বেঁচে থাকাটা একটা শিল্প । বেঁচে থাকতে ইচ্ছে লাগে , ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ থাকতে হয় । হতাশা থেকে আপনি আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন কিন্তু সেই আত্নহত্যা করাটাও একটা শিল্পের পর্যায়ে পরে । আপনি চাইলেই আত্নহত্যা করতে পারবেন না , তার জন্যে অনেক সাহস থাকা চাই । কিভাবে আপনি আত্নহত্যা করতে চান তা আপনার জানা নাও থাকতে পারে , আত্নহত্যা করতেও টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকতে হয় ।
না আমি কাউকে আত্নহত্যা করতে বলছি না জীবনে হতাশ হয়ে । বেঁচে থাকার অনেক উপকরণই আপনার আমার আশে-পাশে আছে , শুধু একটু চেয়ে দেখুন পেয়ে যাবেন । কেউ ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে আত্নহত্যা করতে চায় আবার কেউ অন্যকোন কারণে আত্নহত্যা করতে আগ্রহী হয় । আপনার আত্নহত্যার সম্পন্ন দায়িত্ব নিবে "হেমলক সোসাইটি" । ছবির নামটিই এমন , তবু বলছি জীবন অনেক সুন্দর ।
আপনি হয়ত ভাবছেন আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে দুখী মানুষ কিন্তু না একটু ভালভাবে চেয়ে দেখুন , আপনার চারপাশে অনেক দুখী মানুষ পাবেন। জীবনে কষ্ট থাকবেই , আর কষ্ট আছে বলেইতো আপনি জীবনটাকে উপভোগ করার জন্যে এত পাগল হন ।
মেঘনা একা একটি ফ্ল্যাটে থাকে , বাবা-মার থেকে আলাদাই থাকে । সে একজনকে ভালোবাসে এবং তাকে বিয়েও করবে কিন্তু তার আচার-আচরণ মেঘনাকে হতাশ করে । তাকে যেন ঘিরে ধরে সমস্ত একাকীত্ব ।
আর একাকীত্ব থেকে বাঁচার জন্যে সে সিদ্ধান্ত নেই আত্নহত্যার । কিন্তু আত্নহত্যা করতে চাইলেইতো আর আত্নহত্যা করা যায়না , আত্নহত্যা করতেও অনেক সাহস লাগে । যেকোন একভাবে নিজের আত্নহণনের পথ বেছে নিতে গিয়ে আত্নহত্যা সম্পন্ন নাও হতে পারে , তবে তাহলে কিভাবে সম্ভব তা করা ? আনন্দ একটা প্রতিষ্ঠান করেছে যেখানে কিভাবে মানুষকে আত্নহত্যা করতে হবে শিখানো হবে । কিন্তু কেনইবা তার এই রকম একটা প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছে জাগল । সে কি তাহলে মানুষকে গোপনে প্ররোচিত করছে আত্নহত্যা করতে ?
এদিকে মেঘনার কোন খোঁজখবর নেই দেখে তার বাবা- মা হন্যে খুঁজছে কিন্তু মেঘনাতো অন্যরকম এক জগতে প্রবেশ করেছে ।
সেই জগতে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় কিভাবে তারা আত্নহত্যার পথ বেছে নেবে । আত্নহত্যা বিভিন্নভাবে করা যায় কিন্তু কিভাবে করলে মৃত্যু আসন্ন হবে , কিভাবে করা সহজ তার বিভিন্ন দিক নিয়েই "হেমলক সোসাইটি"তে শেখানো হয় । বিভিন্ন রকম আত্নহত্যার জন্যে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকও আছে । বিভিন্নভাবে দেখানো হচ্ছে আত্নহত্যার করার নমুনাগুলো কিন্তু কোনটি বেছে নেবে মেঘনা । তার জীবনের আনন্দময় সময়গুলো কি আসলেই শেষ হয়ে গেছে ।
সেই প্রতিষ্ঠানে এসেছে মানুষ আত্নহত্যা কিভাবে
করতে হবে তা শিখতে । তাহলে আত্নহত্যার কোন পথ বেছে নেবে মেঘনা । অনেক কিন্তু নিয়েই ক্রমান্বয়ে গল্পের ভেতর থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করান পরিচালক সৃজিত মুখারজি । কিন্তু আত্নহত্যা কোন সমাধান নয় , বেঁচে থাকলে জীবনে অনেক কিছু করা যাবে । সবারই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে আর তা জয় করে বেঁচে থাকাটাই হল আনন্দ ।
আত্নহত্যা কতটা কষ্টদায়ক এবং মরে গেলে পৃথিবীতে কিছুই করা যায়না । মূলত আত্নহত্যার আড়ালেই মানুষের মনে জাগিয়ে তোলা হয় বেঁচে থাকার আশা ,আর এটাই ছবির মূল উদ্দেশ্য ।
ছবিতে ভালো অভিনয় করেছেন প্রায় প্রতিটিঅভিনয়শিল্পী । তবে বিশেষভাবে বলতে হয় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এর কথা । অসাধারণ এক শুরু করেছেন একের পর এক তার কথার মাধ্যমে আর তার অভিনয়তো মনমুগ্ধ হয়ে দেখেছি ।
তার ডায়ালগ ডেলিভারি সব ছিল অসম্ভব সুন্দর । এ ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্যায়নে অভিনয় করেছেন - সব্যসাচী চক্রবর্তী ,পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিকসহ আরও অনেকে । ছবিটির গল্প লেখায় এবং পরিচালনায় ছিলেন পরিচালক সৃজিত মুখারজি । ছবির মিউজিকে ছিলেন অনুপম রায় । ছবিটি প্রযোজনা করেছে শ্রীভেঙ্কেটেশ ফিল্মস ।
ছবির কাহিনীর গমন , তার প্রয়োজনে বিভিন্ন চরিত্রের আগমন তা দারুণভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক সৃজিত মুখারজি । ছবির সেট , মেকআপ , দৃশ্যায়ন আর ছবির কথোপকথন এক কথায় দর্শককে দারুণভাবে নাড়া দিতে সক্ষম । ছবির গানগুলোও ছিল মনে রাখার মত । জীবনের গুরুত্ব এবং জীবনের পরিণাম সব এক ফ্রেমে বন্দী করতে দারুণভাবে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক সৃজিত মুখারজি । এ জন্যে তিনি অবশ্যই এক কথায় প্রশংসার দাবিদার ।
ছবির নাম-"হেমলক সোসাইটি"
বিদ্রঃ ইহার কোন শাখা নেই
মুক্তিসাল-২০১২ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।