ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা।
এক ছিলো ম্যাজিশিয়ান। অসাধারণ সব ম্যাজিক দেখিয়ে লোকটি মানুষকে তাক লাগিয়ে দিতেন। এই লোকটি আবার সার্কাশে বাঘ, সিংহ ,হাতির সাথে নানারকম খেলাও দেখাতেন। ইত্যাদি করে লোকটির টানাপোড়নের সংসার কোনরকমে চলতো।
এই ম্যাজিশিয়ানের ছিলো দশ বছরের একটি মেয়ে।
খেলা দেখানোর পর বাপ-মেয়ে টাকা গুনে একটা বাক্সে রাখতেন। একদিন খেলা দেখানোর পর রাতের বেলা বাপ-মেয়ে আর তাদের সাথের আরেকটি লোক নাম যতিন কাকু চা দোকানে বসে চা পান করছে। চা পান শেষে যতিন কাকু এক রুপি পকেট থেকে বের করে বিল পরিশোধ করলো।
মেয়েটি সাথে সাথে বললো, বাবা যতিন কাকু যে রুপিটি দিয়ে বিল দিলেন।
সেটাতো তোমার টাকা। টাকা গুনে দেখো। নিশ্চয়ই বাক্স থেকে তোমার টাকা খোয়া গেছে।
বাপ, টাকার বাক্স অথবা থলে খুলে দেখেন। অনেকগুলো টাকা নেই।
ম্যাজিশিয়ান বাপের টাকা খুয়া গেছে এ নিয়ে কোনো দুঃচিন্তা নেই। তার চিন্তা এ মেয়ে এক রুপির বিল দেখে বুঝলো কিভাবে যে টাকা খুয়া গেছে।
বাপ মেয়েকে বললো- তুমি বুঝলা কীভাবে যে আমার টাকা খুয়া গেছে।
মেয়ে বলে- যতিন কাকা যে রুপি দিয়ে বিল পরিশোধ করলেন সে নোটের ওপর যে নাম্বার গুলো ০৮গ৫ল০ন৮৯ আছে। সেই নোটটাইতো কালকে আমি তোমার টাকার বাক্সে গুনে রেখেছিলাম।
এর কিছুদিন পর মেয়েটি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। একদিন স্কুলের অফিস ঘরের পাশ দিয়ে আসার সময় মেয়েটি শুনে, হেডস্যার বড় বড় করে কিছু নাম্বার বলছেন-আর পিয়ন তা হিসাবের খাতায় টুকে রাখছে। হেডস্যার এবার পিয়নকে বললেন-এবার সব যোগ করো। পিয়ন যোগ করে বলে-মোট খরচ হয়েছে ২২,৩২৮ টাকা। মেয়েটি বলে, জ্বিনা।
হিসাবে ভুল আছে। মোট খরচ হয়েছে ২২,২২৮ টাকা। পিয়ন আবার যোগ করে দেখে, মেয়েটির কথাটিই ঠিক।
আজকে এই মেয়েটিরই গল্প শুনাবো। কী অসাধারণ প্রতিভাবান এই মেয়ে।
এরকম অস্বাভাবিক মেধার অধিকারী শিশুদের ইংরেজীতে বলা হয়-
"A child prodigy"
এই মেয়েটি শুধু নাম্বারই মনে রাখতে পারতেন তা না। আরেকটি গল্প শুনেন। ইতিহাসের স্যার ক্লাসে গল্প করছিলেন-তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫সালের ৮ই জুলাই সোমবার বংগভঙগের ঘোষণা দেন।
মেয়েটি কয়েক সেকেন্ড পরই দাঁড়িয়ে বলে, স্যার ১৯০৫ সালের ৮ই জুলাইতো শনিবার ছিলো। তখন মেয়েটির বয়স মাত্র ১১ ।
আর ঘটনাটি হলো ১৯৪০ সালে।
এই মহিয়সী নারী'র জন্মদিন ছিলো গতকাল। গুগল ডুডলে উনাকে বিশেষভাবে সম্মান প্রদর্শণ করা হয়, জানানো হয় শ্রদ্ধা। ১৯৮২ সালে গীনিজ বুক ওফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উনার নাম বিস্ময়কর প্রতিভাবান মহিলা হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
কম্পিউটার কর্তৃক রেন্ডমলি নীচের নাম্বার দুটি সিলেক্ট করে উনাকে গুন করতে বলা হয়।
নীচে ১৩ ডিজিটের নাম্বার দুটি দেখেন।
7,686,369,774,870 × 2,465,099,745,779
উনি মাত্র ২৮সেকেন্ড সময় নিয়ে জবাব দেন-
18,947,668,177,995,426,462,773,730 (উইকিপিডিয়া থেকে-নাম্বার গুলো কপি করা হয়েছে)
১৯৯৬ সালে হংকং সফরে গেলে World's Human Computer - শকুন্তলা দেবী'র সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়। আগ্রহী পাঠক নীচের ক্লিপটি দেখতে পারেন।
শুধুযে নাম্বার নিয়েই তিনি পৃথিবীকে চমকে দিয়েছেন তাই নয়। লিখেছেন বেশ কিছু অসাধারণ বই।
এবইগুলোর মধ্যে আছে ফিকশান, ননফিকশান উপন্যাস, অংকের উপর নানারকমের বই। লিখেছেন পাজল আর এ্যস্ট্রলজি নিয়ে। উইকিপিডিয়া থেকে তাঁর লিখিত বইয়ের নীচের তালিকাটি নেয়া হলো-
Astrology for You,
Book of Number
Figuring: The Joy of Numbers
In the Wonderland of Numbers
Mathability: Awaken the Math Genius in Your Child
More Puzzles to Puzzle You
Perfect Murder
Puzzles to Puzzle You
Super Memory: It Can Be Yours
The World of Homosexuals
একটা পারিবারিক বৈঠকে গতকাল উনাকে নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো। চায়নীজরা কেন যেন ভারতকে দুচোখে দেখতে পারেনা। আমার চায়নীজ বন্ধু লী এন চুং মজা করে বলছিলো- এতোদিন দেখতাম ভারতীয়রা না খেয়ে অনেকদিন উপোস থেকে রেকর্ড করে ।
হাতের নখ, পায়ের নখ লম্বা করে করে এবেড়ো থেবেড়ো বানিয়ে রেকর্ড করে-এবার দেখলাম একটা ভালো কাজে এই মহিলা রেকর্ড করলেন।
আর আমি বললাম, তোমাদেরও একটা একেবারে গড গিফটেড রেকর্ড আছে। ও বললো কি সেটা?
আমি বললাম- তোমাদের দেখতে সবাই একই রকম। আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে যাই,- কে তুমি, কে তোমার ভাই, আর কে তোমার বাপ।
লাখো মানুষ দেখতে একই রকম-এটাওতো একটা অনন্য রেকর্ড।
মেন্টাল ক্যলকুলেটর অথবা হিউম্যান কম্পিউটার হিসাবে খ্যাত এই ম্যাজিক মহিলা শ্রদ্ধেয় শকুন্তলা দেবি ১৯২৯ সালের ৪ নভেম্বর বাংগলোরে জন্ম গ্রহণ করেন, আর ২০১৩ সালের ২১ শে এপ্রিল ৮৩ বছর বয়সে কর্ণাটকে মৃত্যবরণ করেন। এই মহিয়সী নারীর জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
নীচে উনার একটা ছবি দিলাম। গুগল ইমেজ থেকে নেয়া।
আরো বিস্তারীত জানতে চাইলে গুগল আর উইকি ই দেখতে পারেন।
আর উনার জীবন নিয়ে যেসব কথা সহজেই উইকি আর গুগলে খুঁজলেই পাওয়া যায় তা সংযোজন করা প্রয়োজন মনে করলাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।