ও নির্যাতিত।
গিয়ে দেখলাম ঘটনা সত্যি। জানতে পারলাম.....
কাটাবনের জসিম। তিনি একজন ব্যবসায়ী। পাঁচ দিনের নবজাতককে নিয়ে শিশু বিভাগে এসেছিলেন, এখন আহত। আহত তার শিশুটিও।
ঘটনা কি জানতে চাইলে তিনি বললেন, টিকিট কাউন্টারে আসার পর এক আনসার সদস্য তার স্ত্রীর গায়ে ধাক্কা মারে। এতে তার স্ত্রী শিশুসহ মাটিতে পরে যায়। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আনসার সদস্যরা তাকেও মারধর করে এবং একসময় ক্যাম্পে নিয়ে যায়। কেন তার গায়ে ধাক্কা মারলো ঐ আনসার? আনসাররা জানালো, হাসপাতালে সকাল বিকাল নানারকম মানুষ প্রবেশ করে। রোগীর ভিজিটরদের জন্য এবং স্টাফদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ থাকলেও কেউ এই শৃংখলা মানতে চায়না।
এমনই এক সন্দেহভাজন স্টাফকে জিঙ্গাসাবাদ করায় ঐ স্টাফ ক্ষেপে গিয়ে তাকে ধাক্কা মারে। পরে আনসার সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে গেলে রোগী স্টাফ ও আনসাররা বিবাদে জড়িয়ে পরে। ছুটলাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খোঁজে কিভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারলো। গিয়ে দেখলাম সেখানে আনসার সুপারিনটেন্ডেন্ট ও রমনা জোনের পুলিশ মিটিংয়ে বসেছে। বুঝতে পারলাম ঘটনা বহুদুর গড়িয়ে গেছে।
তা না হলে এত তাড়াতাড়ি জরুরী মিটিংয়ে আমাদের দেশের কর্তৃপক্ষের বসার কথা না। এবার আমি অনুসন্ধান করতে থাকলাম। তাহলে কি সত্যি সত্যিই ওয়ার্ড আর কেবিনে যেয়ে আনসার সদস্যরা আক্রমন চালিয়েছে। এমন একটি কল্যাণকর স্থানে, যেখানে মানুষ সুস্থতার সেবা পেতে আসে সেখানে এসে নির্যাতনের শিকার হবে? হ্যা তাই। আগে যা বলেছি ঘটনার সুত্রপাত সেখানে নয়।
জানতে পারলাম...
সকাল থেকেই আনসাররা কোন একটি কারনে আক্রমনাত্নক হয়ে আছে। তাছাড়া এর আগেও তারা নানারকম কুকীর্তি তারা করেছে। জানতে পারলাম দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে এক আনসার সদস্যকে আটক করে নিয়ে গেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। কেন?
নাম পাল্টে ফেলা পিজি হাসপাতাল ছিল কর্মচারীদের রামরাজত্ব! কর্মচারীদের যোগসাজসে হাসপাতাল চত্বরে নেশাখোরদের আড্ডা, মাগিবাজি,চাদাঁবাজি সহ সবই চলতো। কিন্তু সম্প্রতি একজন সেনা কর্মকর্তা দায়িত্ব নেয়ায় শৃংখলা আরো জোরদার করতে আনসার ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
ফলে কর্মচারীদের ক্ষমতা গেছে কমে। রামরাজত্বও চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে কর্মচারীরাও ক্ষেপে আছে আনসারদের উপর। আর আনসাররাও ছাড়ছে না তাদের। এই আনসার ক্যাম্প হবার পর থেকেই চলছে নানাধরনের বিরোধ।
এরমধ্যে গত রাতে ঘটলো বড় ধরনের পাশবিক ঘটনা!!!
যেসব ছেলেরা এখানে নেশা করতো তাদের সাথে হাসপাতাল কর্মচারীদেরও একটি নেশার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ফলে তারা নির্দ্বিধায় এই হাসপাতালের বারান্দায় রাত কাটাতো। আশির দশকের কবি রিফাত চৌধুরী, নব্বইয়ের মারজুক রাসেল, গায়ক পথিক নবি সহ এমন অনেক বিখ্যাত মানুষই আছেন যারা এই হাসপাতালে রাতটা কাটাতেন আড্ডা দিয়ে। ঘুমাতেন নেশা করতেন এখানেই। বর্তমানেও অনেক কবি এখানে রাতে ঘুমান।
গত রাতে এসময়কার এক কবির সাথে ঘুমাতে আসেন এক নারী কবি। যারা সি ব্লকের ৮তলার গাইনী বিভাগের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সারারাত আড্ডা দেয়ায় লিফট ম্যান মহিলা কবিটিকে দেখেছিল। এমনকি হালের ঐ ছেলে কবিটি, যে মাঝেসাঝে নেশা করতো তাও জানতো ঐ লিফটম্যান। ফলে এটা ধরে নেয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত যে মেয়েটি ভালো নয়।
সে সুযোগ পুরুপুরি কাজে লাগিয়েছে ঐ লিফটম্যান। এক আনসারকে ডেকে এনে আবিস্কার করেছে যে মেয়েটি বহিরাগত।
এদিকে আজ (সোমবার) দুপুর বারোটায় মহিলা কবি নিজে বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে।
এজহার অনুযায়ী, রাত সাড়ে তিনটার দিকে এক আনসার ও লিফটম্যান তাকে জিঙ্গাসাবাদের জন্য ডেকে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে পানির ট্যাংকির উত্তর পাশে নিয়ে আরো এক আনসার সহ পালাক্রমে রাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত ধর্ষণ করে।
। এজহারে তিনি লিখেন তার বাড়ি ধামরাইয়ে তিনি একটি বইয়ের প্রকাশনি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন পরে বন্ধুকে পেয়ে আড্ডা দিতে দিতে সময় পেরিয়ে গেলে রাতে তার আর যাওয়া হয়নি। ফলে তিনি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধুটি জোরপুর্বক আটকে রেখে তাকে ধরে ছাদে নিয়ে যায় তারা এবং তার অনুমতি ছাড়াই জোরপুর্বক ধর্ষণ করে। দুই আনসার ও লিফটম্যান।
তাদের নাম ধামও তিনি উল্লেখ করেন।
রমনা জোনের এডিসি এ বিষয়ে মুখ খূলতে চাইলেন না। সুপারিনটেন্ডেন্ট জানালেন বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিলে সে অনুযয়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে । আনসার কমান্ডার জানালো তারা খারাপ কাজ করছিল আমাদের সদস্যরা তাকে আটক করেছে। তারা প্রথমে জানায় তারা ভিজিটর, রোগীর এটেন্ডেন্স পরে আমরা জানতে পারি তারা বহিরাগত।
তবে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি । ছেলেটিকে আমরা চিনি। মেয়েটিকেও চিনি ,খারাপ মেয়ে। শাহবাগ থানায় যেয়ে জানতে পারলাম আসামীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর ভিকটিমের মেডিকেল চেকআপ করাতে ঢাকা মেডিকেলে।
মুন্ডিওয়ালা পুরুষের প্রশ্ন:
মেয়েটি কেন হাসপাতালে গেল?
মেয়েটি বোধ হয় পতিতা?
মেয়েটি বাড়ি ফিরতে পারেনি, একথা মানতেপারছি না?
লেখকের মন্তব্য:
হতে পারেন তিনি অনেক কিছুই পতিতা কিংবা শিক্ষিকা। রাতও হতে পারে মাঝ। নাও থাকতে পারে হাসপাতালে আসার যুক্তি। কিংবা হতে পারেন ছিটগ্রস্থ কিংবা ভিক্ষুক। যারা ধর্ষণ করলেন তারা কিন্তু সরকারের শৃংখলা বাহীনির সদস্য।
মাসে মাসে এইসব ধর্ষকদেরই আমার কৃষক বাবার ঘামে ভেজা টাকা দিয়ে পুষছে সরকার। হাসপাতালে শৃংখলা রক্ষা করতে এসে এমনই শৃংখলা দেখালেন তারা। রাত যতই(সময় সব সময়ই ইনোসেন্ট) হোক, পুরুষ হই আর নারী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।