আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

”হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল ও গুনাহ করেছেন”- এটা বিশ্বাস করা কুফরী তথা জাহান্নামী হওয়ার কারন

জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক

ভূমিকাঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে (সম্মানিত রসূল আলাইহিস সালাম হিসেবে) মনোনীত করেছেন। ’ আশুরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা প্রসঙ্গেঃ পবিত্র আশূরা শরীফ তথা ১০ ই মুহররম শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে যারা বলে ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল ও গুনাহ করেছেন’ নাউযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য ও আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবেই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ কুফরী আক্বীদা থেকে খালিছভাবে তওবা করা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। অন্যথায় কাফির হয়ে চিরজাহান্নামী হতে হবে। নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ মা’ছূম বা নিষ্পাপঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো- ‘কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনো কোনো ভুল করেননি।

ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। ’ অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কোনো ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ) অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সকলেই হলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনারা প্রত্যেকেই পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক স্থানে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি উনাদের (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের) প্রতি ওহী মুবারক পাঠাতাম।

” (পবিত্র সূরা ইউসূফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১০৯, পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৪৩, পবিত্র আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৭) অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহী মুবারক উনার দ্বারা অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক পরিচালিত। আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ। ” “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সকলেই ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র। ” গন্দম খাওয়া ও প্রকৃত ঘটনাঃ যারা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সম্পর্কে বলে থাকে, উনারা নাকি ভুল করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সঠিক ইতিহাস না জানার কারণেই তারা তা বলে থাকে।

যেমন কেউ কেউ পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে একটি ভুল ও গুনাহ করেছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! মূলত তাদের একথা সঠিক তো নয়ই; বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ। সঠিক ও প্রকৃত ঘটনা হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে আদেশ মুবারক করেছিলেন যে, “আপনারা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হবেন না। ” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৩৫) তখন উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ মুবারক অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে মিথ্যা কসম খেয়ে বলেছিলো যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশতা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশতে বসবাস করতে পারবেন।

কোনো কোনো বর্ণনা মুতাবিক, তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম তিনি সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায় এসেছে, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিলো। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল হতে পারে না। উদাহরণঃ মেছাল বা উদাহরনস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শাহাদাত উনার ঘটনা।

তিনি যে বরকতময় শাহাদতবরণ করেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। উনাকে দ্বীন ইসলাম উনার শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানির কলসি মুবারক-এ অর্থাৎ যে কলসি মুবারক থেকে তিনি পানি মুবারক পান করতেন সে কলসি মুবারক উনার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন (যেনো তার ভেতর কিছু ফেলা না যায়), সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ উনার অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি মুবারক থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

যা উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিলো। (সিররুশ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমাস সালাম) এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে উনার বরকতময় শাহাদাত উনাকে কি বলতে হবে? ১. তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলতে হবে অথবা ২. তিনি ভুল করার কারণে ইন্তিকাল করেছেন, তা বলতে হবে? নাঊযুবিল্লাহ! মূলত, উপরোক্ত দুটির কোনোটিই বলা যাবে না। যদি কেউ কোনো একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার কারণে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ঘটনাও। যা উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিলো।

যদি তাই হয়ে থাকে তবে তাতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ভুল, খতা, লগজেশ ও গুনাহ হবে কেন? মূলত তিনি এগুলো থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। পরিশিষ্টঃ মূলকথা হলো- পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে যারা বলে ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল ও গুনাহ করেছেন’ নাউযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য ও আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণভাবেই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এরূপ কুফরী আক্বীদা থেকে খালিছভাবে তওবা করা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। অন্যথায় কাফির হয়ে চিরজাহান্নামী হতে হবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.